‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’, ‘কোন মেস্তরি নাও বানাইছ’, তার এরকম অসংখ্য জারি সারি গান আগে গ্রামে জনপ্রিয়তা পেয়ে থাকলেও এখন আর কোন অনুষ্ঠানে তা শুনা যায়না এবং সময়ের বিবর্তনে গ্রামবাংলায় আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার বিবরে হারিয়ে যাওয়া সনাতন সংস্কৃতি ।
সময়ের বিবর্তনে গ্রামবাংলায় আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার বিবরে হারিয়ে যাওয়া সনাতন সংস্কৃতির স্মৃতিজাগানিয়া আবহ গীতিকবির বাণীতে বিমূর্ত হয়ে উঠেছে। অতীতের দিনগুলোতে আনন্দ প্রকাশের যেসব উৎসব উপলক্ষ উপকরণ ছিল, তা ফিরে পাওয়ার আশা ও আকাঙ্ক্ষা যেমন মেলে ধরা হয়েছে, তেমনি বিদেশী বেসাতিরা বাংলার বন্দরে ভিড়ে সমৃদ্ধির অনেক কিছুই লোপাট করতে আবার আসতে পারে এমন ইঙ্গিতও রয়েছে এখানে।
অতিথি আপ্যায়নেও এসেছে পরিবর্তন। গ্রাম বাংলায় এক সময় বিয়েবাড়ি কিংবা বড় কোনো আয়োজনে অতিথিদের কলা পাতায় খাবার পরিবেশন করা হতো। কিন্তু সময়ের পথ পরিক্রমায় আধুনিকতার ছোঁয়ায় কলা পাতায় খাবার পরিবেশন যেন হারিয়ে গেছে। বরযাত্রীদের সারিবদ্ধভাবে মাটিতে চট বিছিয়ে কলা পাতায় খাবার পরিবেশন করছে কনেপক্ষ। এ দৃশ্য এখন আর চোখেই পড়ে না।
আগে বড় বড় অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত অতিথিদের আপ্যায়ন করা হতো মাটিতে চাটাই পেতে কলাপাতায়। তারপর এল মাটির সানকি বা বাসন। এরপর এল চীনামাটি, কাচ, স্টিলের থালা-বাসন। অতিথিদের এখন চেয়ার-টেবিলে খাবার পরিবেশন করা হয়। খাবারের পর আগের মতো সেই মিষ্টান্নের সমাহার চোখেই পড়ে না। বহুজাতিক কোম্পানির বিভিন্ন পানীয়, যেমন কোকা-কোলা, ফান্টা, মিরিন্ডা, সেভেনআপ, পেপসি ইত্যাদি খাবারের পর পরিবেশন করা হয়। তাছাড়া নগর সংস্কৃতির ঢেউ গ্রামীণ জীবনেও লাগতে শুরু করেছে। ফলে অতিথি আপ্যায়নে ব্যবহূত হচ্ছে বিস্কুট, চানাচুর, নুডলস, চা ইত্যাদি। অথচ কী স্বকীয়তাই না ছিল আমাদের গ্রামীণ তথা কৃষক সমাজের খাদ্য সংস্কৃতিতে।
নব্বই বষসের বৃদ্ধ আবুল কালাম সাথে কথা বলে তিনি জানান, আমরা যে পরিবারে বাস করছি সে পরিবারে সাধারণ কিছু কৃষ্টি কালচার থাকে যা ঐ পরিবারের সংস্কৃতি। এভাবে সমাজ অঞ্চল, রাষ্ট্রে, ধর্মে কর্মে এবং জাতিভেদে সংস্কৃতির ভিন্নতা দেখা যায়। সংস্কৃতির বিবর্তন হচ্ছে বিশেষ করে গ্রামীণ সংস্কৃতির। সংস্কৃতি হচ্ছে বহতা নদীর মতো। নদী যেমন গতিপথ বদলায় সংস্কৃতিও তার গতিপথ বদলায়। আদি ও অকৃত্রিম সংস্কৃতি বলতে কিছু নেই।
মোঃ ফয়সাল, আরমান, ইমন, ফারুক, জাকির হোসেন, ইয়াছিনসহ কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা জানান, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃতির ও পরিবর্তন সাধিত হয়। পৃথিবীর সব জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতিই সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে। বাঙালির গ্রামীণ সংস্কৃতিও সেই পরিবর্তনের বাইরে নয়। শত বছর আগের বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে আজকের বাঙালি সংস্কৃতির বহু অমিল খুঁজে পাওয়া যাবে। গ্রামীণ সংস্কৃতি গ্রামীণ মানুষের ধর্মীয় ও সামাজিক বিশ্বাস ও আচার আচরণ জীবনযাপন প্রণালী চিত্ত বিনোদনের উপায় প্রভৃতির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। আর এক দিনে গড়ে উঠেনি এই সংস্কৃতি। দীর্ঘ সময় ধরে একটু একটু করে এই সংস্কৃতির ধারণা গড়ে উঠেছে। তবে সেই সংস্কৃতি এখন নগর সংস্কৃতি দ্বারা বিপর্যস্ত। নগর সংস্কৃতির চাকচিক্যের কাছে ধীরে ধীরে পরাজয় ঘটেছে গ্রামীণ সংস্কৃতির। এই সংস্কৃতির ধারক যেই মানুষগুলো, অর্থাৎ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে নগর সংস্কৃতি গিয়ে হাজির হচ্ছে। ফলে তারা সহজেই ধারণ করতে পারছেন নগর সংস্কৃতি। এর পেছনে প্রযুক্তির একটা বড় অবদান আছে। কীভাবে গ্রামীণ সংস্কৃতি পরিবর্তনের দিকে হাঁটছে, তার একটা তুলনামূলক আলোচনা করার চেষ্টা করব।
রামগঞ্জ উপজেলা ও বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে কয়েকজনের সাথে কথা বলবে তারা জানান, অতিথি আপ্যায়নে ভাতের সঙ্গে পরিবেশিত হতো দই, পায়েস, ক্ষীর এবং ছানার তৈরি মিষ্টান্ন। কর্পূর মেশানো সুগন্ধি জল পরিবেশনের কথাও জানা যায়। আহারের শেষে পরিবেশন করা হতো সুপারি ও নানা মসলাযুক্ত পান। প্রাচীনকাল থেকেই শুঁটকি বাঙালির জনপ্রিয় খাবার। শামুক, কাঁকড়া, বক, হাঁস, মোরগ, সারস, উট, গরু, শূকর ইত্যাদির মাংস কেউ খেত না। বিভিন্ন তরকারির সঙ্গে টকদই ব্যবহারের প্রচলন তখন থেকেই। ফলের মধ্যে কলা, তাল, আম, কাঁঠাল, বেল, নারিকেল, ইত্যাদি বাঙালির প্রাচীন খাদ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত। আপেল, আঙুর, নাশপাতি, বেদানা ইত্যাদি আসতো বাইরে থেকে। তবে খুবই কম। বড় বড় হোটেল-রেস্তোরাঁয় কাঁকড়া নানাভাবে প্রক্রিয়াজাত করে পরিবেশন করা হচ্ছে। বকের মাংস খাওয়াও বর্তমানে এক ধরনের বিলাসিতা। এখন অতি উচ্চমূল্যে বিক্রি হয় বড় বড় বাইম মাছ। ঝিনুকও উঠে এসেছে খাদ্য তালিকায়। সেদ্ধ করা ঝিনুক সস দিয়ে খাওয়ার স্বাদই আলাদা! এসেছে হালিম, কাবাব আরো কত কিছু।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh