× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রের ধারা

আবু সাঈদ তুলু

০৯ জানুয়ারি ২০২২, ০৩:৫০ এএম

মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জীবনের গৌরবান্বিত অধ্যায়। এ সময়টিতে বিনাশ-বিধ্বস্ততা-শঙ্কাকে জয় করে হাজার ত্যাগের বিনিময়ে বাঙালি ছিনিয়ে এনেছে তার অধিকার। পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ, বঞ্চনা ও নিষ্পেষণ অত্যাচার থেকে মুক্তির জন্য এসময় বাঙালি অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল। দীর্ঘ নয় মাসে রক্তক্ষয়ী যজ্ঞে শহীদের দীর্ঘ সারি ও দুলক্ষ নারীর আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাঙালি স্বাধীনতা অর্জন করে। আজ বাংলাদেশ স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর অতিক্রম করছে। এ পঞ্চাশ বছরের পথ চলায় নানাদিকে নানা অর্জন বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করছে। চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়।

গত পঞ্চাশ বছরে নাটক ও চলচ্চিত্র ধারাই সর্বো”চ বিকাশ ঘটেছে। যদিও উপনিবেশের মানস গ্যাড়কল থেকে বাংলাদেশ এখনো মুক্ত হতে পারেনি তবুও শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশ অবিস্মরণীয়। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাস্তরে চলচ্চিত্র বিদ্যা পাঠ্য হয়েছে। প্রতিবছরেই বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে বিদেশি ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়ে প্রশংসা কুড়িয়ে আনছে। বিযুক্তিকরণের রূপরেখাও চলচ্চিত্রে প্রতীয়মান হয়ে উঠেছে। বিষয়-ভাবনা, কারিগরী উন্নয়ন, নির্মোহ উপস্থাপন, পেশাদারিত্বে এক অনন্য মাইল ফলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত পঞ্চাশ বছরের চলচ্চিত্র ধারায় নানা নিরীক্ষা থাকলেও বিষয়গত জায়গা থেকে একাত্তর-মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে। একাত্তর বা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নানা মাত্রার প্রায় শতাধিক চলচ্চিত্র বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে করেছে সমৃদ্ধ।

বাঙালির উপর পাকিস্তানিদের অন্যায়-অত্যাচার, নিপীড়ন-নির্যাতন, অধিকার কেড়ে নেওয়া এবং তার বিপরীতে প্রতিরোধ-প্রতিকারই এ ধারার চলচ্চিত্রগুলোর কাহিনিতে প্রাধান্য পেয়েছে। বাঙালির মুক্তির সংগ্রামে ত্যাগের বিনিময়ে বীরত্বগাথা এ চলচ্চিত্রগুলোর মূল উপাদান। পাকিস্তানি শোষকদের কুচক্র, রাজাকার-আলবদর-আল শামস প্রভৃতির বিশ্বাসঘাতকতায় এ সময় এদেশ নারকীয় পরিণতির দিকে পৌঁছেছিল। নারীর সম্ভ্রমলুট, নির্বিবাদে মানুষ হত্যায় পাকিস্তানি শাসক উন্মাতাল হয়ে উঠেছিল।

নিরস্ত্র বাঙালিরা আত্মরক্ষা-অধিকার রক্ষায় জীবন বাজী রেখে রক্তত্যাগে প্রতিকূলতা ছাপিয়েই বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। মানবীয় নানা দিকসহ এসব নানা বিষয়ই মুক্তিভিত্তিক চলচ্চিত্রগুলোর কাহিনিবৃত্তে স্থান পেয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্রকে আমরা প্রধান কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে আলোচনা করতে পারি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধ, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে, প্রামাণ্য চিত্র ও বিদেশিদের তৈরি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র। তবে সময়ের স্বল্পতায় আলোচনা সংক্ষেপ রাখার জন্য আমরা গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য কিছু পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নিয়েই আলোচনায় ব্যাপৃত থাকবো।

প্রামাণ্য চিত্র নির্মাণের মাধ্যমেই চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ ওঠে আসে। জহির রায়হানের ‘স্টপ জেনোসাইড’, ‘আ স্টেট ইজ বর্ণ’, আলমগীর কবীরের ‘ইনোসেন্ট মিলিয়নস’ ও বাবুল চৌধুরীর ‘লিবারেশন ফাইটার্স’ প্রভৃতি প্রামাণ্য চলচ্চিত্রগুলো মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্মিত হয়েছিল। যেগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা বিদেশি মহলে তুলে ধরা একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল। এগুলো ছিল প্রধানত কলকাতা কেন্দ্রিক।

১৯৭২ সালে পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্র হিসেবে চাষী নজরুল ইসলাম নির্মাণ করেন ‘ওরা ১১ জন’। এ চলচ্চিত্রকেই মুক্তিযুদ্ধের কাহিনি নির্ভর প্রথম সার্থক চলচ্চিত্র হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। ১১ জন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধার যুদ্ধাভিযানকে কেন্দ্র করে এর কাহিনি আবর্তিত। এতে ফুটে উঠেছে পাকিস্তানি বাহিনির শোষণ, অত্যাচার, নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ। এ সিনেমার গল্পে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ, কিশোর মুক্তিযোদ্ধার অংশগ্রহণ, নারী নির্যাতন ও নিজ কন্যা কর্তৃক রাজাকার পিতা হত্যার দৃশ্যও রয়েছে। এ সিনেমার কলাকুশলীর মধ্যে যুদ্ধফেরত মুক্তিযোদ্ধা খসরু, মুরাদ, হেলাল, নান্টু প্রমুখ অভিনয় করেছেন। ফলে নির্মিত এ চলচ্চিত্রে বিধৃত বাস্তবের ঘণিষ্ঠতা দর্শকদের হৃদয়কে স্পর্শ করে।

একই বছর ১৯৭২ সালে ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’ শিরোনামে সুভাষ দত্ত মুক্তিযুদ্ধে বীরাঙ্গনা নারীদের প্রেক্ষাপট নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করেন। ‘লাঞ্ছিত নারীত্বের মর্যাদা দাও, নিষ্পাপ সন্তানদের বরণ কর...’ এমন শ্লোগানে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠেছে। এ চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধের বিধ্বস্তরূপকে বিশেষভাবে চিত্রায়িত করেছে। এ চলচ্চিত্রের কাহিনি তৎকালীন সামাজিক জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

১৯৭৩ সালে আলমগীর কবির নির্মাণ করেন কাহিনিচিত্র ‘ধীরে বহে মেঘনা’। ভারতীয় মেয়ে অনিতা ঢাকায় এসে মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে মর্মাহত হন। তার প্রেমিক এ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছে। গল্পের মূল পরিকল্পক ছিলেন জহির রায়হান। চলচ্চিত্রটি ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট দক্ষিণ এশিয়ার সেরা ১০টি চচলচ্চিত্রের অন্তর্ভুক্ত করে। এতে সত্য সাহার সংগীত পরিচালনায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা এ সিনেমার প্রতি দৃশ্যের গভীরে।

খান আতাউর  রহমানের ‘আবার তোরা মানুষ হ’ (১৯৭৩) ও নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘আলোর মিছিল’ (১৯৭৪) দুটিতে যুদ্ধপরবর্তী বাংলাদেশের সামাজিক অবক্ষয় ফুটে উঠেছে। বঙ্গবাণী কলেজের তরুণ সাত মুক্তিযোদ্ধা ছাত্র যুদ্ধে শেষে ফেরত এসেও যেন বসে থাকতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধই যেমন তাদের শেষ হয় না। সমাজের অন্যায় দমন করতে করতে এমন সময় তারাই যেন অন্যায়ে জড়িয়ে পড়েএমনই কাহিনি ফুটে উঠেছে ‘আবার তোরা মানুষ হ’ চলচ্চিত্রে। অপরদিকে ‘আলোর মিছিল’ চলচ্চিত্রে ফুটে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী অসৎ ব্যবসায়ীদের স্বরূপ, আদর্শবাদী ভাইয়ের সততা ও ভাগ্নির আত্মঘাতী প্রবণতার চিত্র।

চাষী নজরুল ইসলাম ১৯৭৪ সালে নির্মাণ করেন ‘সংগ্রাম’। এতেও মুক্তিযুদ্ধের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম প্রতিফলিত হয়েছে। এবছর আনন্দের ‘কার হাসে কে হাসে’ (১৯৭৪) গুরুত্ববহ চলচ্চিত্র। এছাড়াও হারুন-উর-রশীদ ১৯৭৬ সালে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ‘মেঘের অনেক রং’ (১৯৭৬) শিরোনামে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।

নব্বইয়ের দশকে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অসংখ্য জনপ্রিয় চলচ্চিত্র পাওয়া যায়। তারমধ্যে হুমায়ূন আহমেদ নির্মিত ‘আগুনের পরশমণি’ (১৯৯৪) অন্যতম। এছাড়াও তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ নির্মাণ করেন ‘মুক্তির গান’ (১৯৯৫, এটা যদিও প্রামাণ্যচিত্র)। এটি ১৯৭১ সালে মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা লিয়ার লেভিনের ধারণকৃত ফুটেজ নির্ভর নির্মিত হয়েছিল। ১৯৯৭ সালে চাষী নজরুল ইসলাম সেলিনা হোসেনের গল্প অবলম্বনে ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। যশোরের কালীগঞ্জের গ্রামের এক পরিবারের হৃদয়স্পশী সত্য ঘটনাকে অবলম্বন করে প্রথমে গল্প; পরে তা উপন্যাস আকারে প্রকাশিত হয়। যুদ্ধ করতে করতে দুজন মুক্তিযোদ্ধা এক মায়ের ঘরে আশ্রয় নিলে পাকিস্তানি বাহিনি এসে তলব করে। তখন মা মুক্তিযোদ্ধাদের বাঁচিয়ে নিজের প্রতিবন্ধী ছেলেকে পাকিস্তানীদের হাতে তুলে দেয়। ছেলেকে চোখের সামনে নির্মমভাবে হত্যা করে। এগুলো ছাড়াও এসময় আরো কিছু মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্র দর্শককে আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। সেগুলো হচ্ছে- নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বা”চুর ‘একাত্তরের যীশু’, তানভীর মোকাম্মেলের ‘নদীর নাম মধুমতী’, খান আতাউর রহমানের ‘এখনো অনেক রাত’ প্রভৃতি।

২০১১ সালে মুহম্মদ জাফর ইকবালের কিশোরকাহিনি অবলম্বনে মোরশেদুল ইসলাম ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করে। চলচ্চিত্রটি মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র হিসেবে ভিন্নমাত্রা এনে দেয়। ২০১১ সালে নাসিউদ্দীন ইউসুফ বা”চু নির্মাণ করেন ‘গেরিলা’ শিরোনামে চলচ্চিত্র। এ চলচ্চিত্রের কাহিনি অবলম্বন করেছেন সৈয়দ শামসুল হকের ‘নিষিদ্ধ লোবান’ উপন্যাস থেকে। চলমান মুক্তিযুদ্ধে আত্মীয়-স্বজন হারানো বিলকিস নামের এক বলিষ্ঠ চরিত্রের আত্মহুতির গল্প বর্ণিত হয়েছে এতে। এসময়ে রুবাইয়াত হোসেন পরিচালিত ‘মেহেরজান’ চলচ্চিত্রটিও মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্ববহ।  

তানভীর মোকাম্মেল পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘জীবনঢুলী’ অত্যন্ত গুরুত্ব হয়ে উঠে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনি এদেশের মানুষের উপর যে বর্বরোচিত হামলা-হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে তার যেন বাস্তবরূপায়ন জীবনঢুলি। বাঙালি সংস্কৃতির পুনজাগরণের প্রেক্ষিতে গল্পের অন্তঃসূর। ২০১৫ সালে মোরশেদুল ইসলাম হুমায়ূন আহমেদের গল্প অবলম্বনে নির্মাণ করেন ‘অনিল বাগচীর একদিন’। মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে মানুষের অনিশ্চয়তা, মানবতা, স্বপ্ন-ভালোবাসার নানা অনুষঙ্গগুলো তুলে ধরা হয়েছে এ চলচ্চিতত্রে।

মুক্তিযুদ্ধের চিত্রকে আক্ষরিকভাবে তুলে না ধরলেও মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র হিসেবে ‘মাটির ময়না’ চলচ্চিত্রটি অত্যন্ত গুরুত্ববহ। এ চলচ্চিত্রটি ২০০২ সালে মুক্তি পায়। এটির কাহিনি ও পরিচালনায় তারেক মাসুদ। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের পটভূমিতে চলচ্চিত্রকারের ব্যক্তিগত স্মৃতিই এতে স্থান পেয়েছে। এক কিশোরের মাদ্রাসার শিক্ষাজীবনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন মাদ্রাসা শিক্ষা, ধর্মীয় অন্ধত্ব, পরিবারের সঙ্গে তার সম্পর্ক এবং রাজনীতির চেতনা ফুটে উঠেছে এতে। এ চলচ্চিত্রটি ‘কান ফিল্ম ফেস্টিভাল’ এ ডিরেক্টর’র ফোর্টনাইট ক্যাটাগরিতে প্রদর্শিত হয়। যা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে জন্য অত্যন্ত সম্মানজনক। এছাড়াও শাহ আলম কিরণের ‘৭১ এর মা জননী’, তৌকীর আহমেদের ‘জয়যাত্রা’ হুমায়ন আহমদের ‘শ্যামলছায়া’ প্রভৃতি চলচ্চিত্রগুলো মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র হিসেবে বিশেষ গুরুত্ববহ।

চলতি সময়েও বেশ কিছু চলচ্চিত্র আলোচনার শীর্ষে অবস্থা্ন করছে। তারমধ্যে কবি ও নির্মাতা মাসুদ পথিকের ‘মায়া : দ্য লস্ট মাদার’ অন্যতম। একজন বীরাঙ্গনা ও তার পরিবারের নানা সংঘাতগুলি এ চলচ্চিত্রের মূলসুর। অতিসম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধের কাহিনিনির্ভর নুরুল আলম আতিক নির্মাণ করেছেন ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’। বর্তমানে সিনেমাটি নানাভাবে আলোচিত হয়ে উঠছে।

এছাড়াও বিভিন্ন চলচ্চিত্রে সরাসরি ঘটনার প্রবহে বা প্র”ছন্নভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কিংবা মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট উঠে এসেছে। তারমধ্যে জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেওয়া’, ফকরুল আলমের ‘জয়বাংলা’, আনন্দের ‘বাঘা বাঙালী;, মমতাজ আলীর ‘রক্তাক্ত বাংলা’, আলমগীর কুমকুম-এর ‘আমার জন্মভূমি’, কবীর আনোয়ারের ‘শ্লোগান’, এস আলীর ‘বাংলার ২৪ বছর’, শহীদুল হক খানের ‘কলমীলতা’, হারুনুর রশীদের ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’, কাজী হায়াৎ-এর ‘সিপাহী’, তানভীর মোকাম্মেলের ‘নদীর নাম মধুমতি’, নাজির উদ্দীন রিজভীর ‘৭১ এর লাশ’, শামীম আখতারের ‘ইতিহাস কন্যা’ ‘শিলালিপি’, বিএম সালাউদ্দিনের ‘একজন মুক্তিযোদ্ধা’, খিজির হায়াত খানের ‘অস্তিত্বে আমার দেশ’, মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘স্পার্টাকাস’৭১’ মুশফিকুর রহমান গুলজারের ‘নিঝুম অরণ্যে’, শাহজাহান চৌধুরীর ‘আত্মদান’, মাসুদ আখন্দের ‘পিতা’, মিজানুর রহমান শামীমের ‘৭১ এর গেরিলা’ জাহিদুর রহিম অঞ্জনের ‘মেঘমল্লার’ মৃত্যুঞ্জয় দেবব্রতের ‘যুদ্ধশিশু’ প্রভৃতি অন্যতম।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিদেশেও নানা চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। তারমধ্যে প্রামাণ্য চিত্র  ও পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দু-ই আছে। আর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বাংলাদেশের প্রামাণ্য চিত্রে ব্যাপকহারে কাজ হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের চল”িচত্রগুলোতে বিষয়বস্থার নানা নিরীক্ষা হয়েছে। সম্প্রতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে নতুন নতুন সিনেমা তৈরির প্রচেষ্টা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। সেই ‘মুখ ও মুখোশ’ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প অত্যন্ত সংবেদনশীল পরিক্রমায় এগিয়েছে। প্রযুক্তিগত জায়গায় নানা পরিবর্তন-পরিবর্ধন ও সমৃদ্ধি এসেছে। ডিজিটাল ফিল্ম মেকিং পদ্ধতি চালু রয়েছে। অত্যাধুনিক নানা উপকরণ সংযুক্ত হলে দর্শকের সংকোচন হয়েছে। দেশের সিনেমা হলগুলো প্রায় বিলুপ্তের সম্মুখীন। সিনেমা শিল্পের উত্তরণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে। কোনো জাতিসত্তার আত্মপরিচয়ে তার সংস্কৃতির মৌলিকত্বের স্বরূপ প্রধান নির্ধারক হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। হাজার বছরের বাঙালি জাতিসত্তার রয়েছে গৌরবময় অতীত। অতীতের পথ বেয়ে আধুনিক ধ্যান-ধারণা ও প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হয়ে বিশ্বে স্বতন্ত্র মহিমায় সমুজ্জল হয়ে উঠুক তা আমাদের সবারই প্রত্যাশা।


তথ্যসূত্র
১) অনুপম হায়াৎ, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাস, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন, ঢাকা, ১৯৮৭
২) মির্জা তারেকুল কাদের, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ১৯৯৩
৩) আহমেদ আমিনুল ইসলাম, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র : আর্থসামাজিক পটভূমি, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ২০০৮
৪) আবদুল্লাহ জেয়াদ, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র পাঁচ দশকের ইতিহাস, জ্যোতিপ্রকাশ, ঢাকা, ২০১০
৫) খন্দকার মাহমুদুল হাসান, মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র, কথা প্রকাশ, ঢাকা, ২০১৫


Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.