কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার একটি প্রত্যন্ত এলাকা দক্ষিণগ্রাম। গ্রামের বিলে তিন রঙের পদ্মফুল তার রূপের পসরা মেলে বসেছে। গোলাপি, সাদা ও হলুদ পদ্মের মোহনীয় রূপ দেখতে বিলে ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা।
পদ্মের মধ্যে হলুদ পদ্ম বিরল প্রজাতির বলে অভিমত গবেষকদের। এদিকে কিছু লোকজন ফুল ছিঁড়ে ফেলায় সৌন্দর্য হারাচ্ছে পদ্মবিল।
গত বছর দক্ষিণগ্রামের এই তিন রঙের পদ্মফুল নিয়ে ইউনেসকোর অর্থায়নে গবেষণা শুরু হয়। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বেঙ্গল প্ল্যান্টস রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছে সেই গবেষণা।
তারা বিলের কিনারায় সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে পদ্ম না ছিড়তে বা জলাশয়ে গিয়ে মাছও আহরণ করতে নিষেধ করেছিল। তবে এই নিষেধাজ্ঞার সাইনবোর্ডটি ভেঙে ফেলেছে দুবৃর্ত্তরা। এতে হুমকির মুখে বিলটি।
স্থানীয় সূত্রমতে, আগে এখানে মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে বা পানিতে ভিজে পদ্ম ফুল দেখতে হতো। এখন বাণিজ্যিক নৌকার ব্যবস্থা রয়েছে। ১৮টি নৌকায় প্রতিদিন কয়েকশ’ দর্শনার্থী পদ্ম ফুল দেখতে আসেন। তবে শুক্রবার ও শনিবার ছুটির দিনে দর্শনার্থীর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায়।
শনিবার বিকালে সরেজমিনে দেখা যায়, দলবেঁধে তরুণরা এবং কয়েকটি পরিবার নৌকা চড়ে পদ্ম ফুল দেখছেন। পদ্ম পাতায় পানি ওঠে তা বাতাসে টলমল করছে। কখনও নৌকার গতিতে পদ্ম পাতায় ছোট মাছ ওঠে পড়ছে। মাছরাঙা আর ফিঙে পাখিকে মাছ আর পোকা ধরার অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। পদ্মের সাথে অপরিচিত নানা ফুলও দেখা যায়। পদ্ম বিল দর্শনকে কেন্দ্র করে এখানে চা-চটপটিসহ বিভিন্ন দোকানের পসরা বসেছে। গ্রামের মেঠোপথে দর্শকদের নিয়ে আসা বিভিন্ন পরিবহনের সারিও দেখা যায়। কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলাসহ বাইরের লোকজনও আসছেন পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। কিছু তরুণকে ফুল ছিঁড়ে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। ফুল না ছিঁড়তে মাঠে পুনরায় সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়ার আহবান সচেতনদের।
দক্ষিণগ্রামের আবদুল অদুদ জানান, মাঠের এই অংশটি নিচু। বছরের আট মাস এখানে পানি থাকে। শুধু বোরো ধান হয়। আগেও এখানে পদ্ম ফুল ফুটতো। গত তিন বছর ধরে বেশি ফুল ফুটেছে।
কুমিল্লার গণমাধ্যমকর্মী মাহফুজ নান্টু জানান, তিনি তিন বছর আগে সংবাদ সংগ্রহের কাজে এলে ফুলগুলো তার নজরে পড়ে। পরে মজা করে ফেসবুকে লাইভ দেন। ভিডিওটি ভাইরাল হয়। এখানে মানুষের ঢল নামতে শুরু করে। আগে অনেক ফুল ছিল, অনেকে ফুল ছিঁড়ে নিয়ে গেছে। সবার প্রতি অনুরোধ তারা যেন ফুল ছিঁড়ে সৌন্দর্য নষ্ট না করেন।
স্থানীয় রাজাপুর গ্রামের তাছলিমা আক্তার ও আবদুল্লাহ আল রিশাত বলেন, এই এলাকায় বিনোদনের কোন ব্যবস্থা নেই। এই পদ্ম বিল তাদের নিকতবর্তী হওয়ায় প্রায় পদ্মফুলের সৌন্দর্য দেখতে আসেন। এখানে ফুল গুলো সংরক্ষণ করা গেলে ভালো হতো।
নৌকার মাঝি তাইফুর আলম জয় বলেন, প্রতিজন ৫০টাকা করে তারা নৌকা তোলেন। দিনে তাদের ৭/৮শ টাকা আয় হয়। ছুটির দিনে তা দুই হাজারও ছাড়িয়ে যায়। বিলের জমির মালিকদের তারা প্রতিজন প্রতিদিন এক নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেন বলেও তিনি জানান।
বুড়িচং উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা বানিন রায় বলেন, দক্ষিণগ্রামের পদ্মবিলে ৫০ একরের মতো জমি রয়েছে। তার মধ্যে ১০/১২ একর জমিতে পদ্ম ফুল ফোটে। শুষ্ক মৌসুমে এখানে বোরো আবাদ হয়। কিছু জমিতে রোপা আমনও চাষ হয়। পদ্মবিলে মানুষের ভিড় লেগে থাকে। এতে মানুষের সময় কাটানোর সাথে স্থানীয়দের আয়ের সুযোগ হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হালিমা খাতুন বলেন, পদ্মবিলটি পরিদর্শন করেছি। বিলটি ব্যক্তি মালিকানাধীন। এখানে ফুল গুলো ছিঁড়ে সৌন্দর্য নষ্ট করা হচ্ছে। এবিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh