মহান একুশে ফেব্রুয়ারি এলেই কদর বাড়ে ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভূঞা ইউনিয়নে ভাষা শহিদের স্বরণে স্থাপিত শহিদ সালাম স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগারের। শুরু হয় ধোয়া-মোছার কাজ। শ্রদ্ধার ফুলে ভরে ওঠে আঙিনা। ভাষা শহিদদের স্মরণে আয়োজন করা হয় নানা অনুষ্ঠান। এ দিন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়। আর দিনের অনুষ্ঠান শেষেই আবার নেমে আসে নীরবতা। শহিদের নিজ গ্রাম সালামনগরে প্রতিবছরই দেখা যায় এমন চিত্র। অথচ গ্রন্থাগারটি বইপ্রেমী, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ সাধারণ মানুষের পদচারণায় সব সময় সরব থাকার কথা।
সংশ্লষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালে ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে শহিদ সালামের স্মৃতি রক্ষার্থে তাঁর নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হয় সালাম জাদুঘর ও স্মৃতি গ্রন্থাগার। পরবর্তীতে ওই গ্রন্থাগারের দেখভালের জন্য লাইব্রেরিয়ান হিসেবে ওই গ্রামের বাসিন্দা লুৎফুর রহমান বাবলু ও শেখ ফরিদকে কেয়ারটেকারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। লাইব্রেরিয়ান লুৎফুর রহমান বাবুল জানান, পাঠাগারের পাঠক খুবই কম। মাঝেমধ্যে দু-একজন আসেন।
এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, 'ভাষার মাস এলে সালামের কদর বাড়ে। সরকারি-বেসরকারি নানামুখী লোকজন কর্মসূচি পালন করতে আসে। সারাবছর জাদুঘর ও গ্রন্থাগারের অবস্থা দেখতে কেউ আসে না। খবরও নেয় না।' সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রন্থাগারের দেয়ালে শহীদ সালামের একটি ছবি সাঁটানো রয়েছে। এর বাইরে তার কোনো স্মৃতি জাদুঘরে নেই। প্রতিষ্ঠাকালীন কিছু বই ছাড়া আর কোনো বই ১৪ বছরে মেলেনি গ্রন্থাগারে। মাত্র দুটি দৈনিক পত্রিকা রাখা হয়। তাও নিয়মিত নয়।
দাগনভূঞা উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন জানান, জাদুঘরে দেখার মতো শহিদ সালামের স্মৃতিচিহ্ন নেই। সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। দেখার মতোও কিছু নেই। ফলে দর্শনার্থীদের আগ্রহ সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি। গ্রন্থাগারে পাঠকের চাহিদা মতো সাম্প্রতিক সময়ের কোনো বইও নেই।
এতে প্রায় সারাবছর অবহেলায় পড়ে থাকে শহিদ সালাম স্মৃতির এই স্থানটি। উপজেলা চেয়ারম্যান আরও জানান, জাদুঘর ও পাঠাগারকে কেন্দ্র করে একটি পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে দাগনভূঞা পৌরসভার। অপরদিকে আক্ষেপ করে ভাষা শহীদ সালামের ভাই আবদুল করিম বলেন, মায়ের ভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বিশ্ব দরবারে ইতিহাস গড়েছে বাঙালি জাতি।
এ অর্জন বাঙালির শতাব্দীকালের অর্জন হলেও যারা লড়াইয়ের নেতৃত্বে ছিলেন তাদের ব্যাপারে অবহেলা যেন দিনে দিনে বাড়ছে। দীর্ঘদিন ঢাকার আজিমপুর গোরস্থানে পর ভাইয়ের (সালাম) কবরটি শনাক্ত করা গেলেও সেখানে সীমানা প্রাচীর দেয়া যাচ্ছে না। কে বা কারা সেটা বারবার ভেঙে ফেলছে।