দক্ষিণ কুমিল্লার মানুষের মধ্যে অন্যতম বড় উৎসব ছিল ঐতিহ্যবাহী 'ঠাণ্ডা কালী' মেলা ঠাণ্ডা। জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার হাসানপুর রেললাইন সংলগ্ন মোগরা গ্রামের মাঠে অনুষ্ঠিত এ মেলায় সমাগম হতো কয়েক লাখ মানুষের। শুধু নাঙ্গলকোট নয়, কুমিল্লার অন্যান্য উপজেলা, নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লক্ষ্মীপুর জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষেরও ব্যাপক উপিস্থিতি থাকতো এ মেলায়। প্রতি বাংলা সনের মাঘ মাসের ১ তারিখ মেলাটি অনুষ্ঠিত হতো।
মেলা উপলক্ষে মোগরা, হাসানপুর, ঢালুয়াসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামের মানুষ পরিপাটি করে ঘরবাড়ি সাজাতো। মেলার দিন মেয়ে, মেয়ে জামাই ও আত্মীয়-স্বজনদের উপস্থিতিও অনেকটা সরব ছিল। জামাই আদরের জন্য বড় বড় সামুদ্রিক মাছ, রুই-কাতলা-মৃগেল-বোয়াল কিনে নিতেন শ্বশুর বাড়ির লোকজন। শুধু মেলারস্থল নয়, আশেপাশের কয়েক কিলোমিটার জুড়ে মিনি মেলাও বসতো।
আজ শনিবার (১লা মাঘ) সেই মেলার দিন। কিন্তু করোনাে প্রকোপের কারণে মেলা আয়োজনের সকল প্রস্তুতি থাকলেও গতবারের ন্যায় এ বছরও মেলাটি বসেনি। মাঝে করোনা সংক্রমণ কমে যাওয়ায় মেলার প্রস্তুতিও চলে জোরেশোরে। ওমিক্রনের বিস্তারের কারণে শেষ পর্যন্ত মেলার ইজারা বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে, গত ১৩ জানুয়ারি মেলাকে কেন্দ্র করে মৌকরার বিরুলিয়া গ্রামে হিলিয়াম গ্যাস দিয়ে বেলুন ফোলানোর সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত হয়ে ৪১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। যাদের মধ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে ৯ জনকে। সেখানে একজন আইসিইউতে ভর্তি আছেন। বাকিরা চিকিৎসা নিচ্ছেন কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
মেলা নিয়ে বেদনা হয়তো আছে, তারপরও উৎসব ধরে রাখতে নাঙ্গলকোটের বিভিন্ন বাজারগুলোতে মিনি মেলা বসানো হয়েছে। শনিবার দুপুরে নাঙ্গলকোটের পৌর বাজার, কোচপাড়া, বটতলী, ঢালুয়া ও মিয়া বাজারে গিয়ে দেখা যায়, খেলনা, জিলাপি, তিলের খাজা, বাতাসা ও মাছের দোকান বসেছে। এসময় দোকানগুলোতে ব্যাপক ভিড় দেখা যায়।
নাঙ্গলকোটের বাসিন্দা ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ শাজাহান বলেন, ছোট বেলায় প্রতি বছরই ঠাণ্ডা কালিবাড়ির মেলায় যেতাম। শৈশ্ববের আবেগ জড়িত আছে মেলাটিকে ঘিরে। মেলার দিন উৎসবের মাতম বয়ে যেত। বাবা-ছোট ভাইসহ হেঁটে হেঁটে মেলায় চলে যেতাম।
নাঙ্গলকোটের স্থানীয় সাংবাদিক মুকুল মজুমদার বলেন, ঠাণ্ডা কালিবাড়ি মেলার জন্য সারা বছর অধীর আগ্রহে থাকতাম। খুব সকালে মেলায় গিয়ে বড় মাছ নিয়ে আসতাম। বিকেল বেলায় আবার যেতাম। অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করতো তখন।
মৌকরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন বলেন, মেলা যেখানে অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে কালিবাড়ি ও কালিমন্দির ছিল। মাঘ মাসের এক তারিখ ঠাণ্ডার সময় এবং কালিবাড়ির নাম সংযুক্ত করে এর নাম হয়েছে ঠাণ্ডা কালিবাড়ি মেলা। ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে এ স্থানে মেলাটি বসে। এবারসহ দুই বছর করোনার কারণে মেলার ডাক নেওয়া হয়নি।