× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

ভাষা সংগ্রামীদের কথা

ভাষা আন্দোলনের একনিষ্ঠ সৈনিক চেমন আরা

সাজেদা হক

০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮:১১ এএম । আপডেটঃ ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৬:১৮ এএম

চেমন আরা ১৯৩৫ সালের ১ জুলাই চট্টগ্রামের চান্দগাঁও উপজেলার মৌলবী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা এএসএম মোফাখখার কলকাতা হাইকোর্টে মুসলমান এডভোকেটদের মধ্যে একজন ও মুসলিম লীগের প্রথম সারির নেতা ছিলেন। চেমন আরা ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় ইডেন কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। ব্যক্তি জীবনে তিনি কথাশিল্পী ও ভাষাসৈনিক শাহেদ আলীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তার অনুপ্রেরণায় বিভিন্ন আন্দোলনে যুক্ত হন।

১৯৫১ সালে ঢাকার কামরুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা এবং ১৯৫৩ সালে ইডেন মহিলা কলেজ থেকে উ”চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন। পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় ১৯৫৬ সালে বিএ অনার্স ও ১৯৫৭ সালে এমএ পাশ করেন।

৩৬ বছরের কর্মজীবনে একাধিক প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে শিক্ষার আলো বিস্তার করে গেছেন। ১৯৫৯ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ গার্লস হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষিকা হিসাবে যোগ দেন। সে বছরই বাদশা মিয়া চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রামের প্রথম মহিলা কলেজে বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা শুরু করেন। ১৯৫৯-৬১ সালে চেমন আরা আন্দরকিল্লাস্থ মুসলিম এডুকেশন সোসাইটির স্কুলে প্রাতঃকালীন শিফ্টে সহকারী প্রধান শিক্ষিকা হিসাবে কাজ করেন। ১৯৬২ সালে ইডেন কলেজে বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে কিছুদিন দায়িত্ব পালন শেষে ১৯৬৭-৬৮ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগে যোগদান করেন। ১৯৭০ সালে পুনরায় ইডেন কলেজে আসেন এবং অধ্যাপনার পাশাপাশি নতুন হোস্টেলের তত্ত্বাবধায়ক হিসাবেও কাজ করেন (১৯৭০-১৯৮২)। তিনি ৮২-৮৬ পর্যন্ত চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন এবং ১৯৯৩ সালে ঢাকা তিতুমীর কলেজে থাকাবস্থায় শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর অধ্যাপক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে গঠিত ‘পাকিস্তান তমদ্দুন মজলিস’ নামে সাংস্কৃতিক সংগঠনে ১৯৪৮ সালে যোগ দেন। এ সংগঠনের নেতৃত্বে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা শহীদ বরকতের রক্তাক্ত শার্ট নিয়ে যে মিছিল বের করে তাতে তিনিও সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। পরবর্তীতে সাহিত্যচর্চার সঙ্গে নিজেকে জড়িত করেছেন চেমন আরা।

১৯৪৭ সালে অধ্যাপিকা চেমন আরা সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী থাকা অবস্থায় ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটলে তিনি তাতে অংশগ্রহণ করেন। দশম শ্রেণীতে পড়াকালে ১৯৫০ সালে ভাষা আন্দোলনের অন্যতম তাত্ত্বিক সংগঠক ও সাহিত্যিক অধ্যাপক শাহেদ আলীর সাথে চেমন আরা বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৫৪-৫৫ সালে গঠিত ‘ছাত্রী পরিষদ’-এর সভাপতি নিযুক্ত হন।

১৯৫৪ সালে ডানপন্থী ছাত্রীদের সমন্বয়ে ফরমান উল্লাহ খানের তত্ত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ছাত্রী পরিষদ’ গঠন করেন। ১৯৬৩ সালে শিশু কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক উৎকর্ষ সাধন এবং এদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে ‘সবুজ সেনা’ গঠন করেন এবং ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এ সংগঠনের দায়িত্ব পালন করেন। চট্টগ্রাম মহিলা কলেজে ‘ইসলামী পাঠচক্র‘ নামে মহিলাদের জন্য একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসরে যাওয়ার পর মুসলিম নারীদের নিয়ে ‘নারী’ অধিকার আন্দোলন সনামে একটি সংগঠন গঠিত হলে তিনি সেখানে সভানেত্রী নির্বাচিত হন। সূচনালগ্ন থেকে তিনি এ সংগঠনের চেয়ারপার্সন। ১৯৮০ সালে তিনি ইডেন কলেজ ছাত্রী সংসদের সংগে শিক্ষা প্রতিনিধি হয়ে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিংগাপুর এবং ইউরোপের সুইডেন, নরওয়ে, বেলজিয়াম, হল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ সফর করেন। ১৯৮৭ সালে তার স্বামী কথাশিল্পী শাহেদ আলী, ড. কাজী দীন মুহাম্মদ, ড. এম শমশের আলী, জাতীয় অধ্যাপক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ-এর আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় ‘তামরিন’ স্কুল প্রতিষ্ঠিত হলে চেমন আরা এই স্কুলের পরিচালনার ভার নেন।

১৯৪৮ সালে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী থাকাকালীন তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত একাধিক সাপ্তাহিক ও দৈনিকে লেখালেখি শুরু করেন। তার প্রথম লেখা সাপ্তাহিক সৈনিকে প্রকাশিত হয়। পিতার জীবনীগ্রন্থও তিনি সম্পাদনা ও প্রকাশ করেন। তার লেখা একটি কিশোর উপন্যাস ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অগ্রপথিক পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রকাশের সময় দেশের বরেণ্য সাহিত্যিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। তার কিছু ভ্রমণকাহিনীও দৈনিক ইনকিলাবের সাহিত্য সাময়িকীতে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।

প্রকাশিত গ্রন্থ- হৃদয় নামের সরোবরে (গল্পগ্রন্থ), সত্তরের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে, তানিয়ার যতো কথা (কিশোর উপন্যাস), নিরুদ্দেশের অভিযাত্রী (ভ্রমণ কাহিনী), চন্দগাঁও মৌলবী বাড়ির ইতিকথা (সম্পাদিত), সিলমির প্রথম স্কুল, বাবুর ফুলের বাগান, এম এম মোফাখখার (সম্পাদিত), ইমনের ফুলের বাগান (ছোটদের জন্য লেখা) ইত্যাদি।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০১৮ সালে দৈনিক ভোরের কাগজের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা, ৯ জানুয়ারি ২০১৫ সালে মাসিক চাটগাঁ ডাইজেস্ট-এর ১৯তম বর্ষপূর্তিতে প্রবীণ পেশাজীবী নারী সম্মাননা, ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য ২০০৪ সালে তমদ্দুন মজলিস ভাষাসৈনিক পদক, ২০০৬ সালে জালালাবাদ ফাউন্ডেশন নারী নেতৃত্বের জন্য হাছান রাজা স্মৃতি পদকে ভূষিত হন।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.