× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে ১৩৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তির সিদ্ধান্ত

শাহনাজ পারভীন এলিস

০১ ডিসেম্বর ২০২২, ০৫:১৯ এএম । আপডেটঃ ০১ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:৪৩ এএম

গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে অনিয়মের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত ১২ অক্টোবরে উপনির্বাচনে অনিয়মের ঘটনায় রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ ১৩৩ নির্বাচনি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে আগারগাঁয়ের নির্বাচন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসব সুপারিশের তথ্য জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। 

ঘটনায় জড়িত অন্যরা হলেন- ১২৫ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুশান্ত কুমার সাহা, একজন নির্বাহী অফিসার এবং ৫ জন পুলিশ কর্মকর্তা। এছাড়া অনিয়ম হওয়া ১৪৫ নির্বাচনি কেন্দ্রের পোলিং এজেন্টেরা ভবিষ্যতে কোনও নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। তবে প্রার্থী ও ডিসি-এসপিদের সরাসরি সম্পৃক্ততা প্রমাণিত না হওয়ায় ওই ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির কোন সুপারিশ করা হয়নি। 

সিইসি জানান, ওই ঘটনায় বন্ধ হয়ে যাওয়া ওই আসনের উপ-নির্বাচনের নতুন তারিখ আগমী সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে। 

তিনি আরও জানান, ঘটনায় অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ আইন অনুসারে বিভিন্ন মেয়াদের শাস্তির ব্যবস্থা নেবে তাদের নিজ নিজ নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। এ ব্যাপারে তাদের শাস্তি কার্যকর করার পর ওই প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগামী এক মাসের মধ্যে তা ইসিকে জানাতে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। তবে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। কারণ তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। নির্বাচন চলাকালে যেসব কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে, সেখানে যারা নির্বাচনি এজেন্ট ছিলেন, যাদের তালিকা ইসির কাছে আছে- সেই তালিকা দেখে অনিয়মে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

তিনি জানান, গাইবান্ধা উপনির্বাচনে অনিয়মের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনা কমিশন এসব সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে।

প্রতিবদেনে অভিযুক্ত পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তা হলেন- ২ নম্বর কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তরুণ কুমার, এসআই (গোবিন্দগঞ্জ থানা), ৫৪ নম্বর কেন্দ্রের মো. আবদুল্লাহ আল মামুন, এসআই (গোবিন্দগঞ্জ থানা), ৫৯ নম্বর কেন্দ্রের মো. আনিছুর রহমান, এসআই (গোবিন্দগঞ্জ থানা), ৬২ নম্বর কেন্দ্রের কনক রঞ্জন বর্মন, এসআই (সাদুল্যাপুর থানা) ও ১০৫ নম্বর কেন্দ্রের মো. দুলাল হোসেন, এএসআই, (আটোয়ারী থানা, পঞ্চগড়)।

কাজী হাবিবুল আউয়াল জানান, অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলা তথা অসদাচারণের কারণে গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (সার্বিক) বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১-এর বিধান অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হবে। কর্তৃপক্ষ আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনকে এক মাসের মধ্যে অবহিত করবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, ‘ওই আসনে পুনরায় ভোটের তারিখ আাগামী সপ্তাহে জানানো হবে। তবে খুবই সংক্ষিপ্ত একটি সময় দেওয়া হবে। ভোটের একটি দিন দিয়ে পুনরায় সময় জানানো হবে। কবে ভোট হবে ও কারা দায়িত্বে থাকবেন তা জানানো হবে। সব প্রার্থী আগের মতোই থাকবেন।’

ঘটনা পর্যালোচনায় ইসির পরবর্তী সিদ্ধান্ত

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়- ১২৫টি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছেন। তাদের নামের তালিকা সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫ অনুযায়ী তাদের নিজ নিজ নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবে। ওইসব কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব পালনে অবহেলা তথা অসদাচরণের কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনকে এক মাসের মধ্যে অবহিত করবে।

উদয়ন ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক ও ৯৪নং কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. সাইফুল ইসলামকে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫(৩) অনুযায়ী চাকরি থেকে দুই মাসের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করবে। সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে তার বিরুদ্ধে অসদাচরণের জন্য বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে এক মাসের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করবে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুশান্ত কুমার সাহার বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫ অনুসারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অসদাচরণের জন্য ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত ব্যবস্থা নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে এক মাসের মধ্যে অবহিত করার জন্য বলা হচ্ছে।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সহকারী কমিশনারের নাম জেনে (তদন্ত প্রতিবেদনে নাম উল্লেখ নেই) তাকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অবৈধ আদেশ পালনের বিষয়ে সতর্ক করে চিঠি দেবে।

রিটার্নিং অফিসার সাইফুল ইসলামের (আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, রাজশাহী) বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫ অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগ আনা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবেন। এক মাসের মধ্যে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনকে অবহিত না করলে কমিশন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৬ (২) অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।

সব কেন্দ্রের দায়িত্বপালনকারী নির্বাচনি এজেন্টদের তালিকা প্রিসাইডিং অফিসার কর্তৃক সিলকৃত ব্যাগে রয়েছে। যেহেতু নির্বাচন বন্ধ করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে আদালতের কোন নিষেধাজ্ঞা নেই, তাই যেসব কেন্দ্রের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে সেসব কেন্দ্রের ব্যাগ খুলে দায়ী এজেন্টদের একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। গাইবান্ধা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এই তালিকা করবেন। দোষী নির্বাচনি এজেন্টদের পরবর্তী নির্বাচনে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করা যাবে না।

ভবিষ্যতে নির্বাচনে কোনো ধরনের অনিয়ম করা হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোরতম ধারায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এবং গাইবান্ধা-৫ আসনের পুননির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হবে।

গত ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনে উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলাকালে অনিয়মের কারণে একপর্যায়ে ভোট গ্রহণ পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। পরে অনিয়মে সম্পৃক্তদের চিহ্নিত করতে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমারকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

ওই ঘটনায় সংসদীয় কোন আসনের নির্বাচন অনিয়মের জন্য সবগুলো কেন্দ্র বন্ধ করা নির্বাচন কমিশনের ইতিহাসে এটিই প্রথম। কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে অনিয়মের ঘটনা তদন্ত করে এ সিদ্ধান্ত নিতে দেড় মাস সময় নিয়েছে। এরমধ্যে সাবেক সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করে পরামর্শ নেয়। সে সময় আলোচনায় আগামীর জন্যে অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিতে কমিশনের অবস্থানকে সাধুবাদ জানিয়ে তারা বলেন, এ ধরনের অনিয়ম রোধে বর্তমান কমিশনও বার্তা দিয়েছে- ভবিষ্যতে নির্বাচনে কোন ধরনের অনিয়ম করা হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোরতম ধারায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.