× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

নোনা জলের মিষ্টি গুড়

মোঃ মোছাদ্দেক হাওলাদার,বরিশাল

২২ জানুয়ারি ২০২৩, ০৩:০৯ এএম

উপকূলীয় এলাকায় গোলপাতা শুধুই গরীবের মাথা গোজার ঠাঁই করে দিচ্ছে এনমটা নয়, বরং উপকূলীয় পরিবেশ রক্ষায় গোলপাতার আছে বিশেষ অবদান। এদেশের উপকূলের জীবন ও জনপদে গোলগাছ জন্ম নিচ্ছে একটি অর্থকারী আর্শীবাদ হিসেবে। নোনাজলে জন্ম নেওয়ার ফলে এর সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নোনা। অথচ এর ডগা থেকে বেরিয়ে আসছে সুস্বাদু মিষ্টি রস। সেই রস দিয়ে তৈরি হচ্ছে গুড়। আর সুস্বাদু এই গুড়ের চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। মুখে নিলেই অভিজ্ঞরা বুঝতে পারেন এর স্বাদের ভিন্নতা। 

বঙ্গোপসাগরে তীরঘেঁষা পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা ও বরগুনার তালতলী উপজেলা। যেখানে খাল, নদ-নদীতে নোনা পানির আধিক্য বেশি। প্রকৃতির নিয়ম ছাড়া এখানে জীববৈচিত্র্যে তেমন একটা পরিবর্তন ঘটে না। এখানাকার নদী ও খালের তীর, এমনকী কৃষিজমির অভ্যন্তরের খালেও বছরের পর বছর ধরে জন্মে চলেছে গোলপাতা গাছ। এখানে গোলপাতার চাষও করা হয়। ফলে এসব এলাকার কয়েক হাজার পরিবার বছরের পর বছর ধরে গোলের গুড় তৈরি করছে। যা খেলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা যেমন থাকে না, তেমনি রোগ প্রতিরোধের সঙ্গে সঙ্গে এই গুড় বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। তবে বিষয়টি জানে না দেশের অধিকাংশ মানুষ। 

ইতিমধ্যে উপকূলীয় এলাকায় উৎপাদিত সুস্বাদু এই গুড়ের ব্যাপক চাহিদা থাকায় পাঠানো হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। এতে গ্রামীণ অর্থনীতির মোড় ঘুরে যাচ্ছে এই গ্রামটির। তবে এটি এখনো বাণিজ্যিক ভাবে রপ্তানি করা হয়নি। গাছিরা চাচ্ছেন মানসম্মত প্রশিক্ষণ ও গুড় সরকারিভাবে বাজারজাতকরণ করার সহযোগিতা

সরেজমিনে দেখাযায়, শীত মৌসুমের শুরুতেই গোল গাছিদের কর্মযজ্ঞে বদলে যায় উপকূলীয় উপজেলা দুটির চিত্র। ভোর থেকে সংগ্রহ চলে গোলের রস। পরে শুরু হয় গুড় তৈরির কর্মযজ্ঞ। শীত মৌসুমের ৪ মাস কর্মসংস্থান হয় প্রায় কয়েক হাজার গাছির ও তাদের স্ত্রীদের। এতেই জীবিকা চলছে এসব মানুষের। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, বরগুনার তলতলীতে ৯০ হেক্টর জমিতে গোল গাছের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। এসব গোল গাছের বাহর থেকে সংগৃহীত রস জ্বালিয়ে প্রতি শীতে প্রায় ১০ হাজার টনেরও বেশি গুড় উৎপাদিত হয়। সবচেয়ে বেশি গাছ আছে উপজেলার বেহেলা গ্রামে। গ্রামটিতে গোল গাছের সংখ্যা ১৫ হাজার। এরপর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গাছ রয়েছে গেন্ডামারা গ্রামে। এটিসহ উপজেলার অন্যান্য কয়েকটি গ্রাম মিলিয়ে রয়েছে হাজার পাঁচেক গাছ।

স্থানীয়ভাবে গোলের বাগানকে বলা হয় ‘বাহর’। বেহেলার গোল বাহরে কাজ করে প্রায় ৫০০টি গোল চাষি। এই গ্রামে গোলের বাহর রয়েছে ২ হাজার প্রায়। শীতে এসব গাছ হয়ে ওঠে গাছিদের কর্মসংস্থানের উৎস। একজন গাছি প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০টি গাছের রস আহরণ করতে পারেন। বর্তমানে রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন অন্তত তিনশ চাষি।

এদিকে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ, মিঠাগঞ্জ, চাকমাইয়া, টিয়াখালীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বেড়িবাঁধের খাদায় কিংবা খালের তীরে গোলবহর রয়েছে। এতে কমপক্ষে ৭০ হাজার গোল গাছ রয়েছে। এসব গোল গাছের বাহর থেকে সংগৃহীত রস জ্বালিয়ে প্রতি শীতে প্রায় ৪০ হাজার টনেরও বেশি গুড় উৎপাদিত হয়। ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ সালের দিকে বন বিভাগের উদ্যোগে প্রথমে সুন্দরবন থেকে গোলবহরের বীজ (গাবনা) সংগ্রহ করে রোপণ করে বাগান তৈরি করা হয়। এরপর থেকে স্থানীয়রাও নিজ উদ্যোগে কৃষি জমির অভ্যন্তরের খালের তীরে গাবনা রোপণ করে বাগান তৈরি করেন। কলাপাড়াসহ উপকূলীয় এলাকায় গোলগাছের গুড়ের চাহিদা রয়েছে অনেক। 

জানা যায়, শীত মৌসুমকে সামনে রেখে গাছিরা নভেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারির শেষ সময় পর্যন্ত গোল গাছগুলো কেটে রস সংগ্রহের উপযোগী থাকে। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গোল গাছের রস ঝরা শুরু হলে তারা খরচা কমানোর জন্য প্লাস্টিকের পাত্র বসিয়ে সেই রস সংগ্রহ করেন। শীত যত তীব্র হয় এই রসের চাহিদাও তত বেড়ে যায়। শীতকালীন এ কয়েক মাসে গোল রস ও গুড় বিক্রি করে লাখ টাকাও আয় করেন তারা। গোলোর এ রস প্রতি কলস ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ও গুড় প্রতি কেজি ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। এক কলস রস দিয়ে ৩ কেজি গুড় তৈরি হয়। এজন্যই এক কলস রস ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বিক্রি করা হয়।

কলাপাড়ার গাছি প্রদিপ কুমার বলেন, আমার ৩০০ গাছ আছে এগুলো নিজেই কেটে রস সংগ্রহ করে তারপর গুড় তৈরি করে গ্রামে বিক্রি করি আছে। আমি পরিষ্কার পরিছন্ন ভাবে গুড় তৈরি করাতে শীতকালীন এ সময়ে প্রচুর অর্ডার পাই। প্রতি কলস রস ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর গুড় বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা করে। আমার যে ৩০০ গাছ থেকে প্রায় ৮ কলস রস হয় এতে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার টাকার গুড় আসে। পুরো শীতকালীন মৌসুমে তিন থেকে চার লাখ টাকার গুড় বিক্রি হবে বলেও তিনি জানান। 

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক ডা.কামরুজ্জামান বলেন,‘আমি গোলপাতার গুড় খেয়েছি। এটা বেশ সুস্বাদু। গোলগাছের গুড় ও রসে নানা গুণ আছে। সরকারি উদ্যোগে নোনা অধ্যুষিত দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নদীর তীর ও খালের চরে গোলগাছের বাগান তৈরি করা হলে প্রচুর রাজস্ব আয় হতো।’




Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.