গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কে মারামারি করে চারটি এবং অন্যান্য পাঁচটি জেব্রা ইনফেকশনাল ডিজিজে মারা গেছে। মঙ্গলবার বিকেল সোয়া ৪টায় পার্কের ঐরাবতী বিশ্রামাগার মিলনায়তনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান এ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ বিশেষ মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও প্রাক্তন চীফ ভেটেরিনারী অফিসার ডা. এ বিএম শহীদুল্লাহ।
ডা. এ বিএম শহীদুল্লাহ জানান, হঠাৎ করে গায়ের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিয়ে ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে জেব্রাগুলো মারা গেছে। এ মুহূর্তে আটটি প্রেগন্যান্ট জেব্রা নিবিড় পর্যবেক্ষনে রয়েছে। মারা যাওয়া জেব্রাগুলোর মধ্যে মাদী ৭টি ও ২টি পুরুষ। পার্কে বর্তমানে জেব্রা রয়েছে মোট ২২টি। এর মধ্যে সাতটি মাদী ও ১৪টি পুরুষ জেব্রা রয়েছে।
জেব্রার নিরাপদ আবাসনের জন্য মোট ১০ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো হল জেব্রাগুলোকে আলাদা করে রাখতে হবে। আঅপাতত যেখান থেকে ঘাস দেওয়া হত সেখান থেকে ঘাস সরবরাহ বন্ধ রাখতে হবে। যেসব ব্যাকটেরিয়ার ভ্যাকসিন নেই সেসব ব্যাকটেরিয়া থেকে বাঁচাতে খাবারের সাথে এন্টিবায়োটিক পাউডার ব্যবহার করতে হবে। খাবারগুলো টুকরো করে কেটে ট্রে-র মধ্যে পানিতে করে দিতে হবে।
আগে কেন মারামারি করেনি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, পুরুষ জেব্রাগুলোর মধ্যে কোন প্রাণিটি আগে প্রজনন করবে সেজন্য নিজেদের মধ্যে মারামারি লেগে যায়। চিড়িয়াখান বা সাফারী পার্কেও এরকম ঘটনা ঘটে থাকে, এটি নতুন নয়।
৫ সদস্য বিশিষ্ট এ বোর্ডের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারী বিভাগের প্রফেসর ডা. রফিকুল আলম, গাজীপুর জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. উকিল উদ্দিন এবং ভার্চুয়াল প্রক্রিয়ায় অংশ নেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি অনুষদের প্রফেসর ডা. আবু হাদী নূর আলী খান, ফার্মাকোলজী বিভাগের প্রফেসর ডা. কাজী রফিকুল ইসলাম, সাফারী পার্কের চিকিৎসক জুলকার নাইন।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পার্কের প্রকল্প পরিচালক মো. জাহিদুল কবির বলেন, সাফারী পার্কে চিকিৎসক জনবল কম। প্রাণি চিকিৎসায় পাঁচজনের একটি সেট আপের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি নমুনা পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন ল্যাবরেটরীতে পাঠানো হয়েছে। বেশিরভাগ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তা থেকেই মেডিক্যাল বোর্ড উল্লেখিত কারণগুলো চিহ্নিত করেছেন।
নতুন বছরের শুরুর মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কে ৯টি জেব্রা মারা গেছে। পার্কের হিসেব অনুযায়ী এত অল্প সময়ে প্রায় এক তৃতীয়াংশ জেব্রার মৃত্যু হয়েছে।
সাফারী পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান জানান, পরীক্ষাগারগুলো থেকে কোনোটা ব্যকটেরিয়া, কোনোটা করোনার কারণ, কোনোটা খাদ্যে কীটনাশকের উপস্থিতিসহ নানা বিষয় চিহ্নিত করেছেন। তবে আইসিডিডিআরবি ল্যাব থেকে করোনা নেগেটিভ এসেছে। সাফারী পার্কের মতো এমন জাত ও সংখ্যাধিক্য জেব্রা দেশের কোথাও নেই। আগে জেব্রার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে জেব্রার গায়ের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে, শ^াসকষ্ট হচ্ছে এবং এসব উপসর্গ দেখা যাওয়ার ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে জেব্রা মারা যাচ্ছে। ২ জানুয়ারী থেকে জেব্রা মারা যায়। কয়েকটি অসুস্থ্য জেব্রা চিকিৎসা দেওয়ার পর সুস্থও হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রাণীর জন্য ময়মনসিংহ এলাকা থেকে ঘাস আনা হয়। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে ঘাস ধুয়ে বাকি জেব্রাগুলোকে খাওয়ানো হচ্ছে। তারপরও কয়েকটি জেব্রা মারা গেছে। আটটি জেব্রা প্র্যাগনেন্ট রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কোনো ধরণের সংক্রমণ হয় কি না তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।
পার্কসুত্র জানায়, পার্কের যাত্রা শুরুর প্রথম থেকেই জেব্রা পালে নতুন অতিথির সংখ্যা যুক্ত হচ্ছিল। গত কয়েক বছর যাবত বিশেষ করে করোনা সময়ে জেব্রার অধিকতর প্রজনন ঘটে। যেভাবে জেব্রার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছিল তাতে কর্তৃপক্ষ অনেক আশাবাদী ছিলেন। দেশের চাহিদা মিটিয়ে জেব্রা বিদেশেও রপ্তানীর একটা সম্ভাবনা ছিল। পার্কের অন্যসব প্রাণীর মধ্যে জেব্রার প্রজনন ছিল আশাব্যঞ্জক। বিভিন্ন সময় জেব্রার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে এবং অল্প সময়ের ব্যবধানে মৃত্যুর কারণগুলো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পার্কে সবশেষ পার্কে ৩১টি বেশি জেব্রা ছিল। মঙ্গলবারের (২৫.০১.২০২২) বৈঠকের পর পরীক্ষাগারের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে সতর্কতামূলক বাড়তি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি দাবী করেন পার্ক কর্তৃপক্ষের কোনোরূপ অবহেলা নেই। অত্যন্ত সতর্কতার সাথে প্রাণিগুলোর পরিচর্যা করা হয়।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh