× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস

আবদুল গাফফার চৌধুরী

১৯ মে ২০২২, ১০:৫২ এএম

আবদুল গাফফার চৌধুরী

১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হলো। একটি ভারত ইউনিয়ন এবং অন্যটি পাকিস্তান। ভারতবর্ষ আসলে বহুজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল। তাই একে কেউ কেউ বলেন উপমহাদেশ। এই উপমহাদেশে শুধু বহু জাতি নয়, বহু ভাষা, বহু সংস্কৃতি ও বহু ধর্মের অস্তিত্ব। অথচ তাকে দ্বিখণ্ডিত করা হলো মধ্যযুগীয় ধর্মীয় জাতিতত্ত্বের একটা প্রচণ্ড ভ্রান্তিকে ভিত্তি করে। এই ধর্মীয় দ্বিজাতিতত্ত্বের প্রধান উদ্যোক্তা মি. মুহম্মদ আলী জিন্নাহ। কিন্তু তার পরিকল্পিত পাকিস্তানের মূল প্রস্তাব, যা লাহোর প্রস্তাব নামে খ্যাত, তাতেও ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা ও দূরত্ব এবং ভাষা ও সংস্কৃতিগত স্বাতন্ত্র্যের জন্য ভারতের উত্তর-পশ্চিম প্রান্ত ও পূর্বাঞ্চলে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছিল, একটি নয়। ভারত ভাগ হওয়ার মুখে ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগের দিল্লি কনভেনশনে জিন্নাহ সুকৌশলে লাহোর প্রস্তাবের ‘স্টেটস’ কথাটি বদলে ‘স্টেট’ করে নিলেন। শুরু হলো পাকিস্তানে জাতি-শাসন ও শোষণ প্রতিষ্ঠা এবং বহু দূরবর্তী বাংলাদেশকে উপনিবেশে পরিণত করে রাখার অপচেষ্টা। বাংলাদেশে মুসলিম লীগের কর্তৃত্ব তখন ছিল উর্দুভাষী ঢিউডাল নেতৃত্বের হাতে। তারা সহজেই উপনিবেশের নেটিভ উপশাসকের ভূমিকা গ্রহণে রাজি হলেন এবং আত্মসমর্পণ করলেন পশ্চিম পাকিস্তানি পলিটিক্যাল কাম ব্যুরোক্র্যাট শাসক চক্রের কাছে।

মুসলিম লীগের অভ্যন্তরে যে প্রগতিশীল অংশটি ছিল শহীদ সোহরাওয়ার্দী নেতৃত্বে, তার প্রবীণ কর্মকর্তাদের কেউ কেউ মন্ত্রী ও রাষ্ট্রদূতের পদ পেয়ে শাসকচক্রের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন বটে, কিন্তু তরুণ নেতাদের মধ্যে সবচাইতে উল্লেখযোগ্য নাম শেখ মুজিবুর রহমান। মুসলিম লীগের ফিউডাল ও প্রতিক্রিয়াশীল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে এরা প্রথমে গঠন করলেন মুসলিম লীগ কর্মী শিবির এবং শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগও আলাদা হয়ে গেল দলের প্রতিক্রিয়াশীল অংশ থেকে। এটা ১৯৪৮ সালের ঘটনা। 

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ইতিহাসে ১৯৪৮ এই বছরটি রক্তাক্ষরে লেখা থাকবে চিরকাল।

এই বছরই তিনটি প্রধান ঘটনা ঘটলো বাংলাদেশে বা তার ইতিহাসকে সম্পূর্ণ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করলো।

১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে মুহম্মদ আলী জিন্নাহ এলেন ঢাকায় রাজকীয় সফরে। তখন তিনি পাকিস্তানের নিয়মতান্ত্রিক প্রধান বা গভর্নর জেনারেল। ঢাকার জনসভায় দাঁড়িয়ে তিনি ঘোষণা করলেন, ‘উর্দু-উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। জিন্নাহ সাহেব হয়তো ভেবেছিলেন, কয়েক শতাব্দী আগে বাংলাদেশকে শাসন ও শোষণ করতে এসে সংস্কৃত ভাষাভিমানী ব্রাহ্মণ শাসকেরা যেমন ঘোষণা করেছিলেন যে, ‘বাংলা রৌরব নরকের ভাষা’ এবং অত্যাচার শুরু করেছিলেন বাংলা ভাষাভাষী স্থানীয় লোকদের ওপর-যার পরিণামে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির কিছু নিদর্শন নিয়ে তারা পালিয়ে গিয়েছিলেন প্রতিবেশী নেপাল ও অন্যান্য দেশে; বিশ শতকের মধ্যপাদেও তার ঘোষণায় পাকিস্তানের নেটিভ বাঙ্গালী প্রজারা তা-ই করবে। কিন্তু তা হলো না। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবে একটি বিদ্রোহী কণ্ঠ জিন্নার ঘোষণার উত্তরে গর্জে উঠলো- না, না, না। বাংলাদেশে শুরু হলো মধ্যযুগীয় অত্যাচার, গ্রেপ্তার, গুলি,  নির্যাতন,  হত্যা। গঠিত হলো প্রথম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। প্রতি বছর ১১ই মার্চ তারিখে সারা বাংলাদেশে রাষ্ট্রভাষা দিবস পালিত হতে লাগল ১৯৫২ সাল পর্যন্ত। একই বছরে ঘটল আরেকটি ঘটনা। আইয়ুব খাঁ তখন উপনিবেশ বাংলার পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর জিওসি। বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে তার তীব্র ঘৃণা। তাঁর আত্মজীবনী ‘প্রভু নয় বন্ধু’ পুস্তকে তিনি বাঙ্গালীদের বর্ণনা করেছেন ‘বেটে ও কালো’  এই দুই বিশেষণ দ্বারা। এই সময় কয়েকটি দাবী দাওয়ার ভিত্তিতে বাঙ্গালী পুলিশ ধর্মঘট করলো। ঢাকার লালবাগ থানা (যা আবার লালবাগ দুর্গেই অবস্থিত ছিল) হলো তাদের হেড কোয়ার্টার।

আইয়ুব ভার নিলেন ধর্মঘটী বাঙ্গালী পুলিশদের শায়েস্তা করার। আলোচনার নামে তিনি সকল ধর্মঘটী পুলিশ-নেতাকে ডেকে পাঠালেন লালবাগ দুর্গে। ততক্ষণে সৈন্যবাহিনী পজিশন নিয়েছে দুর্গের চারপাশে। সরল ও সহজ বাঙ্গালীরা কিছুই বুঝল না। তারা ফাঁদে পা দিল। অতর্কিতে গুলি বৃষ্টি শুরু হলো চারদিক থেকে। রক্তে লাল হয়ে গেল লালবাগ দুর্গের সবুজ মাটি। অসংখ্য পুলিশ শহীদ হলো আক্রমণে বাধা দেবার প্রস্তুতির আগেই। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দিনটি ছিল পয়লা রমজান। মুসলমানদের কাছে অতি পবিত্র মাস ও দিন। এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে যে সভা হলো ঢাকার আরমানিটোলা ময়দানে তাতে বক্তৃতা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন বাংলার তখনকার তরুণ রাজনৈতিক নেতারা। একজন প্রকাশ্যেই পাকিস্তানের শাসকদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলেন-‘তোমরা কেমন তরে ইসলামী রাষ্ট্রে মুসলমান শাসক? তোমরা পবিত্র রমজান মাসকেও মহরমের মাসে (ইসলামের ইতিহাসে শোকের মাস) পরিণত করতে দ্বিধা করনি ধর্মীয় দ্বিজাতিতত্ত্বের বিভ্রম তখন বাংলাদেশে মানুষের মন থেকে ধীরে ধীরে দূর হতে শুরু করেছে। 

তৃতীয় ঘটনাটি আরও তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জিন্নার তিরোধান হলো। পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল হলেন উর্দুভাষী বাঙ্গালী খাজা নাজিমুদ্দীন। প্রধান মন্ত্রী রয়ে গেলেন নবাবজাদা লিয়াকত আলি খান। শুরু হলো শুধু বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে নয়, তার গোটা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য ও গোপন ষড়যন্ত্র। বেতার ও সরকারি প্রচার মাধ্যম শুরু হলো বাংলাভাষায় বাংলা শব্দ ছাঁটাই অভিযান। এই সময় একটি সরকারি বাংলা সাহিত্য মাসিকে প্রকাশিত প্রচ্ছদ ছবির নীচে লিখে দেয়া হলো ‘একটি হালখরিদ তাবাহকুম।’ অনেক গবেষণা করে বাঙ্গালী পাঠককে বুঝতে হলো, এর অর্থ একটি সদ্য কেনা ডেস্ট্রয়ার। কেবল বাংলা ভাষা থেকে বাংলা শব্দ ছাঁটাই করা নয়, সরকারি তহবিলের লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হলো, বাংলা হরফের বদলে উর্দু হরফে বাংলা লেখা জনপ্রিয় করে তোলার অভিযান পরিচালনার জন্য। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে বাঙ্গালি তরুণ বুদ্ধিজীবীদের অনেকে গ্রেপ্তার হলেন। পরবর্তীকালে আইয়ুব আমলে বাংলা বর্ণমালা ও রবীন্দ্র সঙ্গীত-বিরোধী সরকারি অভিযানও ছিল এই বাংলা সংস্কৃতি উচ্ছেদ পরিকল্পনার অংশ। 

একদিকে বাঙ্গালীদের সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ এবং অন্যদিকে পুলিশ বিদ্রোহ ও ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে ১৯৪৯ সালে ঢাকা শহরে জন্ম নিলো আওয়ামী মুসলিম লীগ বা পরবর্তীকালের আওয়ামী লীগ। প্রথমদিকে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন, শাসকদের কাছে আবেদন-নিবেদন ও প্রতিবাদ জানানোর কর্মসূচী নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানের জন্ম হলেও পরবর্তীকালে নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানকেই সশস্ত্র স্বাধীনতার যুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে হবে এটা হয়ত সেদিন কেউ ভাবেন নি। ১৯৫০ সালের শেষ দিকেই সম্ভবত: লিয়াকত-মন্ত্রীসভা পাকিস্তানের ভাবী সংবিধানের রূপরেখা হিসেবে বেসিক প্রিন্সিপলস কমিটি বা মূলনীতি কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করেন। এই রিপোর্টে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার এবং দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পরিষদে কৌশলে সংখ্যাগুরু বাংলাদেশকে সংখ্যালঘুতে পরিণত করার ব্যবস্থা ছিল। শুরু হলো বাংলাদেশে অ্যান্টি বিপিসি মুভমেন্ট, যে আন্দোলনের আওয়াজে মুখর। এই সালেই ১৬ অক্টোবর তারিখে পাকিস্তানে আমলাতন্ত্র ও সামরিক চক্রের মিলিত চক্রান্তে রাওয়ালপিন্ডিতে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান। গভর্নর জেনারেল নাজিমুদ্দিন আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর পূর্বপদে ইস্তাফা না দিয়েই রাতারাতি প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হলেন। আর গভর্নর জেনারেল হলেন কুচক্রী আমরা গোলাম মোহাম্মদ। ১৯৫২ সালের গোঁড়ার দিকে ঢাকা শহরে সরকারি সফরে এসে নাজিমুদ্দিন জিন্নার কণ্ঠ অনুকরণ করে ঘোষণা করলেন, উর্দু’ই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। আবার শুরু হলো সংগ্রাম। বাংলাদেশব্যাপী হরতাল, ধর্মঘট, ছাত্র-বিক্ষোভ। যার পরিণতি রক্তাক্ত ফেব্রুয়ারি। এই তারিখে ঢাকার ছাত্রেরা ১৪৪ ধারা অমান্য করে ঢাকার রাস্তায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে। সাবেক প্রাদেশিক পরিষদ ভবনের কাছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী নির্বিচারে গুলি চালায়। প্রথম দিনেই গুলিতে শহীদ হন বরকত, রফিক, সালাম, জব্বার প্রমুখ অসংখ্য ছাত্রও অন্যান্য পেশার লোক। সারা বাংলাদেশে পাকিস্তানি প্রশাসন ভেঙে পড়ে।

২৬শে, ২৭শে ও ২ শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে প্রকৃতপক্ষে ছিল-সামরিক শাসন। শহীদের জন্য গায়েবি জানাজা, শোক মিছিলের উপরও সেনাবাহিনী গুলি চালিয়েছে। হাজার হাজার রাজবন্দীতে ভরে গেছে জেলখানা। হাসপাতালে আহতদের স্থান সংকুলান হয় নি। পুরো সাতদিনে বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে উড়েছে শোকের কালো পতাকা। শেষ পর্যন্ত সরকার ঘোষণা করতে বাধ্য হলেন, তাঁরা রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে পুনরায় বিচার বিবেচনা করবেন। প্রাদেশিক পরিষদে মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমিন নিজে প্রস্তাব তুললেন, বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষা করার জন্য। তা সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়ে গেল। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে প্রথম সফল গণঅভ্যুত্থানের দিন। এই অভ্যুত্থানের মুখে পাকিস্তানি শাসকচক্র সাময়িক পশ্চাদপসরণের কৌশল গ্রহণ করলেন।

মুসলিম লীগের জনপ্রিয়তা যত হ্রাস পাচ্ছিল তারা ততই আমলাতন্ত্র ও সৈন্যবাহিনীর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছিল। আমলাতন্ত্র ও সামরিক চক্র এক হয়ে এর সুযোগ নিলেন। সেনাপতি আইয়ুব খাঁর সমর্থন পেয়ে আমলা গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ ১৯৫২ সালে প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দিনকে বরখাস্ত করে দিলেন। এবার ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বগুড়ার নবাবজাদা মোহাম্মদ আলী এলেন পুতুল প্রধানমন্ত্রী হয়ে। 

মোহাম্মদ আলীর আমলেই পাকিস্তানকে সামরিক চুক্তি জোটে ভেড়ানো হলো। বাংলাদেশে এর বিরুদ্ধেও হলো প্রবল আন্দোলন। 

প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানের শাসন ব্যবস্থায় বাংলাদেশকে অংশীদার করে নেয়ার কোনই ইচ্ছে ছিল না পাঞ্জাবি ‘মিলিটারি ব্যুরোক্র্যাট কমপ্লেক্সের।’ তারা মোহাম্মদ আলীকেও একটি সংবিধান প্রণয়নে বাধা দিল এবং তুচ্ছ অজুহাতে গণপরিষদ ভেঙে দেয়ার চক্রান্ত পাকাতে লাগলো। ১৯৫৪ সালে বাংলাদেশে হলো সাধারণ নির্বাচন। এই নির্বাচনে মুসলিম লীগ শোচনীয়ভাবে পরাজিত হলো। শেরে বাংলা ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট একুশ দফার ভিত্তিতে বিপুল বিজয়ের অধিকারী হলো। এই একুশ দফার মূল কথা ছিল, বাংলাদেশের জন্য পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন এবং বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা প্রদান। নির্বাচনী ফল দেখে ঔপনিবেশিক শাসকেরা শঙ্কিত হলেন। গোপন অর্থ সাহায্যে বাংলাদেশের শিল্পাঞ্চলে-আদমজীনগর ও চন্দ্রঘোনায় বাঙ্গালী-অবাঙ্গালী শ্রমিক দাঙ্গা বাধিয়ে এবং নবগঠিত যুক্তফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা ফজলুল হকের একটি কথিত উক্তির বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা প্রচার করে প্রথমে তারা যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভাকে পদচ্যুত করেন। মুখ্যমন্ত্রী ফজলুল হক হন গৃহবন্দী। শেখ মুজিব সহ হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতা ও কর্মী গ্রেপ্তার হন। পরে ১৯৫৫ সালে গণপরিষদও ভেঙে দিয়ে বগুড়ার মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে পাকিস্তানে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়। এই মন্ত্রীসভায় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আইয়ুব এলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হয়ে। কিন্তু সেই সঙ্গে তিনি প্রধান সেনাপতির দায়িত্বও নিজের হাতে রাখলেন।

অনেক গোপন ও প্রকাশ্য বৈঠক, আলোচনা ও দরকষাকষির পর পাকিস্তানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বার্থে বাংলাদেশ রাষ্ট্রপরিচালনায় তার সংখ্যাগরিষ্ঠতার অধিকার ত্যাগ করতে রাজি হলো। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সূচনায় একবার কেন্দ্রীয় রাজধানী ও সামরিক হেডকোয়ার্টার সংখ্যালঘু অঞ্চলে প্রতিষ্ঠায় সম্মতি দিয়ে বাঙ্গালীরা চরম স্বার্থত্যাগ করেছে। দ্বিতীয়বার তারা অনুরূপ স্বার্থত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার অধিকার ছেড়ে দিয়ে। ঠিক হলো, জাতীয় পরিষদে যেমন উভয় অঞ্চলের সদস্য সংখ্যা সমতার ভিত্তিতে হবে, তেমনি চাকরি-বাকরি থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও বাঙ্গালীদের সমানাধিকার মেনে নেয়া হবে। সংবিধানের ফর্মুলা নিয়ে মীমাংসা হলো। দ্বিতীয় গণপরিষদের বৈঠক বসল মারীতে। কিন্তু সামরিক ও আমলাতান্ত্রিক চক্রের ষড়যন্ত্র রইল অব্যাহত। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বগুড়ার মোহাম্মদ আলী বিদায় নিলেন। নতুন প্রধানমন্ত্রী হয়ে এলেন ঝানু আমলা চৌধুরী মোহাম্মদ আলী। ততদিনে বাংলাদেশে যুক্তফ্রন্ট ভাগ হয়ে গেছে। প্রথম কিছুদিন হক-সাহেবের নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের অংশের সঙ্গে চৌধুরী মোহাম্মদ আলী কোয়ালিশন সরকার চালান এবং ১৯৫৬ সালে সংখ্যা সাম্য নীতির ভিত্তিতে প্রথম সংবিধান প্রণীত ও গৃহীত হলো। তারপর এলেন প্রধানমন্ত্রী হয়ে। তাঁর কোয়ালিশন সরকারে অঙ্গদল হলো সীমান্ত প্রদেশের সাবেক কংগ্রেস নেতা ডাঃ খান সাহেবের রিপাবলিকান পার্টি।

জনাব সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হয়ে সংবিধানে যুক্ত নির্বাচন প্রথা প্রবর্তন করেন। তার কোয়ালিশন সরকারের অঙ্গদল রিপাবলিকান পার্টিও ছিল অসাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠান। 

ধর্মীয় রাষ্ট্র পাকিস্তানে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির কি অলক্ষ্য বিজয় সূচিত হয়েছিল, সেদিন অনেকেই হয়ত তা অনুধাবন করতে পারেন নি। মাত্র তের মাস সরকার পরিচালনার পর সোহ্রাৗয়ার্দী মন্ত্রীসভা যখন সারা পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ গ্রহণ করলেন,  তখন তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করা হলো। আর ঠিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি পর্বেরে মুখে ১৯৫৮ সালের ৭ই অক্টোবর প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মীর্জা বিনা কারণে তুচ্ছ অজুহাত তুলে সংবিধান, মন্ত্রীসভা বাতিল করে সামরিক আইন জারী করলেন। তার সহযোগী হলো পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ২৭শে অক্টোবর মীর্জা বিতাড়িত হলেন। জেনারেল আইয়ুব হলেন প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান সামরিক শাসক। 

(দুই)

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের এটা দ্বিতীয় পর্ব। 

এতদিন বাংলাদেশে ছিল পাকিস্তানীদের অপ্রত্যক্ষ শাসন এবং এবার এলো প্রত্যক্ষ শাসন। অর্থনৈতিক কলোনি এবার রাজনৈতিক কলোনিতে রূপান্তরিত হলো। পাকিস্তানী সামরিক জান্তা ও আমলাতন্ত্র এবং তাদের দোসর বৃহৎ পুঁজিপতি, মনোপতি ও কার্টেলগুলো পাকিস্তানে পাকিস্তানে সর্বেসর্বা হয়ে উঠল।

তবু বাংলাদেশ ধৈর্য ধরে প্রতীক্ষা করতে লাগল গণতান্ত্রিক আত্মশাসনের স্বীকৃতি লাভের জন্য। তখনও তার আন্দোলন স্বাধিকারের জন্য। ছয় দশকের গোঁড়ার দিকে একটি অগণতান্ত্রিক সংবিধান বাংলাদেশের মানুষকে মেনে নিতে বাধ্য করার আগে জনাব শহীদ সোহরাওয়ার্দী গ্রেফতার করা হলো। ১৯৬২ সালে বাংলাদেশে এই নিয়ে হলো তুমুল আন্দোলন। ছাত্রেরা গণতান্ত্রিক শিক্ষার দাবী নিয়ে বেরিয়ে এলো রাস্তায়। আইয়ুবের পুলিশ ও সেনাবাহিনী গুলি চালাল। এটা বাংলাদেশে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে প্রথম গণঅভ্যুত্থানের সূচনা। 

বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানে ভীত সামরিক জান্তা সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামা সৃষ্টির চেষ্টা করলেন। শেখ মুজিবুর রহমান নেতৃত্ব দিলেন দাঙ্গা-প্রতিরোধ আন্দোলন। বাঙ্গালী বুদ্ধিজীবী দাঙ্গা-প্রতিরোধ করতে গিয়ে প্রাণ দিলেন। স্বাধিকারের অগ্নিমন্ত্র উচ্চারিত হলো শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য নেতার স্বাক্ষরিত ইশতেহারের ভাষায়- পূর্ব বাংলা রুখে দাঁড়াও। দাঙ্গা থামাকে গিয়ে শেখ মুজিব ও অন্যান্য নেতা অভিযুক্ত হলেন আইয়ুবের আদালতে। 

১৯৬৪ সালে আইয়ুব--প্রবর্তিত বেসিক ডেমোক্রেসির নির্বাচন এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। আইয়ুব টাকা ছড়িয়ে, ভয় দেখিয়ে প্রশাসন যন্ত্র যথেচ্ছ ব্যবহার করে ৮০ হাজার মৌলিক গণতন্ত্রীর অধিকাংশের ভোটে জিতলেন সকল বিরোধী দলের প্রার্থী মিস ফাতেমা জিন্নার বিরুদ্ধে। নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় বাংলাদেশের স্বাধিকার আদায়ের শেষ আশা নিভে গেল।

১৯৬২ থেকে ১৯৬৫ এই তিন বছরের মধ্যে অনেকগুলো ঘটনা ঘটলো পাকিস্তানে। একে একে ফজলুল হক, সোহরাওয়ার্দী ও নাজিমুদ্দিন মারা গেলেন। পাকিস্তানের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আশায় সোহরাওয়ার্দী তাঁর শেষ জীবনে সকল বিরোধী দলকে মিলিয়ে যে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গঠন করেছিলেন, তাঁর মৃত্যুতে তাও পড়ল নিষ্ক্রিয় ও ঐক্যহীন হয়ে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণ করলেন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৬৫ সালে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের ১৭ দিনব্যাপী যুদ্ধ হলো। 

সেই যুদ্ধে দেখা গেল বাংলাদেশ সম্পূর্ণ অরক্ষিত, অসহায় এবং যুদ্ধের পর দেখা গেল বাংলাদেশের সম্পদ আরও শোষণ করে চলছে পশ্চিম পাকিস্তানে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণের চেষ্টায়। বাংলাদেশে জমির দাম নেমে গেল। পাট বেচা টাকা চলে গেল পশ্চিম পাকিস্তানে। সোনা চালান হয়ে গেল সেখানে। এতদিন যত বৈদেশিক সাহায্য এসেছে তার সিংহভাগ ব্যয় হয়েছে পশ্চিম পাকিস্তানে। এবার যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ মোটা ট্যাক্সের বোঝাও চাপিয়ে দেয়া হলো বাংলাদেশের কাঁধে পঁচিশ বছর বাংলাদেশ তার পাট ও অন্যান্য কাঁচা মাল বেচে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছে পশ্চিম পাকিস্তানের চেয়েও অনেক বেশি। কিন্তু সেই টাকাও অধিকাংশ ব্যয় করা হয়েছে পশ্চিম পাকিস্তানে। বৈদেশিক ঋণের চৌদ্দ আনা খরচ করা হয়েছে পশ্চিম পাকিস্তানে। কিন্তু তার দায়শোধ ও ঋণের মোটা ভাগ চাপানো হয়েছে বাংলাদেশে কাঁধে। পঁচিম বছরে বাংলাদেশের টাকায় তিনটে রাজধানী শহর তৈরি করা হয়েছে-করাচী, রাওয়ালপিন্ডি ও ইসলামাবাদ। অন্যদিকে বাংলাদেশের বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য টাকা সংগ্রহ সম্ভব হয়নি। পশ্চিম পাকিস্তানে সিদ্ধ অববাহিকা পরিকল্পনা সমাপ্ত হয়ে গেল। কিন্তু বাংলাদেশে বন্যা নিয়ন্ত্রণ দূরে থাক, সামান্য পানিসেচের উন্নত ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। পশ্চিম পাকিস্তান তার সংলগ্ন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে আঞ্চলিক উন্নয়ন জোট (আরসিডি) গঠন করে আঞ্চলিক বাণিজ্যের সুবিধা লুটেছে। অথচ বাংলাদেশকে তার সংলগ্ন প্রতিবেশী পশ্চিম বঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরার সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধের অজুহাত তুলে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাভাবিক সুবিধা গ্রহণ করতে দিতে পাকিস্তান রাজি নয়। ভারতের সঙ্গে কাশ্মীর বিরোধ থাকা সত্ত্বেও খালের পানি সমস্যায় মীমাংসা-চুক্তি করতে পশ্চিম পাকিস্তানিদের আপত্তি নেই। কিন্তু যত আপত্তি বাংলাদেশের বন্যা নিয়ন্ত্রণে ভারতের আবশ্যক সহযোগিতা গ্রহণে। জাতিসংঘের পিয়ারসন রিপোর্টেও স্বীকৃত হলো বাংলাদেশের প্রতি বৈষম্যের কথা। বলা হলো, পশ্চিম পাকিস্তানের মরুভূমিতে গভীর নলকূপের সাহায্যে সবুজ বিপ্লব সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশে তা সম্ভব হয়নি। এক কথায় গত পঁচিশ বছর পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ছির শাসক ও শাসিতের।   

পশ্চিম পাকিস্তান শিল্পোন্নত,  বাংলাদেশ তার একচেটিয়া বাজার। ব্যাংক, ইনসিওরেন্স, সিভিল ও মিলিটারি সার্ভিসসহ ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুতে তাদের কর্তৃত্ব। প্রতিরক্ষা বাজেটের নিরানব্বই ভাগ ব্যয় হয় পশ্চিম পাকিস্তানে, এক ভাগ বাংলাদেশে। জওয়ানদের মধ্যে শতকরা দশভাগেরও কম বাঙ্গালী। 

এই রাজনৈতিক পটভূমিতে ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ছ’দফা প্রস্তাব ঘোষণা করেন। এই প্রস্তাবগুলো হলো:

(ক) লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পাকিস্তানে ফেডারেশন গঠন এবং প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচিত পার্লামেন্টারি সরকার।

(খ) কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে মাত্র দুটি বিষয় থাকবে, প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক নীতি।

(গ) পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য দুটি সম্পূর্ণ পৃথক অথচ সহজ বিনিময়যোগ্য মুদ্রার প্রচলন। অথবা দু’অঞ্চলের জন্য একই কারেন্সি-তবে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের মুদ্রা পাচার রোধের জন্য একটি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থাকা সত্ত্বেও দুইটি আঞ্চলিক রিজার্ভ ব্যাংকের ব্যবস্থা।

(ঘ) সকল প্রকার ট্যাক্স খাজনা-কর আদায়ের ক্ষমতা আঞ্চলিক সরকারের। আঞ্চলিক সরকারের আদায় করা রেভিনিউর একটা অংশ ফেডারেল তহবিলে অটোমেটিক্যালি জমা হবে-এই মর্মে রিজার্ভ ব্যাংক সমূহের উপর বাধ্যতামূলক বিধান সংবিধানে রাখা হবে।

(ঙ) দুই অঞ্চলের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পৃথক পৃথক হিসাব রাখা হবে এবং এই অর্থ স্ব স্ব আঞ্চলিক সরকারের এখতিয়ারে থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা দু’অঞ্চল সমানভাবে অথবা সংবিধানের নির্ধারিত হারে দেবে। বিদেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি, বিদেশে ট্রেড মিশন স্থাপন ও আমদানি-রপ্তানি অধিকার আঞ্চলিক সরকারের থাকবে। 

(চ) বাংলাদেশের জন্য মিলিশিয়া বা প্যাারামিলিটারি রক্ষী বাহিনী গঠন করা হবে এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আত্মনির্ভর হবে।

শেখ মুজিবের এই ছ’দফা বাংলাদেশের মানুষের কাছে অভিনন্দিত হল ‘ম্যাগনা কাটা’ মুক্তি সনদ রূপে। আর জেনারেল আইয়ুব হুমকি দিলেন,  ‘এর বিরুদ্ধে তিনি অস্ত্রের ভাষা প্রয়োগ করবেন।’ আইয়ুবের ইঙ্গিতে তার পুতুল গভর্নর মোনেম খাঁ অসংখ্য মামলায় ঝোলাল শেখ মুজিবকে। শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে আটক করা হল। তাঁর উপর নিরাপত্তা আইন ও প্রতিরক্ষা আইন প্রয়োগ করা হল। ছ’দফার আন্দোলনে বাংলাদেশ গর্জে উঠল ১৯৬৬ সালের ৭ই মার্চ তারিখে। সেনাবাহিনী নেমে এলো রাস্তায়। বর্বর দমননীতি প্রয়োগ করে শায়েস্তা করার চেষ্টা করা হল বাংলাদেশকে। আওয়ামী লীগ সমর্থক দৈনিক ইত্তেফাকের প্রেস বাজেয়াপ্ত করা হল। সম্পাদক জনাব তফাজ্জল হোসেন নিক্ষিপ্ত হলেন কারাগারে।

তবু ছ’দফার আন্দোলন ধিকিধিকি জ¦লতে লাগল বাংলাদেশে। আইয়ুব সরকার বিপদ বুঝলেন। গোপনে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা উদ্ভাবন করা হলো। সেই মামলায় প্রধান আসামি করা হল শেখ মুজিবকে।

ততদিনে সামরিক জান্তাতে ভাঙ্গন ধরেছে। ভুট্টো বিদায় হয়েছেন আইয়ুবের মন্ত্রীসভা থেকে। তিনি সামরিক চক্রের একাংশের সহায়তায় আইয়ুবের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামলেন। এদিকে বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে প্রবল গণ-আন্দোলন। ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে আন্দোলন রূপান্তরিত হল অভ্যুত্থানে। সশস্ত্র জনতা কারফিউ ভেঙ্গে এগিয়ে গেল মশাল হাতে কুর্মিটোলা সামরিক ছাউনির দিকে। ক্যান্টনমেন্টে তখন চলছিল আগরতলার মামলার তথাকথিত বিচার। গণ-অভ্যুত্থানের আগুনে অচল হয়ে গেল আইয়ুবের প্রশাসন। আইয়ুব মামলা তুলে নিলেন এবং বিনা শর্তে মুক্তি দিলেন সকল অভিযুক্তকে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি রাওয়ালপিন্ডিতে সকল দলের রাজনৈতিক নেতাদের গোলটেবিল বৈঠক ডাকলেন। কিন্তু ছ’দফা দাবি মানতে পশ্চিম পাকিস্তানী নেতারা রাজি না হওয়ায় শেখ মুজিব বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে এলেন। বাঙালি জাতির কাছে তখন তিনি নন্দিত বঙ্গবন্ধু নামে।

১৯৬৯ সালের পঁচিশে মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়ার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে জেনারেল আইয়ুব সরে দাঁড়ালেন। পাকিস্তানের সামরিক জান্তায় এলেন নতুন এক কূটচক্রী নেতা। ইয়াহিয়া প্রথমে ভাল মানুষের ভান করলেন। দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন তারিখ ঠিক করে দিলেন। সেই সঙ্গে নির্বাচনের আইনগত কাঠামো বা লিগ্যাল ফ্রেম ওয়ার্ক ঘোষণা করে ভয় দেখালেন, নির্বাচনের পর ১২০ দিনের মধ্যে সংবিধান তৈরি না হলে কিম্বা তিনি তাতে সই দিতে না পারলে নব-নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ ভেঙ্গে দেয়া হল। শেখ মুজিবের দাবি মেনে নিয়ে সরকারি ঘোষণায় বলা হয়, জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে নির্বাচন হবে।

১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন। তার এক মাস আগে নভেম্বর মাসে বাংলাদেশে এক প্রলয়ঙ্করী ঝড়ে এক রাতেই মারা গেল দশ লাখ নরনারী। ৩০ লাখ মানুষ হল ছিন্নমূল।  পাকিস্তান সরকার বাংলাদেশের এত বড় বিপদে রইলেন নির্বিকার হয়ে। সাহায্য আসল বিদেশ থেকে। বাংলাদেশের মানুষ বুঝল, পাকিস্তানিদের সঙ্গে তাদের এক জাতিতত্ত্বের তথাকথিত বন্ধন কত ঠুনকো এবং মিথ্যা। ডিসেম্বরের নির্বাচনে সারা বাংলাদেশে নিরঙ্কুশ সংখ্যা-গরিষ্ঠতা লাভ করল আওয়ামী লীগ। সিন্ধু ও পাঞ্জাবে জয়লাভ করল জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টোর পিপলস পার্টি। নির্বাচিত হয়েই ভুট্টো হাঁক ডাক শুরু করলেন, তিনি সারা পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতিনিধি। তিনি ছ’দফা মেনে নেবেন না। তার দল সংখ্যালঘু। তবু তিনি দাবি জানালেন, তাঁকে ক্ষমতার ভাগ দেয়া না হলে তিনি সব বানচাল করে দেবেন।

বানচাল করার চক্রান্তের নীল নকশা অবশ্য আগেই তৈরি করা হয়েছিল এবং এবার তা কাজে পরিণত করা হল। ১৯৭০ সালের ৭ই জানুয়ারি ছোরাহাতে এক যুবক বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে ধরা পড়ল। সে স্বীকার করল, তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছিল। চাটগাঁয় গাড়ী-দুর্ঘটনায় হত্যা করার চেষ্টা হল বঙ্গবন্ধুকে। ২৭শে জানুয়ারি ভুট্টো এলেন ঢাকায়। বসলো বঙ্গবন্ধুর সাথে বৈঠক। করাচি ফেরার সময় বললেন, আবার আসবো। কিন্তু গিয়ে বললেন, ছ’দফা দাবি মানি না। জাতীয় পরিষদে বসবো না আমার দাবি মানা না হলে। এদিকে ৩০শে জানুয়ারি আরেক কাণ্ড। ভারতীয় বিমান ‘গঙ্গা’ হাইজ্যাক করে লাহোরে নামল দুই পাকিস্তানি স্পাই। বলা হল কাশ্মীরি মুক্তিযোদ্ধা। ভারত-বিরোধী উত্তেজনা সৃষ্টি করে জাতীয় পরিষদের বৈঠক যাতে না হয় তার অপচেষ্টা হল। ভুট্টো গিয়ে দেখা করলেন পাকিস্তানী স্পাইদের সঙ্গে। তারা গঙ্গা বিমান উড়িয়ে দিল। শেখ মুজিব এই বিমান হাইক্যাকের পেছনে যে চক্রান্ত কাজ করছে তার নিন্দা করলেন। ভারত সরকার তার দেশের উপর দিয়ে পাকিস্তানী বিমান ওড়া নিষিদ্ধ করে দিলেন। ১৩ই ফেব্রুয়ারি জেনারেল ইয়াহিয়া ঘোষণা করলেন, ৩রা মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের বৈঠক বসবে। এরপরই শুরু হল ইয়াহিয়ার সঙ্গে ভুট্টোর একাধিক গোপন বৈঠক ও ভোজ। ঢাকায় কয়েকটি আধা-সরকারি অফিসে গোপনে বোমা ফাটিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা হল, জাতীয় পরিষদের বৈঠক হওয়ার মত পরিবেশ ঢাকায় নেই। ২৬শে ফেব্রুয়ারি ইয়াহিয়া-ভুট্টো গোপন বৈঠক এবং ২৮ শে ফেব্রুয়ারি ভুট্টো ঘোষণা করলেন: জাতীয় পরিষদের বৈঠক স্থগিত রাখতে হবে। তার দলের সদস্যদের উপস্থিতি ছাড়া পরিষদের বৈঠক বসলে তিনি করাচি থেকে খাইবার পর্যন্ত আগুন জ্বালাবেন।’ অথচ তার আগের দিনই পশ্চিম পাকিস্তানের অন্যান্য দলের ৩৩ জন সদ্য জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। ১ মার্চ ইয়াহিয়া নাটকীয়ভাবে বেতার ঘোষণায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করলেন। 

প্রতিবাদে বাংলাদেশ গর্জে উঠল। এবার স্বাধিকার নয়, সমঝোতা নয়, স্বাধীনতার সংগ্রাম। ঢাকার রাজপথে উন্মুক্ত জনতার ঢল নামলো। স্টেডিয়ামে খেলা ভেঙ্গে গেল। স্টেট বাসে আগুন ধরল। বঙ্গবন্ধু সেদিনই দিলেন সংগ্রামের কর্মসূচি। ২রা ও ২রা মার্চ হরতাল। ৭ই মার্চ রমনার ময়দানে জনসভা। ২রা মার্চ রাত পৌনে ৮টায় ঢাকা বেতারের ঘোষণায় শহরে কারফিউ বলবৎ করবার ঘোষণা প্রচার করা হল। সংবাদপত্রের সেন্সরশিপ দেয়া হল। উন্মুক্ত জনতা কারফিউ ভাঙলো। বহুলোক নিহত হল সংবাদপত্রের সাংবাদিকেরা সেন্সরশিপের আদেশ অমান্য করলেন। ৩রা মার্চ ভুট্টো বসলেন ইয়াহিয়ার সঙ্গে বৈঠকে। ওই দিনই ইয়াহিয়া ঘোষণা করলেন, ১০ই মার্চ তিনি এক নেতৃসম্মেলন আহ্বান করেছেন। শেখ মুজিব এই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে ঘোষণা করলেন, ‘ঢাকা, চট্টগ্রাম ও অন্যান্য স্থানে বাঙালীরা যখন সেনাবাহিনীর গুলিতে শহীদ হচ্ছে, তখন এই আমন্ত্রণ এক নির্মম তামাসা। বন্দুকের নল উঁচিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে আমাকে।’ ঢাকার পল্টন ময়দানের সভায় বঙ্গবন্ধু দিলেন পরবর্তী আন্দোলনের কর্মসূচি। বললেনÑ ‘এটা অস্ত্রধারী পশুশক্তির বিরুদ্ধে নিরস্ত্র জনতার অহিংস অসহযোগ আন্দোলন।’ তিনি সরকারি অফিস আদালত বন্ধ করার নির্দেশ দিলেন। খাজনা ট্যাক্স প্রদান স্থগিত রাখতে বললেন। 

চারদিকে সেনাবাহিনীর নির্মম হত্যাভিযানের মুখে ৬ মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া এক বেতার ভাষণে ২ শে মার্চ তারিখে জাতীয় পরিষদের বৈঠক ডাকার কথা ঘোষণা করেন। ওই দিনই লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খাঁকে বাংলাদেশের গভর্নর নিযুক্ত করার কথা ঘোষণা করা হয়। ৭ই মার্চ রমনার ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন: এটা মুক্তির সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম। তিনি শর্ত দিলেন- সামরিক আইন তুলে নিতে হবে, সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরে যাবে, গণহত্যার উপযুক্ত তদন্ত হবে, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে-এবং একমাত্র এই শর্ত পূরণ হলে তিনি জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যাবেন কিনা বিবেচনা করে দেখবেন। বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণা বেতারে প্রচার করার সরকারি অনুমতি না দেয়ায় ঢাকা বেতারের কর্মীরা ধর্মঘট করেন। পরদিন সরকার বাধ্য হন ঘোষণা প্রচারের অনুমতি দিতে। ফলে ঢাকা বেতার আবার চালু হয়। 

১৫ই মার্চ বাংলাদেশে অসামরিক প্রশাসন চালু রাখার জন্য বঙ্গবন্ধু ৩৫টি বিধি জারী করেন। ওই দিনই দুপুরে কয়েকজন জেনারেল সহ ইয়াহিয়া ঢাকা আসেন শেখ মুজিবের সঙ্গে আলোচনার জন্যে। এই আলোচনায় পশ্চিম পাকিস্তানী নেতারা যোগ দেন এবং শেষ দিকে ভুট্টোও এসে ঢাকা পৌঁছেন। এদিকে ঢাকায় বসবাসকারী বিদেশীরা ঢাকা ত্যাগ করতে শুরু করে এবং কড়া সামরিক প্রহরাধীনে ঢাকা বিমান বন্দরে  ও চাটগাঁ বন্দরে নতুন নতুন পাকিস্তানী সৈন্য আমদানি হতে থাকে। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি টিক্কা খাঁর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনায় রাজি না হওয়ায় গভর্নর পদ শূন্য থেকে যায়। ১ শে মার্চ জয়দেবপুরে বাঙ্গালী সৈন্যদের সঙ্গে পাকিস্তানী সৈন্যদের প্রথম মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে ২৩ শে মার্চ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ বাংলাদেশে প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। ২৩শে মার্চ ইয়াহিয়া ঘোষণা করেন, সকল দলের নেতাদের সম্মতিক্রমে এবং আলোচনার স্বার্থে তিনি জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আবার মুলতুবি রাখছেন। সকলেই ধরে নিলেন, আলোচনা সফলতার দিকে এগুচ্ছে এবং দু-একদিনের মধ্যেই ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা প্রচারিত হবে। ইয়াহিয়া তার বেতার ঘোষণায় স্পষ্টই বললেন, ‘জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের একসঙ্গে কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এবং একত্রে থাকার পারস্পরিক স্বেচ্ছা-সম্মতির উপরই রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নির্ভর করেছে।’

২৪শে মার্চ বাংলাদেশের বিভিন্নস্থানে পাকিস্তানী সৈন্যদের গুলিতে দেড়শ লোক নিহত হয় এবং চট্টগ্রাম বন্দরে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আনিত সমরাস্ত্র নামাতে অস্বীকার করায় বাঙালী পুলিশের উপর গুলি বর্ষণ করা হয়। সমগ্র চট্টগ্রামে যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি হয়। ২৫শে মার্চ রাত্রে ইয়াহিয়া গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন এবং মধ্যরাত থেকে শুরু হয় নির্মম গণহত্যা অভিযান। ২৬শে মার্চ চট্টগ্রাম বেতার থেকে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আস্থা স্থাপন করে তার নির্দেশে বাঙালী সৈন্য ও জনগণের অস্ত্র ধারণের ঘোষণা করা হয়।

১৭ই এপ্রিল মুক্ত বাংলার কুষ্টিয়া জেলার আমবাগানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রচারিত হয় এবং মুজিব নগরকে অস্থায়ী রাজধানী করে জনাব তাজউদ্দীনের নেতৃত্বে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ মন্ত্রীসভা গঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানী কারাগারে থাকায় সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের জলে-স্থলে শুরু হয় স্বাধীনতা অর্জনের গণযুদ্ধ। পাকিস্তানী সৈন্যেরা হত্যা করে প্রায় ত্রিশ লাখ অসহায় নরনারী, দেশের বাছাবাছা শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের। এ কোটি বাঙ্গালী আশ্রয় গ্রহণ করে প্রতিবেশী ভারতে।

বাংলাদেশের মুক্তি বাহিনীর সৈনাপত্য গ্রহণ করেন জেনারেল ওসমানী। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে সমর্থন জানানোর অভিযোগে পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে শত্রুতামূলক আচরণ শুরু করে। ভারত প্রকাশ্যে বাংলাদেশে গণহত্যা বন্ধ করার ব্যাপার তৎপরতা শুরু করে। সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট পদগর্ণি শেখ মুজিব ও বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনায় বসে রাজনৈতিক মীমাংসার জন্য ইয়াহিয়াকে পরামর্শ দেন এবং গণহত্যা বন্ধ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। একই আবেদন জানান আমেরিকার সিনেটর কেনেডি। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের গোঁড়ায় পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং ভারতীয় সৈন্য বাহিনী ও বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী মিলে সম্মিলিত কম্যান্ড বা মিত্র বাহিনী গঠিত হয়। ১৬ই ডিসেম্বর এই মিত্র বাহিনীর কাছে বাংলাদেশে অবরুদ্ধ প্রায় এক লাখ পাকিস্তানী সৈন্য আত্মসমর্পণ করে।

মুজিব নগর থেকে স্বাধীন বাংলার রাজধানী স্থানান্তরিত হয় মুক্ত ঢাকায়। ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পাকিস্তানী কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশে ফিরে আসেন।

পূর্ণ হল বাঙ্গালী জাতির স্বাধীনতার স্বপ্ন। স্বাধীনতা সংগ্রামে লাখ লাক শহীদের রক্তে লেখা হল মুক্ত বাংলার স্বাধীনতার রক্তাক্ত ইতিহাস। 

(সমাপ্ত)

বি.দ্র: লেখাটি ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাদীন বাংলাদেশের প্রথম বিজয় দিবস বার্ষিকী উপলক্ষ্যে তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশ নামক স্মারকগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.