অতিপ্রবল ঘুর্ণিঝড় ‘মোখা’ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত হয়ে এসে তাণ্ডব চালিয়ে চলে গেছে। ‘মোখা’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে গতকাল রোববার সন্ধ্যা ৬টায় উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করে ও দুর্বল হয়ে মিয়ানমারে স্থল গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। সন্ধ্যার পর থেকেই মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র ত্যাগ করে গন্তব্য ফিরতে শুরু করেছে।
গতকাল রোববার আঘাত হানা এই ঘূর্ণিঝড়ে কক্সবাজারের টেকনাফ এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপেই বেশি ক্ষয়ক্ষতির খবর এসেছে সোমবার সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি জরিফে। ১২ হাজারের মতো ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার হিসাব প্রশাসনের কাছ থেকে মিললেও কারও নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উপকূলে যে লাখ লাখ মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছিলেন, ওই দিন বিকালে মধ্যে তারা ঘরে ফিরে গেছেন। যারা আশ্রয় কেন্দ্রে ছিলেন তারা আজ সকালে ঘরে ফিরছেন।
রোববার বিকালের তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারে সম্পূর্ণ ও আংশিক মিলিয়ে ১২ সহস্রাধিক ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘূর্ণিঝড় মোফার আঘাতে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা সোয়া ৩ লাখ মানুষ।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং জেলা ঘূর্ণিঝড় নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের প্রধান বিভীষণ কান্তি দাশ সাংবাদিকদের বলেন, জেলার ৫৭টি ইউনিয়ন ও তিনটি পৌরসভায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ১০ হাজার ৪৬৯টি বাড়ি আংশিক এবং ২০২২টি ঝুপড়ি ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে।
ঝড়ের প্রভাবে উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরে কয়েক হাজার ঘর ও স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে ত্রাণ, শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বরাত দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি, সেন্ট মার্টিনে ১২০০ মতো ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে।’
জেলাজুড়ে হতাহতের কোনো খবর নেই বলে জানান জেলা প্রশাসক। তবে সেন্ট মার্টিনে গা্ছ চাপা পড়ে একজনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুল ইসলাম সন্ধ্যায় বলেন, ‘প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গাছপালা উপড়ে গেছে, ঘরবাড়ি ভেঙে মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’ টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপে ভেঙে পড়েছে বহু গাছ।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের দুর্যোগ সাড়াদান ও সমন্বয় কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী কক্সবাজার সদর, টেকনাফ, উখিয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, রামু, পেকুয়া, চকরিয়া উপজেলার দুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৬২০ জন। এসব এলাকার ২০২২টি ঝুপড়ি ঘর সম্পূর্ণ এবং ১০ হাজার ৪৬৯টি ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে।
এসব এলাকার ২ লাখ ৩৭ হাজার ২৪১ জন সাময়িকভাবে আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়েছিলেন জানিয়ে মন্ত্রণালয় বলছে, সেখানে শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হয়।