কালের আর্বতে ক্রমইে হারিয়ে যাচ্ছে শিবচরের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। বহুমুখী সমস্যা আর পৃষ্ঠ পোষকতার অভাবে আজ সংকটের মুখে এ মৃৎ শিল্প। তাই আধুনকিতার ছোয়ায় আজ বিলিনের পথে শত বছররে এই ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পটি।
উপজেলার শিবচর পৌর এলাকার পালবাড়ি ও ভদ্রাসন এলাকার ২টি গ্রামে প্রায় দেড় শতাধিক লোক এ পেশার সাথে জড়িত। এক সময় এ উপজেলার গ্রামগুলো মৃৎশিল্পের জন্য খুবই বিখ্যাত ছিল। বিজ্ঞানের জয়যাত্রা, প্রযুক্তির উন্নয়ন ও নতুন নতুন শিল্প সামগ্রীর প্রসারের কারণে এবং প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠ পোষকতা ও অনুকূল বাজারের অভাবে এ শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো শিবচরের বিভিন্ন গ্রামে নিয়োজিত মৃৎ শিল্পিদের অধিকাংশ পাল সম্প্রদায়ের। প্রাচীন কাল থেকে ধর্মীয় এবং আর্থ সামাজিক কারণে মৃৎ শিল্পিরা শ্রেণী ভুক্ত সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তী সময়ে অন্য সম্প্রদায়ের লোকেরা মৃৎ শিল্পিকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করে।
বর্তমান বাজারে এখন আর আগের মতো মাটির জিনিষ পত্রের চাহিদা না থাকায় এর স্থান দখল করে নিয়েছে দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈজসপত্র। ফলে বিক্রেতারা মাটির জিনিষ পত্র আগের মতো আগ্রহের সাথে নিচ্ছেনা। তাদের চাহিদা নির্ভর করে ক্রেতাদের ওপর। আজ পাড়াগায়ে এখন আর মাটির হাঁড়ি পাতিল তেমনটা চোখে পড়ে না। সে কারণে অনেক পুরোনো মৃৎ শিল্পিরাও তাদের পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছে।
যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে মাটির জিনিসি পত্র তার পুরোনো ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে।
ফলে এ পেশায় যারা জড়িত এবং যাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন মৃৎ শিল্প তাদের জীবন যাপন একেবারেই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। দুঃখ কষ্টের মাঝে দিন কাটলেও শিবচরের মৃৎ শিল্পিরা এখনও স্বপ্ন দেখেন কোন একদিন আবারও কদর বাড়বে মাটির পণ্যের। সেদিন হয়তো আবারো তাদের পরিবারে ফিরে আসবে সুখ-শান্তি। আর সেই সুদিনের অপেক্ষায় আজও দিন-রাত পরশ্রম করে যাচ্ছনে তারা।
এ ব্যাপারে লক্ষন পাল জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নদী-খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন মাটি সংগ্রহে অনেক খরচ করতে হয়। এ ছাড়াও জ্বালানির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ও বিক্রির সঙ্গে মিল না থাকায় প্রতিনিয়ত লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।তাই অনেকেই বাপ-দাদার এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশার দিকে চলে যাচ্ছে।
উপজেলার সচেতন মহল ও বিশিষ্টজনেরা মনে করছেন মৃৎ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে আধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিল্পকর্মে প্রশিক্ষিত করে মৃৎ শিল্পের সময় উপযোগী জিনিষ পত্র তৈরিতে এবং বিদেশে এ পণ্যের বাজার সৃষ্টিতে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহন করা প্রয়োজন।