× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

তালায় ইটভাটার দাপটে বিলুপ্তির পথে খেজুর গাছ

এসএম বাচ্চু, তালা (সাতক্ষীরা)

২৬ নভেম্বর ২০২২, ০৫:০০ এএম

প্রকৃতির বৈচিত্র্যতায় ফোঁটায় ফোঁটায় শিশির বিন্দু গায়ে জড়িয়ে এসেছে শীত। সকালের শিশির ভেজা ঘাস আর ঘন কুয়াশায় প্রস্তুত হচ্ছে প্রকৃতি। সেই শীতের সাথে তাল মিলিয়ে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন গাছিরা। গ্রাম বাংলার বিশেষ এক ঐতিহ্য খেজুর গাছ। 

একসময় গ্রামবাংলার আকাঁবাকাঁ পথে সারি সারি দেখা যেত খেজুর গাছ, কিন্তু এই খেজুর গাছ আজ বিলুপ্তি পথে। শীতের সকাল আর খেজুরের রস দু’য়ে মিলে ছিল একাকার। 

কালের বির্বতনে এখন আর সে চিত্র চোখে পড়ছে না। নেপথ্যে রয়েছে বিভিন্ন জায়গায় গড়ে ওঠা অবৈধ ইটভাটা। কিছু অসাধু চক্র ইটভাটায় প্রধান জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করেন খেজুর গাছ যার ফলে আজ বিলুপ্তির পথে খেজুর গাছসহ খেজুর গাছের রস।

তবুও সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার এলাকায় গাছিরা এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য।বিগত কয়েক বছর পূর্বেও এই অঞ্চলের কিছু মানুষ শীতকাল এলে খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতেন। বিকেল হলেই ধারালো ছেনি বা দা কোমড়ে রশি দিয়ে বেঁধে এই গাছ থেকে ওই গাছের মাথায় রাজত্ব করে বেড়াত। গাছি তার মনের মাধুরী মিশিয়ে শিল্পের মতো করে খেজুর গাছের গলায় দা চালিয়ে দিতেন এবং ঘটি বেঁধে চলে আসতেন।

এখন কয়েক গ্রাম ঘুরে দু’একটি খেজুর গাছের সন্ধান পাওয়া দুষ্কর ব্যাপার হয়ে পড়েছে। যদিও দু’একটি গাছের সন্ধান পাওয়া যায়, তবে তা থেকে রস সংগ্রহ করার সুযোগ হচ্ছে না। দক্ষ গাছিরা তাদের পেশা পরিবর্তন করায় খেজুর গাছ থাকলেও রস পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে দিনে দিনে খেজুরের রস থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন গ্রামাঞ্চলের মানুষ।শহরের মানুষরা তো তার ছোঁয়াই পায় না। 

উপজেলায় গ্রাম্যঞ্চাল বেশি থাকায় তালা সদর, জালালপুর, ইসলামকাটি, তেতুলিয়া, খলিলনগর ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন গ্রামে কয়েক হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। 

স্থানীয়রা জানান, অতীতে উপজেলার সর্বত্র বহু খেজুর গাছ ছিল। ইটভাটায় জ্বালানির দাপটে খেজুর গাছ কেটে অনেকটাই সাবাড় হয়ে গেলেও যা আছে, ১২ ইউনিয়ন মানুষের খুশি করার পক্ষে কম। ইটভাটায় জ্বালনি হিসাবে অনেক গাছ বিক্রি করা হয়েছে। রস মৌসুমে প্রতিটি খেজুর গাছ ভাড়া হয় ২/৩ শ’ টাকায়। মৌসুমের শেষে অনেকেই গাছা বিক্রি করে দেন। মূলত ইট ভাটার জ্বালানির জন্য খেজুর গাছের চাহিদা রয়েছে। যদিও দাম অন্য গাছের তুলনায় কম।

খেজুর গাছের মালিকরা জানান, শীত দ্রুত এসে পড়ায় রস সংগ্রহকারীদের চাহিদা বেড়েছে। চলতি মৌসুমে একটি খেজুর গাছ থেকে ২০-৩০ কেজি রস পাওয়া যাচ্ছে। সপ্তাহে একদিন গাছ কাটা হলে তিন দিন রস পাওয়া যাচ্ছে। 

গাছিরা জানান, আমাদের উপজেলাতে একসময় অনেক খেজুর গাছ ছিলো কিন্তু কালের বির্বতনে তা হারিয়ে যাচ্ছে। এখান থেকে ৫ বছর আগে আমাদের গাছ কাটার জন্য আমার মত অনেক লোক পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছিলো কিন্তু এখন তেমন খেজুর গাছ না থাকায় এই কাজ কেও করতে চাই না।

রসপায়ীরা জানান, শীতের সকালে ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে খেজুর রস খাওয়ার মজাই আলাদা। আরও মজা লাগে খেজুরের রস দিয়ে গুড়/পাটালি দিয়ে বিভিন্ন প্রকারের পিঠা বানিয়ে খাওয়া। সকাল ঘুম থেকে উঠে ১ গ্লাস রস খেলে শরীর অনেকটা সতেজ থাকে। 

তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নে গাছি আশরাফ আলী (৪৫) বলেন, আমি প্রায় ২৬ বছর যাবত খেজুর গাছ কেটে আসছি। খেজুর গাছ বিলুপ্তি হওয়ায় আগের মতন খেজুর গাছ কাটা লাগে না। খেজুর গাছ গুলো এখন যাচ্ছে ইট ভাটায়। জ্বালানি কাঠ ও কয়লা আপেক্ষা খেজুর গাছ সস্তা দামে পাওয়া যায় বলে ইট ভাটায় এর চাহিদা বেশি।  কেননা, খেজুরের গাছে পোড়ানো ইটের রং গাঢ় হয়। সময়ের পরিবর্তনে ও সচেতনতার অভাবে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস। 

সকল রসপায়ী ও স্থানীয় ব্যক্তিদের দাবি, কিছু অসাধু ব্যাবসায়ীরা তাদের নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য খেজুর গাছ কেটে ইটের ভাটায় বিক্রয় করছে। যদি এই অসাধু ব্যাবসায়ীদের এখনি আটকানো না যায় তাহলে ভবিষৎতে তালা উপজেলা সহ প্রায় সকল উপজেলায় খেজুর গাছের সন্ধান পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়বে।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.