কুমিল্লার হোমনা উপজেলার আসাদপুর ইউনিয়নের তেভাগিয়া খালে স্বাধীনতার ৫০ বছরেও সেতু নির্মাণ করা হয়নি। সেতুর অভাবে খালের ওপর ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সাঁকোতে উপজেলার পূর্ব-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত যাতায়াত করছে। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি, সাঁকোর পরিবর্তে সেতু নির্মাণ করা হোক। কিন্তু তাঁদের দাবি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, ২০ থেকে ২৫ বছর আগে গ্রামের লোকজন চাঁদা তুলে খালের ওপর কাঠের সাঁকো তৈরি করে। এরপর প্রায় প্রতিবছরই সাঁকোটি মেরামত করতে হয়। বর্তমানে সাঁকোটির অবস্থাও নড়বড়ে হয়ে আছে। তার পরও কোনো উপায় না থাকায় এই সাঁকোতেই মানুষ যাতায়াত করছে। এ ছাড়া সাঁকোর দুই পাশে এক কিলোমিটার সড়ক কাঁচা হওয়ায় কোনো অটোরিকশাও চলাচল করে না। ফলে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়।
হোমনা পৌর সদরের শ্রীমদ্দি গ্রামের বাসিন্দা মো. আবুল হাশেম (৭৫) বলেন, ‘আমরা ছোট সময় শ্রীমদ্দি গ্রাম থেকে ১৭ থেকে ১৮ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে এই তেভাগিয়া খালের খেয়া পার হয়ে রামচন্দ্রপুর বাজারে যাতায়াত করতাম। এখন বেশির ভাগ খালেই সেতু নির্মাণ হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো এই খালে সেতু নির্মাণ হয়নি। এটা অনেক দুঃখজনক।’
তেভাগিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও হোমনা সরকারি কলেজের প্রবীণ শিক্ষক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ছোটবেলায় দেখেছি, উপজেলার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব মানুষ এই খাল খেয়ায় পার হয়ে উপজেলা সদরে যাতায়াত করত।’
চারকুরিয়া গ্রামের বৃদ্ধা হাতেম আলী আক্ষেপ করে বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে এই ইউনিয়নে সব সময় বড় বড় রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধি ছিলেন। তাঁদের অনেকেই নির্বাচনের আগে এলাকায় এসে বলেছেন, নির্বাচনের পরেই এই সেতুর কাজ ধরবেন। কিন্তু সেই কাজ আর ধরা হচ্ছে না। এখানে সেতু হবে, হয়তো তখন আমি থাকব না।’
রামকৃষ্ণপুর ডিগ্রি কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক মো. এমদাদ ভূঁইয়া বলেন, বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় সাঁকো পার হয়েই ঘনিয়ারচর, দত্তেরকান্দি, কলাগাছিয়া, জয়নগরসহ প্রায় ৮ থেকে ১০টি গ্রামের শিক্ষার্থীকে কষ্ট করে প্রতিদিন স্কুল-কলেজে যাতায়াত করতে হয়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন পাঠান বলেন, সাঁকোর স্থলে সেতু নির্মাণ করা হলে এবং দুই পাশের কাঁচা সড়ক পাকা হলে পূর্ব-পশ্চিমাঞ্চলের ২০-২২টি গ্রামের মানুষ অল্প সময়ে পাকা সড়কে উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে পারবে। এছাড়া এ ইউনিয়নের বাসিন্দা ও কুমিল্লা-২ আসনের সাংসদ সেলিমা আহমাদ বলেছিলেন, এই খালে সেতু নির্মাণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।