× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টিতে কাজ করছে বাংলাদেশ

হীরেন পণ্ডিত

৩০ মে ২০২২, ০৭:৩২ এএম

প্রতীকী ছবি

সরকার দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন থেকেই উদ্যোগী না হলে দেশ পিছিয়ে যাবে। ‘বিশ্বে এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা সামনে আসছে। এই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা মাথায় রেখেই আমাদের দক্ষ কর্মজ্ঞান সম্পন্ন লোকবল সৃষ্টি করতে হবে। সেটার জন্য এখন থেকেই উদ্যোগ না নিলে আমরা পিছিয়ে যাব। সুতরাং আমরা পিছিয়ে যেতে চাই না। এ জন্য প্রশিক্ষণটা সঙ্গে সঙ্গে দরকার। কারণ আমরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চাই। বিশ্ব প্রযুক্তিগতভাবে যতটুকু এগোবে আমরা তার সঙ্গে তাল মিলিয়েই চলব।’ 

উল্লেখ্য, সমাজের কম-বেশি সবাই ফ্রিল্যান্সিং বিষয়টি জানলেও ফ্রিল্যান্সার এতদিন তাদের পরিচয় নিয়ে সমস্যায় ছিলেন। ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত পরিচিত কার্ড বা ফ্রি ল্যান্সিং আইডির মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান হতে চলেছে। কর্মসংস্থান, উপার্জন বা দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে এই কার্ডটি ব্যবহার করা যাবে। যা ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ব্যাংকিং বা ভিসার আবেদন, বাসা বা অফিস ভাড়া এমনকি শিশুদের স্কুল ভর্তি করার মতো বিষয়গুলোতে সহজ করে দেবে। সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দেশের প্রায় সাড়ে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সার আইটি কর্মরত এখানে রেজিস্ট্রেশন করে পরিচয়পত্র গ্রহণের সুযোগ পাবে। 

দেশের তরুণ প্রজন্মের ওপর আস্থা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন,‘আমি জানি আমাদের ছেলেমেয়েরা অনেক মেধাবী। অল্পতেই তারা শিখতে পারে। সরকার হিসেবেই আমাদের কাজ হচ্ছে সেই সুযোগটা সৃষ্টি করে দেওয়া। সেটাই সরকার করে দিচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, সারাদেশে ৩৯টি হাইটেক বা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। এগুলোর নির্মাণ শেষ হলে প্রায় ৩ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। যার মধ্যে যুব সমাজই সবচেয়ে বেশি কাজ পাবে। দেশ এবং বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আসবে এবং দক্ষ কর্মী বাহিনীর সৃষ্টি হবে। তার সরকার চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রতিযোগিতা মোকাবিলায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩১টি বিশেষায়িত ল্যাব স্থাপনসহ দক্ষ কর্মী বাহিনী সৃষ্টিতে নানা প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন’।

আমরা দেশের মানুষকে কারিগরি ও প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে দক্ষ করে তুলতে চাই। যাতে তারা পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে সমান তালে চলতে পারে। দক্ষ জনশক্তি আমাদের দেশের উন্নয়ন খাতে অবদান রাখতে পারবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী কাজ করছেন। আমরা বিদেশের শ্রমবাজারে দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে হবে। গত ১২ বছরে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ৫০০ পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সরকারি পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের ধারণ ক্ষমতা ২৫ হাজার থেকে ১ লাখে উন্নীত হয়েছে। ২৬শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ তলা ভবন, ওমেন ডরমেটরি, ওয়ার্কশপ ও ল্যাব নির্মাণের মাধ্যমে ৪৯টি টেকনিকের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রত্যেক উপজেলায় কারিগরি স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ১শ’ উপজেলায় কারিগরি স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এতে ৬ হাজার ৪০০ শিক্ষক ও কর্মচারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রজন্মের পর প্রজন্মের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে দূরদর্শী অনেক উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আমাদের পরিবেশ, প্রতিবেশ, চাষযোগ্য জমি ও জলাধার রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। অপরিকল্পিত শিল্পায়নের জন্য যাতে কোনো আবাদি জমি নষ্ট না হয়, সেজন্য আমরা একশটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিপুলসংখ্যক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।


দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে প্রয়োজন শিক্ষা। এক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এ কারণেই বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকতে উচ্চশিক্ষাকে নতুন করে সাজানোর কথা বলা হয়েছে। দক্ষ মানবসম্পদের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবনপূর্বক যথাযথভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন চতুর্থ শিল্প বিপ্লব উপযোগী জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষা ব্যবস্থা নতুন করে সাজানো প্রয়োজন এবং তা শুরু করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ক্রমাগত বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। আমাদের যোগাযোগের মাধ্যম চারটি রফতানি, আমদানি, বিনিয়োগ ও সাময়িক অভিবাসন। বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ রফতানির চেয়ে অনেক বেশি। তাই দেশে বিনিয়োগ (বিদেশী) বৃদ্ধি ও জনশক্তি রফতানি অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার প্রধান উপায়। বিদেশী বিনিয়োগ দেশে বাড়বে তখনই, যখন দেশে থাকবে পর্যাপ্ত উপকরণ, যেমন খনি বা জমি, পুঁজি কিংবা জনশক্তি। অদক্ষ জনশক্তি বিদেশী বিনিয়োগ ততটা উৎসাহিত করে না। এক্ষেত্রে শুধু শ্রমনির্ভর খাতে বিনিয়োগ হবে। বাংলাদেশ কেবল একটি পণ্যই রফতানি করছে। অথচ যেসব দেশে শ্রমিকের দক্ষতা বেশি, সেসব দেশে বাড়ে বিদেশী বিনিয়োগ। জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রেও একই চিত্র। বিদেশে শ্রমিক প্রয়োজন। তবে ক্রমাগত দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বাড়ছে। অদক্ষ শ্রমিকের চেয়ে দক্ষ শ্রমিক প্রাায় ১০ গুণ বেশি আয় করেন। আর শ্রমিকের দক্ষতা নির্ভর করে শিক্ষার মানের ওপর। তাই শিক্ষার মান পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি। গতানুগতিক চিন্তার মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তন করা সম্ভব হবে না।

বিশ্ব সভ্যতাকে নতুন মাত্রা দিচ্ছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব। এই বিপ্লবের প্রক্রিয়া ও সম্ভাব্যতা নিয়ে ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। আলোচনা হচ্ছে আমাদের দেশেও। এই আলোচনার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে এক ধরনের সচেতনতা তৈরি বাংলাদেশকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের নেতৃত্ব দানের উপযোগী করে গড়ে তুলে দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা নিরলস কাজ করছেন। 

আমরা জানি, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব হচ্ছে ফিউশন অব ফিজিক্যাল, ডিজিটাল এবং বায়োলজিকাল স্ফেয়ার। এখানে ফিজিক্যাল হচ্ছে হিউমেন, বায়োলজিকাল হচ্ছে প্রকৃতি এবং ডিজিটাল হচ্ছে টেকনোলজি। এই তিনটিকে আলাদা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে কী হচ্ছে? সমাজে কী ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে? এর ফলে ইন্টেলেকচুয়ালাইজেশন হচ্ছে, হিউমেন মেশিন ইন্টারফেস হচ্ছে এবং রিয়েলটি এবং ভার্চুয়ালিটি এক হয়ে যাচ্ছে। আমাদেরকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করতে হলে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স, ফিজিক্যাল ইন্টেলিজেন্স, সোশ্যাল ইন্টেলিজেন্স, কনটেস্ট ইন্টেলিজেন্সর মতো বিষয়গুলো মাথায় প্রবেশ করাতে হবে।

তাহলে ভবিষ্যতে আমরা সবাইকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করতে পারব। তবে ভবিষ্যতে কী কী কাজ তৈরি হবে সেটা অজানা। এই অজানা ভবিষ্যতের জন্য প্রজন্মকে তৈরি করতে আমরা আমাদের কয়েকটা বিষয়ে কাজ পারি। সভ্যতা পরিবর্তনের শক্তিশালী উপাদান হলো তথ্য। সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ তার অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে উদগ্রীব ছিল।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রযুক্তিগত আলোড়ন সর্বত্র বিরাজমান। এ বিপ্লব চিন্তার জগতে, পণ্য উৎপাদনে ও সেবা প্রদানে বিশাল পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। মানুষের জীবনধারা ও পৃথিবীর গতি-প্রকৃতি ব্যাপকভাবে বদলে দিচ্ছে। জৈবিক, পার্থিব ও ডিজিটাল জগতের মধ্যেকার পার্থক্যের দেয়ালে চির ধরিয়েছে।

আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবটিক্স, ইন্টারনেট অব থিংস, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, থ্রিডি প্রিন্টিং, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও অন্যান্য প্রযুক্তি মিলেই এ বিপ্লব। এ বিপ্লবের ব্যাপকতা, প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিকতা ও এ সংশ্লিষ্ট জটিল ব্যবস্থা বিশ্বের সরকারগুলোর সক্ষমতাকে বড় ধরনের পরীক্ষার সম্মুখীনও করেছে। 

বিশেষত যখন সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা তথা এসডিজির আলোকে ‘কাউকে পেছনে ফেলে না রেখে’ সবাইকে নিয়ে অন্তুর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। টেকসই উন্নয়ন, বৈষম্য হ্রাস, নিরাপদ কর্ম এবং দায়িত্বশীল ভোগ ও উৎপাদন এসডিজি বাস্তবায়ন ও অর্জনের মূল চ্যালেঞ্জ।

শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন কারিগরি ও অনলাইন প্রযুক্তিগত ডিজিটাল জ্ঞান তৈরি করছে নানা কর্মসংস্থান। শিক্ষা কার্যক্রমকে আরো সহজ করে তুলতে এটুআইয়ের সহযোগিতায় তৈরি করা হয়েছে ‘কিশোর বাতায়ন’ ও ‘শিক্ষক বাতায়ন’-এর মতো প্ল্যাটফর্ম। 

বিভিন্ন অনলাইন কনটেন্ট নিত্যনতুন জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি একটি সমৃদ্ধ জাতি গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। ‘মুক্তপাঠ’ বাংলা ভাষায় সর্বৃহৎ ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম। যেখানে সাধারণ, কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। 


তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগিতায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদ্রাসা এবং কারিগরি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করা হয়েছে যা দেশব্যাপী সম্প্রচার করা হচ্ছে। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের মাধ্যমে নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন এবং সহজেই নাগরিকসেবা প্রাপ্তি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবস্থাপনা, কর্মপদ্ধতি, শিল্প-বাণিজ্য ও উৎপাদন, অর্থনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিচালনা করার লক্ষ্যে কাজ করছে।

দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে প্রযুক্তি যেমন করে সহজলভ্য হয়েছে, তেমনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছের প্রযুক্তিনির্ভর সেবা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সব নাগরিক সেবা ও জীবনযাপন পদ্ধতিতে প্রযুক্তি হয়ে উঠেছে এক বিশ্বস্ত মাধ্যম। 

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মোকাবেলায় বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে জোর দিয়েছে। বাংলাদেশ আগামী পাঁচ বছরে জাতিসংঘের ই-গভর্ন্যান্স উন্নয়ন সূচকে সেরা ৫০টি দেশের তালিকায় থাকার চেষ্টা করছে। 

ডিজিটাল বাংলাদেশের ৫টি উদ্যোগ আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। সেগুলো হলো ডিজিটাল সেন্টার, সার্ভিস ইনোভেশন ফান্ড, অ্যাম্পেথি ট্রেনিং, টিসিভি (টাইম, কস্ট ও ভিজিট) ও এসডিজি ট্রেকার। 

তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তরুণরা গড়ে তুলছে ছোট-বড় আইটি ফার্ম, ই-কমার্স সাইট, অ্যাপভিত্তিক সেবাসহ নানা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইটসহ কয়েকটি বড় প্রাপ্তি বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।

ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি আইন প্রণয়ন ও সংশোধন করেছে সরকার। এছাড়া অনেকগুলো বিধি, নীতিমালা, কৌশলপত্র ও নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০০৯ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনটির কয়েকটি ধারা ২০১৩ সালে সংশোধন করা হয়। ২০১০ সালে করা হয় হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ আইন। 

২০১৮ সালে ওয়ান স্টপ সার্ভিস আইন ও ২০১৮ সালে করা হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এছাড়া ২০২০ সালে তিনটি আইনের খসড়া করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- এ টু আই বাংলাদেশ ইনোভেশন এজেন্সি আইন, উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি আইন এবং ডাটা প্রটেকশন আইন। 

ডাটা প্রটেকশন আইনটি পাস হলে ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটারসহ বিদেশি কর্তৃপক্ষগুলো এ দেশে অফিস করতে এবং দেশের তথ্য দেশের ডাটা সেন্টারে রাখতে বাধ্য হবে।

মানুষের মধ্যে এক ধরনের সচেতনতা তৈরি বাংলাদেশকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের নেতৃত্ব দানের উপযোগী করে গড়ে তুলে দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে কাজ চলছে। মানুষের তথ্য প্রসারের তীব্র বাসনাকে গতিময়তা দেয় টেলিগ্রাফ, টেলিফোন, বেতার, টেলিভিশন এসবের আবিষ্কার। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে কম্পিউটার ও পরবর্তীতে তারবিহীন নানা প্রযুক্তি তথ্য সংরক্ষণ ও বিস্তারে বিপ্লবের সূচনা করে। আজকের এই ডটকমের যুগে আক্ষরিক অর্থেই সারা বিশ্ব একটি ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ এ পরিণত হয়েছে। 

আইসিটি বা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি তাই দিন বদলের হাতিয়ার হিসেবে বিশ্বব্যাপী আদৃত হয়েছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রযুক্তিগত আলোড়ন সর্বত্র বিরাজমান। এ বিপ্লব চিন্তার জগতে, পণ্য উৎপাদনে ও সেবা প্রদানে বিশাল পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। মানুষের জীবনধারা ও পৃথিবীর গতি-প্রকৃতি ব্যাপকভাবে বদলে দিচ্ছে। 

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলায় জনগোষ্ঠীকে যেসব দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন, তার প্রায় পুরোটাই নির্ভর করবে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর। শিক্ষাক্রম হলো নিজস্ব আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক; একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক চাহিদার আলোকে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন এবং শিক্ষার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সুনির্দিষ্ট, সুপরিকল্পিত ও পূর্ণাঙ্গ একটি পথনির্দেশ। আগামী দিনের সৃজনশীল ও পরিস্থিতি অনুযায়ী সমস্যা সমাধানে দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার দিকনির্দেশনাও থাকে শিক্ষাক্রমে। 

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব উপযোগী প্রত্যাশিত শিক্ষাক্রম কেমন হওয়া উচিত, তা অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে পাঠ্যবইকেন্দ্রিক শিক্ষাক্রম চিন্তা থেকে বের হয়ে কর্মনির্ভর ও দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে। মুখস্থ করার পরিবর্তে আত্মস্থ, বিশ্লেষণ ও সূত্রের প্রায়োগিক দিককে শিক্ষাক্রম প্রণয়নে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

গুরুত্ব দিতে হবে জ্ঞান-বিজ্ঞানের নতুন ও মৌলিক অর্জনের ওপর। রিস্কিলিং, আপস্কিলিং ও ডিস্কিলিং পদ্ধতির বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। বিদ্যমান শিখন কার্যক্রমের সঙ্গে ডিজিটালনির্ভর অন্যান্য ব্যবস্থা, যেমন ই-লার্নিং ও অনলাইন শিক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে। অর্থাৎ প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার উপযোগী শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করতে হবে।

বাংলাদেশ জনশক্তি রফতানিতে এখনো যেমন অদক্ষ ক্যাটাগরিতে রয়েছে, তেমনি দেশে দক্ষ জনবলের অভাবে বিদেশ থেকে লোক আনতে হচ্ছে। এজন্য জার্মানি, জাপান, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের কারিগরি শিক্ষার মডেল আমাদের অনুসরণ করতে হবে। জার্মানিতে কারিগরি শিক্ষার হার ৭৩ শতাংশ। 

দেশে এ শিক্ষার হার অন্তত ৬০ শতাংশে উন্নীত করার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, চীন ও উত্তর কোরিয়ার মতো দেশের উন্নতির মূলে রয়েছে কারিগরি শিক্ষা। 

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রস্তুতি হিসেবে বাংলাদেশ সরকার স্কুলের পাঠ্যসূচিতে কোডিং শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্পের আওতায় স্কুলে কম্পিউটার এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অবকাঠামোয় বিনিয়োগ বেড়েছে। 

কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে গ্রামীণ বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এখনো আমাদের শিশু ও তরুণদের তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের উপযোগীই করতে পারেনি। শিক্ষার অংশগ্রহণ ও প্রযুক্তি ব্যবহারের হার বেড়েছে কিন্তু মানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। 

এ রকম একটি ভঙ্গুর সর্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে একচ্ছত্র প্রযুক্তিসংক্রান্ত বিনিয়োগ টেকসই হওয়া কঠিন। এতে সামাজিক অসমতা আরো বাড়বে। করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাণিজ্য সব খাতে সর্বজনীন প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিনিয়োগ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দিকে আরো ধাবিত করছে। করোনাকালীন প্রযুক্তিগত সংস্কার মাত্র এক বছরের মধ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে মালয়েশিয়া। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দ্রুত ও সময়োচিত পদক্ষেপ এবং নীতিমালা প্রণয়নের মধ্য দিয়ে সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বজনীন অবকাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল গভর্ন্যান্সের মাধ্যমে পুরোদমে সব কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে। 

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দ্রুত সময়ে কর্মী ট্রেসিং অ্যাপ উন্নয়ন করেছে, যার মাধ্যমে শিক্ষক ও কর্মচারীরাই দৈনন্দিন কার্যক্রম তদারক করছেন। বাংলাদেশও মালয়েশিয়ার উচ্চশিক্ষার মডেল অনুসরণ করতে পারে।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি শত সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে। এ সময় দক্ষ নেতৃত্ব ও গুণগত শিক্ষার ওপর জোর দেয়া আবশ্যক। আমাদের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো জরুরি। শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে আমাদের। 

শিক্ষার বহুমাত্রিকতা আগামীর নেতৃত্ব গঠনে ভূমিকা রাখবে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় আমাদের শিক্ষার্থীরা নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের গবেষণা, সরকার ও শিল্প খাতের মধ্যে সমন্বয় থাকাটা জরুরি। 

গবেষণায় আরো অর্থ বাড়াতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের তরুণদের চিন্তা করার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পড়াশোনায় বৈচিত্র্য বাড়ানো দরকার। আমাদের যেমন গণিত নিয়ে পড়তে হবে, তেমনি পড়তে হবে শিল্প-সংস্কৃতি নিয়ে। 

প্রোগ্রামিংসহ বিভিন্ন প্রাথমিক দক্ষতা সবার মধ্যে থাকা এখন ভীষণ জরুরি। কেবল পরিকল্পনা করলেই তো হবে না, অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি আমাদের মানবসম্পদকেও যথাযথভাবে প্রস্তুত করতে হবে এ পরিবর্তনের জন্য। তবে আশার কথা, সম্প্রতি ‘ন্যাশনাল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স স্ট্র্যাটেজি’ নিয়ে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু গোড়ার সমস্যার সমাধান না করে এসব পরিকল্পনায় তেমন সুফল মিলবে না।

বাংলাদেশে উদ্ভাবনী জ্ঞান, উচ্চদক্ষতা, গভীর চিন্তাভাবনা ও সমস্যা সমাধান করার মতো দক্ষতাসম্পন্ন মানবসম্পদ পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি হয়নি। তাই সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলোয় প্রতিবেশী ও অন্যান্য দেশ থেকে বাধ্য হয়ে অভিজ্ঞ ও দক্ষতাসম্পন্ন পরামর্শক নিয়োগ দিতে হচ্ছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, এ খরচ বাবদ ৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি পরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। 

বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা যে কার্যকরী নয়, তা সাম্প্রতিক সময়ের এই পরিসংখ্যানিক বিশ্লেষণ থেকেই বোঝা যায়। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান উন্নতি ও সফলতা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে শিল্প ও সেবাচালিত অর্থনীতিতে পরিবর্তন হচ্ছে। অন্যদিকে সবচেয়ে দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে প্রযুক্তি খাতে। 

ফলে শিল্প ও সেবার ধরনেও আসছে পরিবর্তন। তাই এ পরিবর্তনের সঙ্গে মিল রেখে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, নতুন নতুন কৌশল উদ্ভাবন এবং প্রবল প্রতিযোগিতামূলক বাজারের জন্য নিজেদের যদি তৈরি করা না যায়, তবে হাজার হাজার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোনো কাজে আসবে না। আর উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা লাখ লাখ শিক্ষার্থী রাষ্ট্রের বোঝা হয়েই থাকবে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা অনুযায়ী আগামী দুই দশকের মধ্যে মানবজাতির ৪৭ ভাগ কাজ স্বয়ংক্রিয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্রের মাধ্যমে হতে পারে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে শ্রমনির্ভর এবং অপেক্ষাকৃত কম দক্ষতা নির্ভর চাকরি বিলুপ্ত হলেও উচ্চ দক্ষতানির্ভর যে নতুন কর্মবাজার সৃষ্টি হবে সে বিষয়ে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে তার জন্য প্রস্তুত করে তোলার এখনই সেরা সময়। দক্ষ জনশক্তি প্রস্তুত করা সম্ভব হলে জনমিতিক লভ্যাংশকে কাজে লাগিয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল ভোগ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অন্য অনেক দেশ থেকে অনেক বেশি উপযুক্ত। 

এক্ষেত্রে আমাদের জন্য সবচেয়ে ভাল উদাহরণ হতে পারে জাপান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভঙ্গুর অর্থনীতি থেকে আজকের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জাপান পৃথিবীকে দেখিয়ে দিয়েছে শুধু মানবসম্পদকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক এবং সার্বিক জীবনমানের উত্তরণ ঘটানো যায়। জাপানের প্রাকৃতিক সম্পদ অত্যন্ত নগণ্য এবং আবাদযোগ্য কৃষি জমির পরিমাণ মাত্র ১৫%। 

জাপান সব প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করেছে তার জনসংখ্যাকে সুদক্ষ জনশক্তিকে রূপান্তর করার মাধ্যমে। জাপানের এই উদাহরণ আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী। বাংলাদেশের সুবিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে পারলে আমাদের পক্ষেও উন্নত অর্থনীতির একটি দেশে পরিণত হওয়া অসম্ভব নয়।

শিল্প-কারখানায় কী ধরনের জ্ঞান ও দক্ষতা লাগবে সে বিষয়ে আমাদের শিক্ষাক্রমের তেমন সমন্বয় নেই। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলায় শিক্ষা ব্যবস্থাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, আইওটি, ব্লকচেইন এসব প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ এখনও অনেক পিছিয়ে। এসব প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, পণ্য সরবরাহ, চিকিৎসা, শিল্প-কারখানা, ব্যাংকিং, কৃষি, শিক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে কাজ করার পরিধি এখনও তাই ব্যাপকভাবে উন্মুক্ত।

কর্মক্ষেত্রে আমাদেও শ্রমিকদের অদক্ষতাই তাদের আয়ের ক্ষেত্রে এই বিরাট ব্যবধানের কারণ। সঙ্গত কারণেই আমাদের উচিত কারিগরি দক্ষতার ওপর আরও জোর দেয়া। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনাটাও একান্ত জরুরি। শিল্প প্রতিষ্ঠান ও একাডেমিয়া একত্রে কোলাবারেশনের মাধ্যমে হাতে-কলমে শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। 

আমাদের উচিত হবে সকল বিভাগ ও সেক্টর তাদের নিজস্ব কাজকে আরও বেগবান করার লক্ষ্যে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তি ভাবনাকে সামনে রেখে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা। অতঃপর সকল সেক্টরের কর্মপরিকল্পনাকে সুসমন্বিত করে একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে সকলে মিলে কাজ করতে হবে।

আশার কথা, শিল্প বিপ্লবের ভিত্তি হিসেবে তিনটি বিষয়ে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। এগুলো হলো- অত্যাধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে শিল্পের বিকাশ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী বাহিনী তৈরি করা এবং পরিবেশ সংরক্ষণ। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন ব্যাপকহারে সরকারী বেসরকারী যৌথ উদ্যোগ। তাই সবাই মিলে আমাদের এখন থেকেই একটি সুপরিকল্পনার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই আমরা আমাদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব, গড়তে পারব বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা।

কেবল পরিকল্পনার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি আমাদের মানবসম্পদকেও যথাযথভাবে প্রস্তুত করতে হবে এ পরিবর্তনের জন্য। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, আইওটি, ব্লকচেইন এসব প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ এখনো তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে। 

এসব প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, পণ্য সরবরাহ, চিকিৎসা, শিল্প-কারখানা, ব্যাংকিং, কৃষি, শিক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে কাজ করার পরিধি এখনো তাই ব্যাপকভাবে উন্মুক্ত। সত্যিকার অর্থে যেহেতু তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের সুফলই আমরা সবার কাছে পৌঁছতে পারিনি, চতুর্থ বিপ্লব মোকাবেলার জন্য আমাদের প্রস্তুতি কতটকু তা আরো গভীরভাবে ভাবতে হবে। ব্যাপক সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপনের মাধ্যমে তা করা সম্ভব। 

শুধু দেশেই নয়, যারা বিদেশে কাজ করছেন তাদেরকেও যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদেশে পাঠাতে হবে। বিদেশে আমাদের এক কোটি শ্রমিক আয় করেন ১৫ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে ভারতের ১ কোটি ৩০ লাখ শ্রমিক আয় করেন ৬৮ বিলিয়ন ডলার। কর্মক্ষেত্রে আমাদের শ্রমিকদের অদক্ষতাই তাদের আয়ের ক্ষেত্রে এ বিরাট ব্যবধানের কারণ। সংগত কারণেই আমাদের উচিত কারিগরি দক্ষতার ওপর আরো জোর দেয়া। 

সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনাটাও একান্ত জরুরি। আগামী দিনের সৃজনশীল, সুচিন্তার অধিকারী, সমস্যা সমাধানে পটু জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার উপায় হলো শিক্ষা ব্যবস্থাকে এমনভাবে সাজানো, যাতে এ দক্ষতাগুলো শিক্ষার্থীর মধ্যে সঞ্চারিত হয় এবং কাজটি করতে হবে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য টিচিং অ্যান্ড লার্নিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। 

আমাদের কারিগরি শিক্ষা ও বিশ্ব প্রস্তুতিতে দেখা যায়, জার্মানিতে ১৯৬৯ সালে, সিঙ্গাপুরে ১৯৬০ সালে ও বাংলাদেশে ১৯৬৭ সালে শুরু হয়েছে। অন্যান্য দেশগুলি দ্রুত উন্নতি করলেও আমরা বিভিন্ন পরিসংখ্যানে কারিগরি শিক্ষার হার ও গুণগত মানের দিক দিয়ে অন্যদের থেকে অনেক পিছিয়ে আছি। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সূত্র অনুযায়ী আমাদের দেশে বর্তমানে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৮ হাজার ৬৭৫ টি। বর্তমানে প্রায় ১২ লক্ষ শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষায় পড়াশোনা করছে।

কারিগরি শিক্ষার হারে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। আমাদের মাত্র ১৪% শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করছে যেখানে বর্তমানে কারিগরি শিক্ষার হার জার্মানিতে ৭৩ শতাংশ, জাপান ৬৬ শতাংশ, সিঙ্গাপুর ৬৫ শতাংশ, অষ্ট্রেলিয়া ৬০ শতাংশ, চীন ৫৫ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়া ৫০ শতাংশ, মালয়েশিয়া ৪৬ শতাংশ। অবশ্য আমাদের বর্তমান সরকার কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে একটি দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে যা ২০২০ সালে ২০% , ২০৩০ সালে ৩০% এবং ২০৫০ সাল নাগাদ কারিগরি শিক্ষার হার ৫০% এ উন্নীত করার এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করছে।

তাই আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ ও হাইটেক পার্কসহ সবাইকে এক হয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বিষয়টি মনেপ্রাণে অনুধাবনপূর্বক কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নের জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং সরকারকে এ খাতে উন্নয়ন বাজেট বাড়াতে হবে। তা না হলে আমরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বো এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে আমাদের চ্যালেঞ্জের সম্মুখে পড়তে হবে।

তথ্যপ্রযুক্তি দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে এনে দিয়েছে নতুন মাত্রা। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ফলে অর্থনৈতিক লেনদেনের সুবিধা সাধারণ মানুষের জীবনকে সহজ করেছে। তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে স্টার্টআপ সংস্কৃতির বিস্তৃতি লাভ করেছে। নারীরাও তথ্যপ্রযুক্তিতে যুক্ত হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নারী উদ্যোক্তাদের উপস্থিতি বাড়ছে। দেশে প্রায় ২০ হাজার ফেসবুক পেজে কেনাকাটা চলছে। দক্ষভাবেই চলছে কাজগুলো।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.