× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

সপ্তাহের শ্রেষ্ঠদিন জুমআবার হিসেবে শুক্রবার: একটি বিশেষ পর্যালোচনা

মো. নিয়ামুল কবির

০৫ জুন ২০২২, ০৮:১৭ এএম

মো. নিয়ামুল কবির

শবে-মেরাজ, লাইলাতিম মোবারাকাত বা শবে-বরাত, শবে-কদর এবং জুমআ-এর রাত্রিগুলো বছরের সেরা রাত্রি । তবে ইয়াওম বা দিন হিসেবে শুক্রবার অন্যতম ।

আমাদের মনে এ রকম প্র্্শ্ন ঊদয় হওয়া স্বাভাবিক যে, শুক্রবার নামকরনের স্বার্থকতা কি ? অথবা এর কোন ঐতিহাসিক পটভূমি আছে কিনা ইত্যাদি। এ সমূদয় কৌতুহলের মীমাংসা মেলে বড় পীর  হযরত আবদুল কাদের জিলানী  (রহ:) রচিত গুনিয়াতুত্ ত্বালিবীন গ্রন্থের ২য় খন্ডের জুমআর দিন (শুক্রবার)-এর ফজীলত অধ্যায়ে । বড় পীর (রহ:)-এর বরাত দিয়ে আরও জানতে পারি,শায়খ আবু নসর হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা:) হতে সনদ পরম্পরায় বর্ননা করেন  যে, আল্লাহর  রাসুল (সা:) বলেন, “একদা ফেরেশতা হযরত জিব্রাঈল (আঃ) একটি সাদা পালক হাতে আমার নিকট আগমন করেন । উক্ত পালকের গায়ে  একটি কাল দাগ ছিল । আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার হাতে এটা কি? তিনি প্রত্যুত্তর করলেন, এটা শুক্রবার। এ দিবসে আপনার জন্য বহু পূণ্য জমা রয়েছে। আমি  জিজ্ঞাসা করলাম, কাল দাগ কেন? জিব্রাঈল (আঃ) আওয়াজ দিলেন,এটা কিয়ামত। মুদ্দাকথা, শুকবারেই কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। অন্যান্য সকল দিবসের তুলনায় শুক্রবার সর্বেসর্বা  আমাদের পরিভাষায় আমরা এ দিনকে ইয়াওমূল মাযীদ বা অতিরিক্ত পুরস্কার প্রাপ্তির দিন বলে আখ্যা দিয়ে থাকি। ফেরেশতারা এ দিনকে এ নামেই ডেকে থাকেন। এ দিনই জান্নাতবাসী আল্লাহ্ তাআলাকে দেখতে পাবেন। বর্ণিত আছে,প্রতি জুমআর দিন আল্লাহ্ তাআলা ছয় লাখ লোক জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেন। মহান সৃষ্টির্কতার তরফ হতে অসংখ্য নেয়ামত,ফজিলত ও বরকতময় উপঢৌকন দিয়ে সাজানো হয়  বেহেস্তের মরুদ্যান, সেখানকার অধিবাসী হবেন শুক্রবার জুমআর নামাজ সুসম্পন্নকারীগণ ।’’

শায়খ আবু নসর সনদ পরম্পরায় হযরত সালমান ফারসী (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন যে, হুজুরে পাক্ (সাঃ)  আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে সালমান! বলতে পার কি জুমআর দিনটির নাম জুমআ কেন হল ? আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) তাতো বলতে পারিনা ।  হুযুর (সাঃ) এরশাদ করলেন, ঐ দিন বাবা আদম (আঃ)-এর দেহ তৈরির খামীর ( চার উপাদান যথা  মাটি, পানি, বাতাস ও আগুন  মিশ্রিত মন্ডা ) জমা (একত্রিত) করা হয়েছিল বলে ঐ দিনটির নাম জুমাআ রাখা হয়েছে। কোন কোন রেওয়ায়েতে বিদ্যমান, জুমআ শব্দটি এজতেমা শব্দ হতে চয়ন করা হয়েছে।  কোন কোন ঐতিহাসিক রেওয়ায়েত করেন যে,সৃষ্টির পর আদি পিতা হযরত আদম (আঃ) ও আদি মাতা হযরত হাওয়া (আঃ) সর্ব প্রথম দুজনের সাক্ষাতের দিবসটি জুমআ হিসেবে পরিচিত। কোন কোন বর্ণনায় এসেছে ,আদি পিতা ও আদি মাতা দুজনার দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর আরাফার ময়দানে যে মিলন ঘটে সেটিও জুমআ বার হিসেবে খ্যাত । সর্বশেষে, এখন আমরা যা লক্ষ্য করে থাকি তাহল শহর ও গ্রামাঞ্চলের  সকল মুসলিমগণ সপ্তাহের একটি বিশেষ দিনে একত্রিত  হয়ে নামাজ আদায় করেন,এ দিনটিও সবার নিকট জুমআ বার হিসেবে পরিচিত।  পরিশেষে, এ দিনটিতে কিয়ামত সংঘটিত হবে বলেই এর নাম হয়েছে ইয়াওমে জুমআ । কারন হল,কিয়ামত দিবসটি সকল মানব জাতির একত্রিত হওয়ার দিন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে । 

এ প্রসঙ্গে মহান রাব্বুল আলামীন বলেন- “ ইয়াওমা ইয়ায্ মাউকুম্ লিইয়াওমিল্ জাম্য়ি অর্থাৎ-“যে দিন তোমাদেরকে সমবেত করার জন্য একত্রিত করা হবে ।”

আবদুল্লাহ ইবনে মানযার হতে বর্ণিত তিনি বলেন, দয়াল রাসুলে পাক (সাঃ) বলেছেন ,শুক্রবার অন্যান্য দিনের সর্দার। অন্যান্য দিন অপেক্ষা এ দিন আল্লাহ্ তায়ালার নিকট  অধিক মর্যাদা সম্পন্ন । এমন কি ঈদের দিন  অপেক্ষাও এ বেশী বোযর্গ।আল্লাহ্ তায়ালা শুক্রবারকে ৫টি বোযর্গী দান করেছেন। যেমন- 

০১. এ দিবসে হযরত আদম (আ ঃ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে ।

০২. তাঁকে দুনিয়াতে পঠানো হয়েছে । 

০৩. তিনি  এ নশ্বর পৃথিবী ত্যাগ করেছেন ।

০৪. এ দিনের বিশেষ একটি সময়ে হারাম বস্তু ব্যতিত মু’মিন ব্যক্তির সকল প্রার্থণাই আল্লাহ্ কবুল করে থাকেন ।

০৫.বিশ্ব ভূবন বিলীন হবে।

ইমাম  গাজ্জালী (রহঃ)-এর আল-মুরশিদুল আমীন কিতাবের এক বর্ণনায় পাওয়া যায় যে জুমআর দিনের বিশিষ্ট কয়েকটি সময় হচ্ছে, ছুবেহ ছাদেক হতে শুর করে সূর্যোদয় পর্যন্ত। সূর্যোদয়ের পর হতে এক প্রহর বেলা পর্যন্ত, দ্বি প্রহরে সূর্য স্থির হয়ে যাওয়ার পর হতে শুরু করে পশ্চিম দিকে কিছুটা হেলে যাওয়া পর্যন্ত । সূর্যের রশ্মী ম্লান হয়ে যাওয়ার সময়টি অর্থাৎ সূর্যাস্ত হওয়ার পূর্ব মূহুর্তটি।  এ সময়গুলোর জন্য পূর্ব হতেই বিশেষভাবে প্রস্তুত থাকা জরুরি। এ সময় বেশী করে দরুদ পাঠ করার নির্দেশ আছে। 

রাসূলে খোদা (সাঃ) বলেছেন- “মনোরম রাত্রি এবং সুন্দর দিনে আমার উপর সবচেয়ে বেশী দরুদ পাঠ করিও।”

এখানে মনোরম রাত্রি দ্বারা বৃহ¯পতিবার দিবাগত রাত্রি এবং সুন্দর দিন বলতে শুক্রবার দিনকে বুঝানো হয়েছে।

ইমাম গাজ্জালী  (রহঃ)-এর মুকাশাফাতুল কুলুব বা আত্মার আলোকস্তম্ভ  নামক গ্রন্থের - ২য় খন্ডে ২৮২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত  আছে যে, হযরত কাব (রাঃ) বলেন,

“সব জনপদের মধ্যে আল্লাহ্ তাআলা মক্কা শরীফকে, মাস সমূহের মধ্যে রমজানকে, দিন সমূহের মধ্যে জুমআর দিনকে এবং রাত সমূহের মধ্যে কদর এর রাতকে ফযীলত দিয়েছেন। কথিত আছে, জুমআর দিন পক্ষীকুল ও পোকা মাকড় একে অন্যের সাথে সাক্ষাত করে এবং বলে, সালাম-সালাম (শান্তি-শান্তি) - এ দিন বরকতময় দিন। ”

কোন কোন রেওয়াতে আছে,এ দিবসের সূর্যোদয় অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশী উজ্জ্বল দেখায়। এ দিবসে মুসুল্লীগণ যার যার মর্জি মতো তওবা- ইস্তেগ্ফার, জিকির-আজগার, ছদ্কা প্রদান, নফল ইবাদত, কোরআন তেলাওয়াত, মিলাদ, মোরাকাবা প্রভৃতি ধ্যান-সাধণা করে থাকেন। বর্ণিত আছে, কিতাবধারী সব সম্প্রদায়কেই জুমআর নামাজ দেয়া হয়েছিল, তারা তাতে মতভেদ করে এবং তৎপ্রতি উদাসীনতা প্রদর্শন করে। আল্লাহ্ তাআলা আমাদেরকে জুমআর নামাজের প্রতি পথনির্দেশ করেছেন এবং এ উম্মতের জন্য এ নামাজ বিলম্বিত করেছেন,এ দিনকে তাদের জন্য ঈদ করেছেন। অতএব, জুমআর ব্যাপারে মুসলমানগণ অন্যসব মানুষের চেয়ে অগ্রগামী এবং অবশিষ্ট কিতাবধারী সম্প্রদায় (ইহুদী ও খ্রিস্টান) মুসলমানদের অনুসারী। এ দিন দ্বারা আল্লাহ্ ইসলামকে সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছেন এবং মুসলমানদের জন্য এ দিনটি বিশেষ ভাবে নির্দিষ্ট করেছেন। 

জুমআর ফযীলত প্রসঙ্গে মহান রাব্বুল আলামীন বলেন- “ইয়া-আইয়্যূহাল্লাযিই্না আমানুও ইযা নুওদিয়া লিস্সালাতি মিইয়াওমিল জুমুআতি ফাছআও ইলা-যিক্রিল্লাহি ওয়াযারুল বায়আ;যালিকুম্ খাইরূল্লাকুম্ ইন্ কুন্তুম্ তা’লামুউন”

অর্থ- “হে মুমেনগণ! যখন জুমুআর দিনে (জুমুআর) নামাজের জন্য আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহ্র যিক্রের দিকে ধাবিত হও  এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর ইহা তোমাদের জন্য অধিক উত্তম ,যদি তোমাদের কিছু জ্ঞান থাকে ।” -সুরা জুমুআ ৬২,আয়াত-৯

লেখক: মো. নিয়ামুল কবির, অধ্যক্ষ, নবযুগ কলে, কুশুরা, ধামরাই, ঢাকা

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.