× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

নয়া জাতীয় পরিকল্পনা ও ড. শামসুল আলম

০৪ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮:২৮ এএম

বিনায়ক সেন: ২০১০-এর দশকে পরিকল্পনা প্রক্রিয়ার সাথে ড. শামসুল আলমের নাম জড়িয়ে আছে। এই প্রক্রিয়ার সাফল্য-ব্যর্থতা, অর্জন-ঘাটতি, সবলতা-দুর্বলতা নিয়ে যে আলোচনাই করি না কেন, তাঁর নাম এসে পড়বেই, কেননা তিনি এর কেন্দ্রে অবস্থান করেছেন। ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম পাঁচসালা পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে তারই সঞ্চালনে, প্রস্তুতি ও আয়োজনে। নতুন ধারণা গ্রহণে তিনি পিছিয়ে থাকেননি; পুরোনো ধারণা বাদ দিয়ে নতুন অচেনা পথে যাত্রা করতেও তিনি দ্বিধাগ্রস্ত হননি। এ বিষয়ে তার সংগ্রহনশীলতা চোখে পড়ার মতো। তার কথাবার্তায় ও পদক্ষেপে এক বিনম্র দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করেছে বলেই তিনি সমসাময়িক বাস্তবতাকে যথাসম্ভব বস্তনিষ্ঠ বিচারের মধ্য দিয়ে পরিকল্পনা দলিলে প্রতিফলিত করেছেন। ২০১০-এর দশক কি বৈশ্বিক বিচারে, কি স্থানীয় মানদণ্ডে একটি প্যারাডাইম-বদলের দশক ছিল। 

১৯৯০ ও ২০০০ দশকের প্রধান ধারণা ‘ওয়াশিংটন কনসেন্সাস’ এই সময়ে উন্নয়নসংক্রান্ত ডিসকোর্স থেকে ক্রমেই পিছু সরছিল। বিশ্বব্যাপী ২০০৭ সালের অর্থনৈতিক সংকট ও বৈষম্যের নাটকীয় উত্থান ওয়াশিংটন সমঝোতার এই পিছু হটাকে অনিবার্য করে তোলে। ড. শামসুল আলম এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আঁচ করতে পেরেছিলেন। এক প্রকার আগ্রহের সাথেই তিনি সংকট-উত্তর অর্থনৈতিক ডিসকোর্সকে ধারণ করতে অগ্রসর হন। যষ্ঠ পাঁচসালা পরিকল্পনা দলিলের (২০১১-১৫) শিরোনাম ছিল ‘প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করা ও দারিদ্র্যের হ্রাস’, অর্থাৎ মূল জোরটা এসে পড়েছিল সনাতনী প্রবৃদ্ধির দ্রুতকরণ এবং সেই সূত্রে দারিদ্র্য কমানোর উপায়ের প্রতি। অষ্টম পাঁচসালা পরিকল্পনা (২০২০-২৫) দলিলের শিরোনাম হয়েছে সমৃদ্ধি বাড়ানো ও ‘ইনক্লুসিভনেস’ লালন করা’ অর্থাৎ ঝোঁকটা শুধু প্রবৃদ্ধি-দারিদ্র্য সমীকরণের মধ্যে আটকে থাকেনি; গিয়েছে সবাইকে ‘অন্তর্ভুক্ত’ করার প্রতি। যদিও  ‘বৈষম্য’ শব্দটি এখনো সেভাবে মূল কেন্দ্রে আসেনি। তাহলেও সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তনশীলতা স্বীকার করে নেওয়ার প্রবণতা এখানে নজরকাড়া।

বাংলাদেশের সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগের ১৫ নং ধারায় পরিকল্পনার কথা সরাসরি উল্লেখ করা হয়েছে : ‘রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে’ জনগণের জীবনযাত্রার মান-উন্নয়ন এবং মৌলিক প্রয়োজনের নিশ্চিতকরণ। এটি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ভাষায় রাষ্ট্রের ‘রক্ষাকারী’ (বায়ো-পাওয়ার) ভূমিকার সাথে সম্পর্কিত। ২০১০-এর দশকে বাংলাদেশে বাস্তবিকই পরিকল্পনার নয়া উথান ঘটেছে। এ ঘটনা শুধু এ দেশেই না, তৃতীয় বিশ্বের নানা দেশেই দেখা গেছে। এটাকে কেউ কেউ বলেছেন, নিউ ন্যাশনাল প্ল্যানিং’। 

এদের মতে, ষাট-সত্তর দশকের ‘ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানিং’ আশি-নব্বইয়ের দশকের আকস্মিক ‘স্ট্রাকচারাল অ্যাডজাস্টমেন্ট ক্রাইসিসে’ পড়ে বিপর্যস্ত হয়। অনেক দেশই মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা প্রক্রিয়া থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়। নব্বই দশকের রুলিং আইডিয়া ছিল-বিরাষ্ট্রীয়করণ, উদারীকরণ ও ফ্রি-মার্কেট। নেহেরুর ভারতের দ্বিতীয় পাঁচসালা পরিকল্পনার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ; বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশের দর্শন ছিল : অনুন্নত দেশে প্রবৃদ্ধি প্রক্রিয়া শুরু করার জন্যই রাষ্ট্রের তরফে সজোরে ধাক্কা দেওয়া দরকার-বিশেষত যখন প্রাইভেট সেক্টর অবিকশিত পর্যায়ে রয়েছে। ফলে উন্নয়নের জন্য জরুরি ‘আধুনিক’ শিল্প ও সেবা খাত বিকাশে ‘পাবলিক ইনভেস্টম্যান্ট প্ল্যানিং’ একটি অত্যাবশ্যকীয় অনুষঙ্গ হয়ে পড়ে। পুরোনো ধারার পরিকল্পনা প্রক্রিয়া একটি ‘মিশ্র-অর্থনীতির’ কাঠামোকে আশ্রয় করেই গড়ে উঠেছিল। সেখানে যার যা ভূমিকা নির্দিষ্ট করা ছিল। সময়ের সাথে সাথে প্রাইভেট সেক্টরের বিনিয়োগের সীমা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। প্রাইভেট সেক্টরের বিকাশের সাথে সংগতি রেখে পাঁচসালা পরিকল্পনার ক্রমান্বয়ে ঝৌঁক-বদল হচ্ছিল। কিন্তু আশি-নব্বইয়ের দশকের কাঠামোগত সমন্বয় কর্মসূচির চাপে ও দাতা সংস্থাসমূহের অলঙ্ঘনীয় শর্তাবলির কারণে গোটা পরিকল্পনা প্রক্রিয়া কি বাংলাদেশে, কি তৃতীয় বিশ্বের অন্যান্য দেশে প্রবল সংকটের মুখে পড়ে। 

একপর্যায়ে ‘প্ল্যানিং’ শব্দটিই সরকারি উন্নয়ন ডিসকোর্স থেকে ঝরে পড়ার উপক্রম হয়। ১৯৯৬-২০০০ পর্বে এটির স্বল্পকালীন পূনরুদ্ধারের ব্যতিক্রমী চেষ্টা বাদ দিলে পাঁচসালা পরিকল্পনাকেন্দ্রিক ভাবনার কোনো দৃষ্টান্ত বা খ--প্রয়াসও দেখা যায়নি ২০০০-এর দশকে। ‘পরিকল্পনার’ স্থান নেয় ‘পিআরএসপি’ প্রভার্টি রিডাকশন স্ট্র্যাটেজি পেপার শীর্ষক কৌশলপত্র। প্রবৃদ্ধি ও মার্কেট এই দুটো শব্দ উন্নয়নের বীজমন্ত্র হয়ে দাঁড়ায়। ‘এক বিশ্ব, এক মতাদর্শ, এক নীতি’ এই অবস্থান অবশ্য ভেঙে পড়ে ২০০৭-০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের কারণে। সংকট-উত্তরকালে জন্ম নিতে থাকে দেশে দেশে ইকোনমিক ন্যাশনালিজম। সংরক্ষণবাদের ছায়া ঘনীভূত হয়; ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের কার্যাবলি কার্যত স্থবির হয়ে যায়। রাষ্ট্রব্যবস্থাতেও দেখা দিতে থাকে অনুদার দৃষ্টিভঙ্গি, ফরিদ জাকারিয়ার ভাষায়, ‘ইললিবারেল ডেমোক্রেসি’। এরই পটভূমিতে এক-এগারোর সংকট এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন। বাংলাদেশে ‘নিউ ন্যাশনাল প্ল্যানিং’ প্রবর্তনের এই হচ্ছে সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত। এবং এরই একপর্যায়ে ড. শামসুল আলমের প্রবেশ।

তবে এ দেশ আর কারো মতো নয়। এ দেশের ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা দলিল এবং প্রাসঙ্গিক অর্থনৈতিক সূচক পর্যালোচনা করলে দেখা যায় কতকগুলো ব্যাতিক্রমী বৈশিষ্ট্য। প্রথমত, এটি রাষ্ট্র ও ব্যক্তি খাত, বিনিয়োগ পরিকল্পনা ও মার্কেট মেথড অব ম্যানেজমেন্ট, সামষ্টিক সামাজিক স্বার্থ ও ব্যক্তি-পর্যায়ের প্রণোদনা এ দুই বিপ্রতীপের মধ্যে গোড়া থেকেই একটি নমনীয় ‘ভারসাম্যতা’ রক্ষার চেষ্টা করেছে। বাস্তবায়নের নিরিখে কখনো কখনো পাল্লা একদিকে বেশি ঝুঁকে পড়েছে বটে, কিন্তু মূল অভিপ্রায়টি স্পষ্ট। এখানে হায়েক-ফ্রিডম্যানের পন্থা অনুসরণ করে বাংলাদেশের রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভূমিকাকে ‘মিনিমালিস্ট স্টেটের’ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়নি, বরং বছরে বছরে পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট জিডিপি অনুপাত বেড়েছে। আবার, রাষ্ট্রনির্ভর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাতেও অযৌক্তিকভাবে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়নি। রাষ্ট্র এখানে ব্যক্তি খাতের বিকাশকে নানা উপায়ে সমর্থন করেছে। সেটা কি অসংগঠিত ব্যক্তি খাত তথা কৃষি খাতে হোক, অথবা সংগঠিত ব্যক্তি খাত তথা শিল্প ও রপ্তানি খাতে হোক। পিআরএসপির একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন-মিডিয়াম-টার্ম এক্সপেন্ডিচার ফ্রেমওয়ার্ক এটি পাঁচসালা পরিকল্পনার মধ্যে অক্ষুণœ রাখা হয়েছে। এই বাস্তবসম্মত আ্যাপ্রোচ উন্নয়নের ক্ষেত্রে ‘প্র্যাকটিক্যাল’ ফিলোসফির অনুসরণ এ দেশের পরিকল্পনা প্রক্রিয়ার একটি লক্ষণীয় দিক।

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নিউ ন্যাশনাল প্ল্যানিংয়ের পুনরুজ্জীবনের পেছনে রয়েছে একটি গর্বিত ও উ”চাকাক্সক্ষাচালিত অনৈতিক জাতীয়তাবাদের ক্রিয়াশীলতা। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে অন্তর্ভূক্তি; স্বল্পোন্নত এলডিসি ক্লাব থেকে উন্নয়নশীল দেশের মূল স্রোতোধারায় মিশে যাওয়া; ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে প্রথম বিশ্বের দেশ হওয়ার স্বপ্ন মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন গর্বিত জাতির গভীর উ”চাকাক্সক্ষার একেকটি মাইলস্টোন। অর্থনৈতিক নিরাশাবাদের বিপরীতে একটি প্রবল ইতিবাচক জাতীয় জাগরণের অভিপ্রায় মিশেছে এই নতুন জাতীয় পরিকল্পনার সাথে। আধুনিক অর্থনৈতিক মনস্তত্ত্ব  বলেছে যে, উচ্চাশা একজন গরিবকে দারিদ্র্য দশা থেকে মুক্ত করতে সাহায্য করে। এটি তেমনি একটি বিষাদগ্রস্ত জাতিকেও মেন্টাল ডিপ্রেশন থেকে মুক্ত করে তার ভবিষ্যতের ইকোনমিক রিটার্নপ্রাপ্তির সম্ভাবনাকে (পারসিভড রেট অব রিটার্ন) বাড়িয়ে দিতে পারে এবং সেই সূত্রে তাকে কর্মোদ্যমে বা বিনিয়োগের ধারায় ফিরিয়ে আনতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। সে লক্ষ্যে পাঁচসালা পরিকল্পনার পাশাপাশি প্রণীত ‘প্রেক্ষিত পরিকল্পনা’-তা যতই অনিশ্চয়তার ঘেরাটোপে ঢাকা হোক না কেন এখন কোভিড-পরবর্তী পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ মনোযোগের দাবি রাখে। ড. শামসুল আলম সংগত কারণেই অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে শুধু মধ্যমেয়াদি ফ্রেমওয়ার্ক নয়, দীর্ঘমেয়াদি ফ্রেমওয়ার্কের উপস্থিতি থাকা জরুরি বলে মনে করেছেন।

পুরোনো পরিকল্পনা, পিআরএসপি বা নতুন পরিকল্পনা সবে প্রক্রিয়ারই মূলে রয়েছে দুটি পূর্বাপর সমস্যা। একটি হচ্ছে, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পারঙ্গমতার ঘাটতি। আরেকটি হচ্ছে, এ পরিকল্পনাকে বাস্তবানুগ করা এবং সেটি করার ক্ষেত্রে ‘পাবলিক রিজন’ বা জনগণের সক্রিয় ও ঋদ্ধ তর্ক-বিতর্ক ও অংশগ্রহণকে উৎসাহ দেওয়া বা তাকে নিশ্চিত করা। এই দুটো দিকেই আমরা পিছিয়ে আছি। বাস্তবায়নের একটি জাজ¦ল্যমান ব্যর্থতার সূচক হচ্ছে স্বাস্থ্য খাত। কোভিডের বছরেও এ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের কেবল ৪৯ শতাংশ খরচ করা গেছে; স্বাস্থ্য গবেষণা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের এক টাকাও খরচ করা যায়নি। আমরা জিডিপির শতাংশ হিসেবে ফি-বছরে মাত্র ০.৭ শতাংশ স্বাস্থ্য খরচ বাবদ ব্যয় করি। অথচ অষ্টম পাঁচসালা পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, এর অন্তিম বছরে একে নিয়ে যাওয়া হবে জিডিপির ২.৫ শতাংশে। সোস্যাল সেফটি নেটের বদলে সোস্যাল প্রটেকশনের মতো নতুন শব্দ এসেছে পরিকল্পনা দলিলে। কিন্তু ‘মাল্টিপল ইন্ডিকেটরস ক্লাস্টার সার্ভে ২০১৮’ অনুযায়ী সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দের প্রায় অর্ধেকটা চলে যাচ্ছে অ-দরিদ্রের কাছে। বাস্তবায়নের ঘাটতি অন্যান্য খাত ও মন্ত্রণালয়গুলোতে দৃশ্যমান। এ নিয়ে ড. শামসুল আলমকে দায়ী করা চলে না।

কোভিডের বছরে প্রণীত অষ্টম পাঁচসালা পরিকল্পনায় রিয়ালিজমের পরিচয় দেওয়া হয়নি বার্ষিক ৭-সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার প্রক্ষেপণ করে। ডিসেম্বর ২০২০ সালে যখন দলিলটি ছাপা হয় তখনই দেখা যাচ্ছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৫ বা ৬ শতাংশ অতিক্রম করবে না। অথচ কোভিড আরও দুই-তিন বছর থেকে যাবে দেশে-বিদেশে। মনে হচ্ছে নয়া অর্থনৈতিক পরিকল্পনা অনেক সময়ে নিছক ‘পারফরম্যান্স অ্যাক্টে’ পরিণত হয়। এ ছাড়া রয়েছে জিডিপির হিসাব নিয়ে বিতর্ক, চোখে পড়ে সামাজিক উন্নয়ন সূচকে অগ্রগতিকে বাড়িয়ে দেখার প্রবণতা। আজকের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যর্থতাকে সরাসরি স্বীকার করে নিয়ে আগামীতে আরও ভালো করার জন্য বলিষ্ঠ অঙ্গীকার হলেই বরং সমীচীন হতো। বৈষম্য নিয়ে আলোচনা আরও গভীর ও বস্তুনিষ্ঠ হতে পারত পরিকল্পনা দলিলে। এটাও একটা বিচ্যুতির দিক। এদিকটি সেভাবে আলোচনা না করলে এসডিজির ১০ নং লক্ষ্যমাত্রা যেটি বৈষম্য হ্রাসের দিকে আমাদের ধাবিত করে-সেটি আমরা বাস্তবায়ন করব কীভাবে?

ড. শামসুল আলমের একটি সহজ কিন্তু সুদূরপ্রসারী উত্তর আমাকে দিয়েছেন। ‘পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অনেক ফ্যাক্টরের উপরে নির্ভর করে, কিন্তু এর জন্যে চাই মানুষের অংশগ্রহণ-নাগরিক সমাজের চাপ। সিভিল সোসাইটি পরিকল্পপনা দলিলকে উদ্ধৃত করে এর বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে। যেমন দলিলটি বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে বলেছে, কিন্তু বাস্তবে যদি তা না হয়, তবে প্ল্যানকে উদ্ধৃতি দিয়েই রাষ্ট্রকে জবাবদিহিতার সম্মুখীন করতে পারে।’ সংবিধানের ‘মৌলিক নীতিমালা’ ও ‘মৌলিক অধিকারের’ ধারাগুলো যেমন আমাদের উৎসাহিত করে সেসব বাস্তবায়নে রাষ্ট্রের প্রতষ্ঠানসমূহকে আরও সক্রিয় করার ক্ষেত্রে। কার্যত তিনি এখানে পরিকল্পনা দলিলটিকে শুধু অর্থনৈতিক বিষয়-বিশ্লেণের ‘সংশ্লেষণ’ হিসেবেই দেখছেন না; একে কাঠামোগত সামাজিক পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবেও দেখছেন। এই দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের সকলের মনোযোগ দাবি করবে। ড. শামসুল আলমকে একসময় আমার সপ্তরথী পরিবেষ্টিত অভিমন্যুর মতো মনে হতো একা ও অসহায় সংগ্রামী। কিন্তুর তিনি একা নন। বাংলাদেশের এই সাম্প্রতিক উত্থান-পর্বের পেছনে ‘সিস্টেমের’ ভেতরে ও বাইরে নানা বয়সের ও খাতের নাম-না-জানা অনেক মানুষ তাঁর মতো নীরবে কাজ করে গেছেন এবং যাচ্ছেন। আমি তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই এবং এক দীর্ঘ সক্রিয় জীবন কামনা করি। 

লেখক: বিনায়ক সেন, অর্থনীতিবিদ ও ডিরেক্টর জেনারেল, বিআইডিএস।


Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.