× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

রংপুরে ৫ বছরে দ্বিগুণ ধনিয়া পাতার আবাদ

রংপুর প্রতিনিধি

১৪ নভেম্বর ২০২২, ০৫:৪৮ এএম । আপডেটঃ ১৪ নভেম্বর ২০২২, ০৫:৫৫ এএম

শীত মৌসুমে রংপুর অঞ্চলে এমন ধনিয়া পাতার ক্ষেত নজর কাড়বে। বিস্তৃর্ণ মাঠে সবুজ চাদর, দূর থেকে বোঝার উপায় নেই এটি ধনিয়া পাতার ক্ষেত। যতদূর চোখ যায় মাঠের পর মাঠ সবুজ চাদরের মত বেছানো ধনিয়া পাতার দেখা মিলবে এ অঞ্চলে। ফলন ও দামে সবুজ এ শষ্যপাতায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন কৃষকরা। একারণে দিন দিন রংপুর অঞ্চলে বাড়ছে ধনিয়া পাতার চাষাবাদ।

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার রানীপুকুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে মাঠে মাঠে কৃষাণ-কৃষাণীর জটলা। সবুজ চাদরে মোড়ানো ক্ষেত থেকে সারিবদ্ধভাবে তোলা হচ্ছে ধনিয়া পাতা। সেগুলো বাজারজাত করতে সম্পন্ন করা হচ্ছে নানা প্রক্রিয়া। সকাল থেকে সন্ধ্যা যেন দম ফেলানোর ফুরসত নেই কৃষকদের।

রংপুর ছাড়াও নয়নাভিরাম এ দৃশ্য দেখা মিলবে বেলে দোআঁশ ও দোআঁশ মাটিময় নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধার বিভিন্ন এলাকায়। কৃষকরা বলছেন, আগে বাড়ির উঠানে বা পরিত্যক্ত জমিতে আবাদ হওয়া ফসলটি এখন চাষ হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। কম খরচে অনেক লাভ পাওয়ায় মসলা জাতীয় এ ফসল আবাদে আগ্রহীও হচ্ছেন তারা।

মিঠাপুকুর উপজেলার রানীপুকুর ইউনিয়নের মাদারপুরের কৃষক আব্দুল মতিন বলেন, আগোত ধান-আলু আবাদ করিয়্যা যে লাভ হয় নাই, এ্যলা ধনিয়া পাতা আবাদ করি সেই লাভ হওছে। হামাক লোকসান নিয়্যা চিন্তা করা নাগে না। অল্প খরচে বেশি লাভ, পত্তাও বেশি। পরিশ্রমও তেমন করা নাগে না। আল্লাহর রহমতে কয়েক বছর ধরি ধনিয়া পাতা আবাদ করি ভালোয় লাভ হইছে।

একই ইউনিয়নের ভিকমপুর গ্রামের দুলালী বেগম বলেন, আগে বাড়ির উঠানোত না হয় পুকুরের আশপাশে ধনিয়া পাতা আবাদ করছি। তখন ব্যবসা করার চিন্তা ভাবনা আছিল না। কিন্তু এলাকার অনেকে এ্যলা জমিত আবাদ শুরু করছে। ওই তকনে কয়েকজনে মিলিয়া এক বিঘা জমিত দুই বছর ধরি হামরা বাণিজ্যিকভাবে ধনিয়া পাতা আবাদ করছি। আইজ পর্যন্ত কোনো লোকসান হয় নাই। কিন্তু মোকামোত মাঝেমধ্যে একনা দাম কম-বেশি হয়।

রংপুর অঞ্চলে ভালো ফলন ও লাভজনক হওয়ায় ধনিয়া পাতা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। গত পাঁচ বছর ধরে এই ফসল চাষে বাণিজ্যিকভাবে সফলও হয়েছেন অনেকে। তাদের দাবি, উৎপাদনের পাশাপাশি রপ্তানি করা গেলে বেশি লাভজনক হবেন তারা। একই সঙ্গে প্রয়োজন সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা।  

রংপুরের পীরগাছার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের বগুড়াপাড়ার কৃষক আবু বক্কর জানান, ধনিয়া পাতা উৎপাদনে বেশিদিন সময় লাগে না। ৩৫-৪০ দিনের মধ্যে বাজারজাত করা সম্ভব। প্রতি এক কাঠা জমিতে তিন থেকে চার মণ ধনিয়া পাতা উৎপাদন হয়। এই পাতাগাছ নারী-পুরুষ, বয়স্ক বৃদ্ধ মানুষের দ্বারাও তোলা সম্ভব। পাতা তুলতে খুব বেশি পরিশ্রমও করতে হয় না।

নীলফামারীর ডোমার উপজেলার পাঙ্গা মটুকপুর ইউনিয়নের নদীয়াপাড়া এলাকার কৃষক হাফিজুল ইসলাম জানান, ধনিয়া পাতার উৎপাদন বাড়ছে। সঙ্গে সঙ্গে ভালো দাম পাওয়া নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ঢাকার বড় বড় ব্যবসায়ীরা হঠাৎ করে দাম কমিয়ে দেন। এতে কখনো কখনো কৃষকরা লাভ করতে পারেন না।  
 
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের বাগেরহাট এলাকার চাষি রুহুল বকস বলেন, ধনিয়া পাতার দাম কমলে আমাদের কোনো লাভ থাকে না। শ্রমিককে টাকা দিতেই টাকা শেষ হয়ে যায়। ঢাকার আড়তদাররা আমাদেরকে ফোনে দাম বলে ৫০-৬০ কেজি কিন্তু আমরা ঢাকা গেলে কম দাম পাই। সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা না থাকাতে এভাবে দাম উঠা-নামা করায় আমাদের অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।  

অন্যান্য ফসলের মত ধনিয়া পাতার বাজার বৃদ্ধিতে সরকারকে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে কৃষক সংগ্রাম পরিষদের রংপুর জেলার আহ্বায়ক পলাশ কান্তি নাগ বলেন, উৎপাদন যে হারে বাড়ছে সেই হারে বাজারে চাহিদা নেই। আবার চাহিদা থাকলেও ন্যায্য বা ভালো মূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এতে করে অনেক কৃষকই কিন্তু নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। আমরা মনে করি এ ক্ষেত্রে ধনিয়া পাতা রপ্তানি করা গেলে কৃষকরা বেশি লাভজনক হবেন। একই সঙ্গে সরকারকে সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিতে হবে।  

এ অঞ্চলের মাটি বেলে দোআঁশ ও দোআঁশ হওয়ায় ধনিয়া পাতার মত মসলা জাতীয় ফসল আবাদের জন্য উপযোগী বলে জানান রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মণ্ডল। তিনি বলেন, আগাম শীতের সময় যদি ধনিয়া পাতা কোনভাবে বাজারে নামানো যায়, তাহলে কৃষকরা একটু বেশি মূল্য পায়। কিছুদিন আগেও ধনিয়া পাতা কেজি প্রতি ২০০ টাকা ছিল। এখন তা ১০০ টাকাতে বিক্রি হচ্ছে। এভাবে কৃষকরা যত লাভবান হবেন, ধনিয়া পাতার চাষবাদও সম্প্রসারিত হবে।

তিনি আরও জানান, এ বছর ৩৬০ হেক্টর জমিতে ধনিয়া পাতার আবাদ হয়েছে। আর উৎপাদন হয়েছে ৯৩১ মেট্রিক টন। কৃষকরা মোটামুটি দাম ভালো পাচ্ছেন। তবে আগের চেয়ে রংপুর অঞ্চলে এখন এই ফসলের চাষাবাদ বেড়েছে। পাঁচ বছর আগে ২০১৭-১৮ মৌসুমে রংপুর জেলায় যেখানে ৩১০ হেক্টর জমিতে ৪৬৩ মেট্রিক টন ধনিয়া পাতা উৎপাদন হয়েছিল। এবার ২০২১-২২ মৌসুমে ৪৬৩ মেট্রিক টন উৎপাদন বেড়েছে।

২০১৮-১৯ মৌসুমে জেলায় ৩১৮ হেক্টর জমিতে ৬৫৮ মেট্রিক টন ধনিয়া পাতা উৎপাদন হয়। পরের বছরে ৩৫৩ হেক্টর জমিতে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ৮৮৩ মেট্রিক টনে এবং ২০২০-২১ মৌসুমে একই পরিমাণ জমিতে উৎপাদন হয়েছিল ৯০২ মেট্রিক টন ধনিয়া পাতা। 

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.