× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

স্বগুণে মহীয়ান একজন অনন্য ব্যক্তিত্ব

০৪ ডিসেম্বর ২০২১, ০৪:৫১ এএম । আপডেটঃ ০৪ ডিসেম্বর ২০২১, ০৫:০৬ এএম

প্রফেসর ড. মো. গিয়াসউদ্দীন মিয়া: দেশ ও মানবকল্যাণে অনলস ও নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাওয়ার মাধ্যমে মানুষ তার স্বীয় মহিমার বহিঃপ্রকাশ ঘটায় ও চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে। ত্যাগের মাধ্যমেই মানুষ ধরণির বুকে অমরত্ব লাভ করে। ত্যাগই আলোকিত মানুষের চরিত্রের সর্বোচ্চ আদর্শ। একমাত্র ত্যাগের মাধ্যমেই মানবজীবনকে সার্থক করা সম্ভব। মানুষ যদি অন্যের কল্যাণে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে উজাড় করে দেয়, তাতেই তাঁর চরিত্রে মহত্ত্বের প্রকাশ ঘটে। আর এমনই একজন সজ্জন ত্যাগী ব্যক্তি হলেন প্রফেসর ড. শামসুল আলম। তিনি সুদীর্ঘ সময় তাঁর প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের মাঝে জ্ঞানের আলো বিতরণের পাশাপাশি কৃষি অর্থনীতিতে এক নয়া দিগন্তের সূচনা করেছেন; পরিকল্পনার সফলতাকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়।

প্রফেসর ড. শামসুল আলম একজন পরিচ্ছন্ন বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী সজ্জন ব্যক্তি একাধারে তিনি একজন শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ, লেখক ও গবেষক এবং সে সঙ্গে একজন অত্যন্ত সফল পরিকল্পনাবিদ ও প্রশাসক। কর্মজীবনে তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ৩৫ বছর (১৯৭৪-২০০৯) অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে অধ্যাপনা করেছেন। কর্মরত অবস্থায় ১৯৮৩ সালে ড. আলম সফলতার সঙ্গে ব্যাংককের থাম্মাসাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ও ১৯৯১ সালে ইংল্যান্ডের নিউ ক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। অধ্যাপনা জীবনে তিনি জার্মানির হুমবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়, বেলজিয়ামের ঘেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং নেদারল্যান্ডসের ভাগিনিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে ইকোনমিকস স্কুলে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডজাস্কট ফ্যাকাল্টি হিসেবে কৃষি অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষকতায় যুক্ত ছিলেন। এছাড়া ২০০২ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচিতে বাংলাদেশি কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করেন। তাছাড়া ইউএনডিপি, বাংলাদেশে সিনিয়র স্কেলে পূর্ণকালীন জাতীয় কনসালট্যান্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। 

পঁয়ত্রিশ বছরের অধ্যাপনার অভিজ্ঞতা নিয়ে ড. শামসুল আলম ২০০৯ সালের ১ জুলাই প্রেষণে বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনে সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। তাঁর কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ মহামান্য রাষ্ট্রপতির ১০% কোটায় ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ক্যাডার সার্ভিসের বাইরে থেকে তাঁকে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় নিয়োগ প্রদান করা হয়। তাঁর প্রতিভার সদ্ব্যবহার করার জন্য ২০১৮ সালে ১ জুলাই সরকার পঞ্চমবারের মতো পুনরায় তাকে তিন বছরের জন্য নিয়োগ প্রদান করে। ২০০৯ থেকে ২০২১ সাল এ দীর্ঘ সময় কর্মরত অবস্থায় বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনকে তিনি একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যান। রূপকল্প ২০২১-এর আলোকে প্রণীত বাংলাদেশের প্রথম দীর্ঘমেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২০২১), যষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১১-২০১৫), সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১৬-২০২০) প্রণীত ও বাস্তবায়িত হয় ড. আলমের হাত ধরে। সম্প্রতি অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাও (২০২০-২০২৫) তাঁর নেতৃত্বে প্রণীত হয় এবং জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক) কর্তৃক অনুমোদিত হয়। তিনি একজন বিরল পরিকল্পনাবিদ যার নেতৃত্বে পরপর তিনটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণীত হয়ছে। তিনি ‘বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন কৌশলপত্র’ (২০১১-২০২১) ও ‘সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র’ (২০১৫-২০২৫) নীতিমালা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাছাড়া বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি শতবর্ষী বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ তাঁর নেতৃত্বে প্রণীত হয়েছে (২০১৮), যা বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনে দীর্ঘ সময় রুটিন কাজের বাইরেও তাঁর তত্ত্বাবধানে ও সম্পাদনায় শতাধিক মূল্যায়ন প্রতিবেদন এবং বিশেষভাবে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অর্জনবিষয়ক ২৫টি গ্রন্থ রচিত হয়েছে। এছাড়া তিনি অর্থনীতিবিষয়ক ১৪টি গ্রন্থ রচনা করেন, যার মধ্যে গবেষণা ও পাঠ্যপুস্তক অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া তিনি ১৮টি গ্রন্থ সম্পাদনা করেন ও ৫১টি গবেষণা প্রতিবেদন বিভিন্ন বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশ করেন।

কৃষি অর্থনীতিতে অবদানের জন্য ২০২০ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোাচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘একুশে পদক’ প্রদান করে। ড. শামসুল আলম ২০১৮ সালে South Asian Network for Economic Modeling কর্তৃক বাংলাদেশে Economist of Influence Award  অর্জন করেন। কৃষি অর্থনীতি বিষয়ে দক্ষতা ও অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতি ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত ১৬তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলন স্বর্ণপদক, সরকার অনুমোদিত বাংলাদেশ শিক্ষা পর্যবেক্ষণ সোসাইটি ‘বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতিপদক ২০১৮’ এবং শিক্ষকতা ও গবেষণায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই আ্যাসোসিয়েশন একই বছর তাকে সম্মাননা অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে। এছাড়া শিক্ষকতায় সাফল্য ও বিশেষ অবদানের জন্য বিশ্ব শিক্ষক দিবস জাতীয় উদযাপন কমিটি (২০১৮) ড. আলমকে ‘বিশেষ সম্মাননা স্মারক জিনিয়াস অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করেন।

তিনি পরিকল্পনা কমিশনে জাতীয় পরিকল্পনা, গবেষণা ও অতীব গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও তাঁর জীবনের মূল পেশা শিক্ষার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ড. আলম বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট (তৃতীয় মেয়াদে), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট (দ্বিতীয় মেয়াদে), সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট (চতুর্থ মেয়াদে), শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট (তৃতীয় মেয়াদে) এবং পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় রিজেন্টস বোর্ড (চতুর্থ মেয়াদে) দায়িত্ব পালনকালে বিশ্বিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের গভর্নিং বোর্ডের সদস্য হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন।

আমরা অনেক সফল ব্যক্তির গল্প শুনেছি যারা তাদের কর্ম, নিষ্ঠা, সততা ও চেষ্টায় গভীর একগ্রতায় ধীরে ধীরে দেশ ও সমাজের সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী হয়েছেন, তেমনি একজন সফল ব্যক্তি প্রফেসর ড. শামসুল আলম। তিনি বর্তমানে জাতির আর্থসামাজিক রূপান্তরে অভাবনীয় অবদান রেখে চলেছেন।

ড. আলম একজন অত্যন্ত উদ্যমী ও পরিশ্রমী নীতিনিষ্ঠ মানুষ। দেশ ও নিজ কাজের প্রতি কতটা ভালোবাসা এবং মমত্ববোধ থাকলে একজন মানুষ এই করোনাকালীন দুঃসময়ে নিঃস্বার্থ ও বিরামহীনভাবে কাজ করা যায় তা তাঁকে না দেখলে হয়তো জানাই হতো না। করোনা মহামারির এই দুঃসময়েও আমার অনুরোধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরপর তিনটি সিন্ডিকেট সভায় সশরীরে উপস্থিত থেকে তিনি আমাদের কৃতার্থ করেছেন। মানুষকে সম্বোধন করার এক অসাধারণ শক্তি মহান আল্লাহ সোবহানাল্লাহ তায়ালা তাঁকে দিয়েছেন। যিনি একবার তাঁর সাথে কথা বলেছেন, তিনিই শুধু জানেন মানুষকে কী পরিমাণ কাছে টানার ক্ষমতা রয়েছে তাঁর। তিনি এমনই একজন মানুষ যিনি কোনো একটা কাজ একা সুষ্ঠভাবে শেষ করার পরেও বলেন যে আমরা সকলে একত্রে মিলে কাজ করেছি বলেই কাজটি ভালোভাবে শেষ হয়েছে। কখনো তাঁকে নিজের কথা বলে মহত্ত্বের পরিচয় দিতে দেখিনি। অত্যন্ত নিরহংকার, সদালাপী ও স্বল্পভাষী এই মানুষটি সবাইকে আরও ভালো কাজ করার উৎসাহ জোগাতেই ‘আমাদের’ শব্দটি ব্যবহার করেন। আমার কাছে মনে হয়েছে টিম-আপ করার ব্যাপারে ড. আলমের দক্ষতা অতুলনীয়।

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ক্ষণজন্মা এই মানুষটি ভালোবাসেন মানুষের সঙ্গে মিশতে, বিশেষ করে তরুণদের সঙ্গে। তাঁদের মাধ্যমে জাগিয়ে রাখতে চান নিজের স্বপ্নের কথা। তিনি বিশ্বাস করেন, ‘স্বপ্ন ও স্বপ্নবাজরা সবসময় সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে’। কারণ, স্বপ্ন না দেখলে তো তা বাস্তবে সত্যি করা যাবে না। তাঁর মতে, ‘স্বপ্ন দেখতে হবে’। কারণ, স্বপ্নটা চিন্তায় পরিণত হয়। আর চিন্তা মানুষকে কর্মে অনুপ্রাণিত করে। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য ব্যক্তি হিসেবে ড. শামসুল আলমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সরকারের পাশাপাশি একজন মানুষ কীভাবে আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারে তা তিনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। নিবেদিতপ্রাণ এই মানুষটি আর্থসামাজিক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে অনেক জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।


সততার মূর্ত প্রতীক এই ব্যক্তিটি ক্ষমতার খুব কাছাকাছি থেকেও কখনো নিজের অপব্যবহার করেননি। দম্ভ কখনো তাঁকে সামান্যতম আ”ছন্ন করেননি। এমনকি কর্মজীবনের দীর্ঘ এ পথচলায় দুর্নীতির বিন্দুমাত্র আঁচড় লাগেনি তাঁর গায়ে। এত সমৃদ্ধময় জীবনগল্প তবুও তাতে আত্মঅহমিকার লেশমাত্র নেই। বিনয়ী মৃদুভাষী, সততা, আদর্শিক দৃঢ়তা আর বিচক্ষণতার মধ্য দিয়েই তিনি সকলের সততার মূর্ত প্রতীক হিসেবে পরিচিত। তিনি প্রকৃত অর্থেই নবীনদের কাছে রোল মডেল। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সিমাগো র‌্যাংকিংয়ে দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব অর্জন করেছে। এই অর্জনের পেছনেও রয়েছে ড. শামসুল আলমের অসামান্য অবদান। বিশ^বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই তাঁর সদয় সহযোগিতা বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় তাঁর যুক্তিপূর্ণ সুচিন্তিত মতামত ও পরামর্শ আমাদের মুগ্ধ করেছে। তিনি আমাদের অনুপ্রেরণা। তাঁর কর্মই তাকে আমাদের মাঝে ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে জীবন্ত করে রাখবে। আমি তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই এবং পরিবারসহ তাঁর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি। 


লেখক: প্রফেসর ড. মো. গিয়াসউদ্দীন মিয়া, ভাইস চ্যান্সেলর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর।


Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.