× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

লিওনেল মেসি: এক ক্ষুদে জাদুকরের গল্প

মশিউর অর্ণব

২৪ নভেম্বর ২০২২, ০৫:৪০ এএম

পৃথিবীজুড়ে চলছে বিশ্বকাপ উন্মাদনা। বাংলাদেশে এই উন্মাদনার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল থাকলেও তার পাশাপাশি পর্তুগাল, জার্মানি, স্পেন, ফ্রান্সসহ আরো কয়েকটি দেশের ফুটবল ভক্তও বাংলাদেশে বিদ্যমান। কাতার বিশ্বকাপের এই মৌসুমে সংবাদ সারাবেলা’র পাঠকদের জন্য থাকছে বিশেষ আয়োজন। চলমান বিশ্বকাপ ফুটবলের মাসজুড়েই থাকছে প্রিয় দলের প্রিয় তারকার পরিচিতি, সাবেক কিংবদন্তিদের স্মৃতিচারণ, বর্ণাঢ্য ও বিচিত্র ফুটবল ক্যারিয়ারসহ ফুটবল নিয়ে ব্যতিক্রমী নানা খবর। 

আজকের পর্বে থাকছে ‘ফুটবল জাদুকর’ লিওনেল মেসির শৈশব থেকে শুরু করে বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার নিয়ে যাবতীয় বিস্তারিত-

নামঃ লিওনেল আন্দ্রেস মেসি

জন্মঃ ২৪জুন, ১৯৮৭

জন্মস্থানঃ রোসারিও, আর্জেন্টিনা

উচ্চতাঃ ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি 

‘ভীনগ্রহের ফুটবলার’ হিসেবে খ্যাত ফুটবলার লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনার রোজারিওতে স্টিল কারখানায় কর্মরত বাবা হোর্হে হোরাসিও মেসি এবং পার্ট-টাইম ক্লিনার মা সেলিয়া মারিয়া কুচ্চিত্তিনি এর ঘরে ১৯৮৭ সালের ২৪শে জুন জন্মগ্রহন করেন। তার পৈতৃক পরিবারের আদি বাসস্থান ছিল ইতালির আকোনা শহরে। তার পূর্বপুরুষদের একজন অ্যাঞ্জেলো মেসি ১৮৮৩ সালে সেখান থেকে আর্জেন্টিনায় চলে আসেন। মেসির বড় দুই ভাই এবং এক ছোট বোন রয়েছেন। 

১৯৯৫ সালে মেসি রোজারিও ভিত্তিক ক্লাব নিওয়েল’স ওল্ড বয়েজে যোগ দেন। একই সময় মেসি একটি স্থানীয় যুব শক্তিক্লাবের সদস্য হয়ে পড়েছিল যার ফলে এই ক্লাবটি পরবর্তী চার বছরে একটি মাত্র খেলায় পরাজিত হয়েছিল এবং স্থানীয়ভাবে মেসি “দ্য মেশিন অফ ‘৮৭” নামে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। তাকে “দ্য মেশিন অফ ‘৮৭”  নামে ডাকার কারণটাও মজার। কারণ সেই সময় পরিচিত হয়ে ওঠা সবাইকেই তাদের জন্মসাল (১৯৮৭) সহ নাম দেয়া হত।

গ্রোথ হরমোনের সমস্যায় মেসির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত: 

মেসির ছোট বেলা থেকেই ধ্যানজ্ঞান ছিল ফুটবল যার যার ফলে খুব সহজেই স্থানীয়ভাবে পরিচিতি পায় কিন্তু মাত্র ১১ বছর বয়সে মেসির গ্রোথ হরমোনের সমস্যা ধরা পড়ে। স্থানীয় ক্লাব রিভার প্লেট মেসির প্রতি তাদের আগ্রহ দেখালেও সেসময় তারা মেসির চিকিৎসার খরচ বহন করা তাদের পক্ষে সম্ভব ছিলনা। যার পরিমাণ ছিল প্রতি মাসে ৯০০ মার্কিন ডলার। যার ফলে মেসির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। যখন মেসির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত ঠিক ওই সময় বার্সেলোনার তৎকালীন ক্রীড়া পরিচালক কার্লেস রেক্সাচ মেসির পাশে এসে দাড়ায় কারণ মেসির প্রতিভা সম্পর্কে জানতে পেরে তিনি মেসির খেলা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। মেসির সাথে চুক্তির সময় হাতের কাছে কোন কাগজ না পেয়ে একটি ন্যাপকিন পেপারে তিনি মেসির বাবার সাথে চুক্তি সাক্ষর করেন। বার্সেলোনা মেসির চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার বহন করতে রাজী হয়। এরপর মেসি এবং তার বাবা বার্সেলোনায় পাড়ি জমান। সেখানে মেসি বার্সেলোনার যুব একাডেমী লা মাসিয়াতে যোগ দিয়ে নতুন উদ্দীপনায় আবার তার খেলোয়াড় জীবন শুরু করে।

বার্সেলোনায় মেসির যাত্রা: 

মেসি ২০০০ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত বার্সেলোনার যুব একাডেমীর ইনফান্তিল বি, কাদেতে বি এবং কাদেতে এ দলে খেলেছেন। কাদেতে এ দলে খেলার সময় তিনি ৩০ খেলায় ৩৭ গোল করেন। ২০০৩ সালে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে তাকে ক্লাব থেকে প্রায় ছেড়েই দেওয়া হয়েছিল কিন্তু যুব দলের প্রশিক্ষণ কর্মীদের জোড়াজুড়িতে ক্লাবের ব্যবস্থাপনা পরিষদ তাকে দলে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০০৩–০৪ মৌসুমে মেসি পাঁচটি আলাদা দলে খেলেন, যা একটি রেকর্ড। তিনি হুভেনিল বি দলে খেলে ১টি গোল করেন এবং হুভেনিল এ দলে খেলার সুযোগ লাভ করেন। সেখানে তিনি ১৪ খেলায় ২১টি গোল করেন। ২০০৩ সালের ২৯ নভেম্বর, বার্সেলোনা সি (তের্সেরা দিভিসিওন) দলে এবং ২০০৪ সালের ৬ মার্চ, বার্সেলোনা বি (সেহুন্দা দিভিসিওন) দলে তার অভিষেক হয়। ঐ মৌসুমে তিনি উভয় দলের হয়েই খেলেন এবং সি দলের হয়ে তার গোল সংখ্যা ছিল ১০ খেলায় ৫ এবং বি দলের হয়ে ৫ খেলায় শূন্য। এই দুই দলে অভিষেকের পূর্বে মেসির দাপ্তরিক অভিষেক হয়েছিল ২০০৩ সালের ১৬ নভেম্বর, পোর্তোর বিপক্ষে একটি প্রীতি খেলায় (১৬ বছর এবং ১৪৫ দিন বয়সে)।

‘এল ক্ল্যাসিকো’তে মেসির হ্যাট্রিক: 

মেসি ২০০৬–০৭ মৌসুমে নিজেকে দলের নিয়মিত খেলোয়াড় হিসেবে স্থাপন করে নেন এবং ২৬ খেলায় ১৪ গোল করেন।  মেসি ১০ মার্চ এল ক্ল্যাসিকোতে হ্যাট্রিক করেন যার ফলে খেলাটি ৩–৩ গোল ড্র হয়। বার্সেলোনা খেলায় তিনবার পিছিয়ে পরলেও, প্রত্যেকবারই মেসি দলকে সমতায় ফেরান, যার মধ্যে একটি গোল তিনি দ্বিতীয়ার্ধের অতিরিক্ত সময়ে করেছিলেন। এর আগে এল ক্ল্যাসিকোতে সর্বশেষ হ্যাট্রিক করেছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের ইভান জামোরানো, ১৯৯৪–৯৫ মৌসুমে। অবশেষে ক্ল্যাসিকোতে হ্যাট্রিকের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটান মেসি এবং একই সাথে তিনি এল ক্ল্যাসিকোতে গোল করা সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার এর খেতাব অর্জন করেন। মৌসুমের শেষের দিকে মেসি আগের চেয়ে আরও বেশি গোল করতে শুরু করেন। লীগে তার করা ১৪টি গোলের ১১টিই এসেছিল শেষ ১৩টি খেলা থেকে।

নতুন ‘ম্যারাডোনা’ রূপে মেসির আত্মপ্রকাশ: 

মেসি ২০০৬–০৭ মৌসুমেই কিংবদন্তী দিয়েগো ম্যারাডোনার বিখ্যাত কিছু গোলের পুনরাবৃত্তি ঘটান এবং নিজেকে ‘নতুন ম্যারাডোনা’ রূপে প্রকাশ করেন। ২০০৭ সালের ১৮ এপ্রিলে কোপা দেল রে‘র সেমিফাইনালে খেতাফের বিপক্ষে মেসি জোড়া গোল করেন। যার মধ্যে একটি গোল ছিল ম্যারাডোনার ১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করা দ্বিতীয় গোলটির মত, যে গোলটি শতাব্দীর সেরা গোল হিসেবে খ্যাত। বিশ্বের ক্রীড়া মাধ্যম মেসিকে ম্যারাডোনার সাথে তুলনা করতে শুরু করে এবং স্পেনীয় সংবাদ মাধ্যম তাকে ‘মেসিডোনা’ উপাধিতে ভূষিত করে। ম্যারাডোনার মত মেসিও প্রায় ৬২ মিটার দূরত্ব পাড়ি দিয়ে গোলরক্ষকসহ ছয় জনকে কাটিয়ে একই স্থান থেকে গোল করেছিলেন এবং কর্ণার ফ্লাগের দিকে ছুটে গিয়েছিলেন। ২১ বছর আগে মেক্সিকো বিশ্বকাপে যেমনটি করেছিলেন ম্যারাডোনা। ইস্পানিওলের বিপক্ষেও মেসি একটি গোল করেছিলেন যা ছিল ম্যারাডোনার ‘হ্যান্ড অব গড’ খ্যাত গোলটির মত। যেটি ১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ম্যারাডোনার করা প্রথম গোল ছিল।

বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়: 

২০০৭ সালে স্পেনীয় সংবাদপত্র মার্কা তাদের অনলাইন সংস্করনে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়ের জন্য ভোটের আয়োজন করে যেখানে মেসি ৭৭ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রথম হন। বার্সেলোনা ভিত্তিক সংবাদপত্র এল মুন্দো দেপোর্তিভো এবং দেইলি স্পোর্ত সে বছর  ‘ব্যালন ডি’অর’ মেসিকে দেওয়ার জন্য দাবি করে। ফ্রাঞ্চেসকো তোত্তি’র মত ফুটবল ব্যক্তিত্ব মেসিকে বর্তমান সময়ের সেরা ফুটবলার হিসেবে ব্যক্ত করেন। ২০০৭ সালের ‘ব্যালন ডি’অর’ পুরষ্কারে মেসি তৃতীয় হন এবং ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরষ্কারে তিনি দ্বিতীয় হন।


Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.