× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

প্রাচীন পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সাপ

সংবাদ সারাবেলা ডেস্ক

৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০২:৫৮ এএম

আজ থেকে প্রায় ৬ কোটি বছর পূর্বে কলম্বিয়ার জলাভূমিতে ছিল বিশালাকৃতির সরীসৃপের বাস। বাস্তুতন্ত্রে ত্রাস সৃষ্টি করা এই সরীসৃপ হলো মূলত অতিকায় বৃহৎ এক সাপ। প্রাণীবিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন টাইটানোবোয়া। ২০০৯ সালে সর্বপ্রথম যখন টাইটানোবোয়ার জীবাশ্মের সন্ধান পাওয়ার পর ধারণা করা হয়েছিল সরীসৃপটি ১২.৮ মিটার (৪২ ফুট) লম্বা। এই আবিষ্কারের ফলে ভেঙে যায় পূর্বে আবিষ্কৃত সর্বোচ্চ লম্বা সাপ গিগানটোফিসের রেকর্ড। টাইটানোবোয়ার আগে গিগানটোফিসকে পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বোচ্চ লম্বা সাপ (৩৫ ফুট) হিসেবে বিবেচনা করা হতো।

স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশন নির্মিত ‘টাইটানোবোয়া: মনস্টার স্নেক’ ডকুমেন্টারিতে বলা হয়েছে, টাইটানোবোয়ার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪.৬ মিটারের (৪৮ ফুট) কাছাকাছি। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথসোনিয়ান জাদুঘরে টাইটানোবোয়ার একটি রেপ্লিকা প্রদর্শন করা হয়েছে। প্রদর্শিত রেপ্লিকায় বিশাল আকৃতি দেখে যারপরনাই অবাক হতে হয়।

৬ কোটি বছর পূর্বে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা আজকের তাপমাত্রার চেয়ে বেশি ছিল বিধায় তখন টাইটানোবোয়ার দৈর্ঘ্যও ছিল সাধারণ অ্যানাকোন্ডা বা অজগর সাপের চেয়ে বেশি। একেকটা টাইটানোবোয়া আজকের যুগের অ্যানাকোন্ডার চেয়ে আকারে ১০-১২ গুণ বড় হতো।বর্তমানকালে প্রাপ্ত সাপেদের মধ্যে দৈর্ঘ্যে সবচেয়ে লম্বা সাপ হলো গ্রিন অ্যানাকোন্ডা  ‬যা ৩০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।

সাপেদের ক্ষেত্রে সাধারণত দেখা যায়, পুরুষ সাপের চেয়ে স্ত্রী সাপ আকারে বড় হয়। যেহেতু ডাইনোসরের মতো টাইটানোবোয়ার জীবাশ্মের এত আধিক্য নেই, তাই এই সরীসৃপের পুরুষ-স্ত্রীর দৈর্ঘ্য নিয়ে বিজ্ঞানীরা আপাতত কিছু বলতে রাজি নন। ধরে নেওয়া যেতে পারে, টাইটানোবোয়ার ক্ষেত্রেও পুরুষদের চেয়ে স্ত্রী সাপ আকারে বড় হতো বেশি।

টাইটানোবোয়ার জীবাশ্ম পাওয়া গেছে শুধু দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়ার সেরেহন নামক এক কয়লাখনির অঞ্চলে। পৃথিবীতে টাইটানোবোয়াদের অস্তিত্ব ছিল প্রাগৈতিহাসিক সিলান্ডিয়ান অধিযুগে। ভূতাত্ত্বিক সময়রেখা বিবেচনা করলে সে সময়কাল হচ্ছে, আজ থেকে প্রায় ৬০ মিলিয়ন (৬ কোটি) বছর পূর্বে এবং ক্রিটেসিয়াস-টারশিয়ারি গণবিলুপ্তির ৫ মিলিয়ন বছর পর। অর্থাৎ, সেসময় মেসোজয়িক যুগের সমাপ্তি ঘটেছিল বলে পৃথিবীতে ডাইনোসরের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। ওই সময়ে টাইটানোবোয়া রেইনফরেস্ট অঞ্চলে বসবাস করত।

টাইটানোবোয়া না ছিল বিষধর, না ছিল বিষাক্ত। যেসকল সাপের বিষ নেই, শিকারকে কাবু করার জন্য তাদের সাধারণ পদ্ধতি হলো, শিকারকে শক্তভাবে পেঁচিয়ে দমবন্ধ করে মেরে ফেলা। টাইটানোবোয়া তার শিকারকে পেশি দ্বারা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করত, যাতে শিকারের ফুসফুস বায়ু থেকে কোনো অক্সিজেন গ্রহণ করতে না পারে। তীব্র অক্সিজেন সংকটে ভুগা শিকারটিকে তখন জীবিত অথবা মৃত পেটে চালান করে দিত সাপটি। এখনকার অজগর বা অ্যানাকোন্ডার মতো তারা শিকার ভক্ষণের জন্য তাদের মুখকে শরীরের তুলনায় দশগুণ বেশি প্রসারিত করতে পারত। যেহেতু তাদের বিষ ঢালার ব্যবস্থা ছিল না, তাই সূক্ষ্ম দাঁতের বদলে তাদের উপস্থিত থাকত শক্ত ধারালো দাঁত।

আংশিক মাথার খুলি এবং চোয়ালের হাড় থেকে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেছেন, টাইটানোবোয়ার মুখের মধ্যে সারি সারি বাঁকানো দাঁত থাকতে পারে। শিকারকে হত্যা করতে মাত্র কয়েক মিনিট সময় লাগলেও শিকার খাওয়ার সময়টা যথেষ্ট দীর্ঘ হত। টাইটানোবোয়ার মাথার গঠন অন্যান্য সংকোচন-প্রসারণক্ষম অ্যানাকোন্ডার মতোই ছিল। তাদের নীচের চোয়াল মাথার খুলির পিছনের দিকে প্রসারিত হতো, যা তাদের মুখ অধিক পরিসরে নড়াচড়া করতে সাহায্য করত।

স্থলভাগের চেয়ে জলভাগে টাইটানোবোয়া ছিল কয়েকগুণ বেশি স্বতঃস্ফূর্ত। জলে টাইটানোবোয়া ছিল এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। জলে শরীরের ভার বহন করার সুবিধা পাওয়ায় সে ছুটতে পারত কয়েকগুণ দ্রুত গতিতে, এবং শক্তিও তুলনামূলক কম ব্যয় হতো। জলে থাকার আরেকটি সুবিধা ছিল, সে তার শরীরের অনেকখানি অংশ পানিতে ডুবিয়ে রেখে শিকারের চোখে ধুলো দিতে পারত। এছাড়াও টাইটানোবোয়া জলের নিচে অধিক সময় শ্বাস ধরে রেখে জলের নিচ থেকে শিকারকে আক্রমণ করতে পারত।




Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.