× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

ডা. মুরাদের পদত্যাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:৪৮ এএম । আপডেটঃ ০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১১:০২ এএম

পদত্যাগ করেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। আজ মঙ্গলবার  ‍দুপুরে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। নিজ মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন ডা. মুরাদ। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসৌজন্যমূলক বক্তব্য দেওয়ায় তাকে মঙ্গলবারের মধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পর তিনি পদত্যাগ করলেন।

মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে পাঠান প্রতিমন্ত্রী। বর্তমানে ডা. মুরাদ চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জানান, পদত্যাগের জন্য তিনি ‘ব্যক্তিগত কারণের’ কথা বলেছেন।

গিয়াস গণমাধ্যমকে বলেন, ‘স্যার পদত্যাগপত্র মেইলে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠিয়েছেন।’

মুরাদ হাসান কোথায় আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্যার কোথায় রয়েছেন, তা এই মুহূর্তে বলতে পারব না।’ তবে মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ‘প্রতিমন্ত্রী বর্তমানে চট্টগ্রামে এক বন্ধুর বাসায় অবস্থান করছেন। সেখান থেকেই তিনি স্বাক্ষর করেছেন।’

পরবর্তী পদক্ষেপ জানতে চাইলে মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘সচিব স্যারের অপেক্ষায় আছি। তিনি (সচিব) পরবর্তী নির্দেশনা দেবেন।’ বিধি অনুযায়ী পদত্যাগপত্র কার্যকর হওয়ার জন্য এখন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা পড়তে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বরাবর লেখা পদত্যাগপত্রের বিষয়ে ডা. মুরাদ হাসান লিখেছেন, ‘প্রতিমন্ত্রীর পদ হতে ব্যক্তিগত কারণে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ’। 

তাতে আরও লেখা হয়েছে, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্ব-শ্রদ্ধেয় সালাম নিবেন। আমাকে ‘১৯ মে ২০২১’ তারিখে (প্রকৃতপক্ষে ২০১৯ সালের ১৯ মে) সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। আমি আজ (৭ ডিসেম্বর) থেকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে ব্যক্তিগত কারণে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে ইচ্ছুক।’

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাতনিকে নিয়ে বর্ণ ও নারীবিদ্বেষী বক্তব্যেরর কারণে মুরাদকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কয়েক দিন ধরে সমালোচনা চলছিল।

এর মধ্যে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে তার অশালীন ফোনালাপের একটি অডিও ছড়িয়ে পড়লে গত সোমবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মুরাদের পদত্যাগের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা জানান।

ওই অডিওটির বিষয়ে মুরাদ হাসানের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সোমবার সারাদিন চেষ্টা করেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাকে জনসমক্ষেও দেখা যায়নি, এক অনুষ্ঠানে তার অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও তিনি যাননি।

সোমবার রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার বাসভবনে ডা. মুরাদ হাসানের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান, ‘সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে এবং আমি রাত ৮টায় প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে বার্তাটি পৌঁছে দিয়েছি।’

সম্প্রতি তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান এবং তার মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে একটি সাক্ষাৎকারে অসৌজন্যমূলক কথা বলেন। এছাড়া এর কিছু পরেই প্রতিমন্ত্রী মুরাদের একটি কথোপকথন ফাঁস হয়, যেখানে তিনি অশ্লীল ভাষায় চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য বলেন। ফোনে চিত্রনায়ক ইমনকে তিনি বলেন, ঘাড় ধরে যেন মাহিকে তার কাছে নিয়ে যান। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন মহলে ডা. মুরাদের শাস্তির দাবি ওঠে।

এদিকে, তথ্য প্রতিমন্ত্রীর ‘নারী বিদ্বেষমূলক’ বক্তব্যে দল বা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সোমবার দুপুরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, এটা তার ব্যক্তিগত মন্তব্য হতে পারে। আমাদের দল বা সরকারের কোনো বক্তব্য বা মন্তব্য নয়। অবশ্যই আমি বিষয়টি নিয়ে, এ ধরনের বক্তব্য কেন সে দিলো, এটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবো। এরপরই রাতে ডা. মুরাদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের কথা জানান ওবায়দুল কাদের।

এর মধ্যেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেন, মুরাদ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় ছাত্রদলে যুক্ত ছিলেন। তার বক্তব্য পরে তৎকালীন ছাত্রনেতারাও নিশ্চিত করেন। 

ছাত্রদল থেকে ছাত্রলীগে আসার এই তথ্য প্রকাশের আগে রোববার থেকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। 

তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মুরাদ হাসান ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর ২০০১ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এসবিবিএস পাস করেন। ২০১১ সালে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে এম ফিল ডিগ্রি নেন।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া জীবনীতে দাবি করা হয়েছে, ১৯৭৪ সালে জন্ম নেওয়া মুরাদ ১৯৯৪ সালে ছাত্রলীগের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখার ‘কার্যকরী সদস্য’ ১৯৯৭ সালে ‘সাংগঠনিক সম্পাদক’ এবং ২০০০ সালে ‘সভাপতি’  নির্বাচিত হন।

২০০৩ সালে আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ‘কার্যকরী সদস্য’ নির্বাচিত হন মুরাদ। পাশাপাশি জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের ‘কার্যকরী সদস্য’, সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের ‘কার্যকরী সদস্য’, জামালপুর জেলা কমিটির ‘স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক’র দায়িত্বও তিনি পালন করেন।

জামালপুরের আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান তালুকদারের ছেলে মুরাদ ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকেটে জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী, মেস্টা ও তিতপল্যা) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৮ সালে তিনি দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য হন।

২০১৯ সালে শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মুরাদ। ২০১৯ সালে তাকে স্বাস্থ্য থেকে সরিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।


দপ্তর সাজানো শেষ হলোনা

১০ দিন আগে শুরু হয়েছিল তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর দপ্তর পুনরায় সাজানোর কাজ। করা হচ্ছিল নতুনভাবে ডেকোরেশন। কাজ শেষ হতে মাত্র একদিন বাকি। তার আগেই পদত্যাগ করতে হলো প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে। তার দফতরে গিয়ে দেখা যায়, নতুনভাবে সাজানো হচ্ছে সবকিছু। কাজ প্রায় শেষের দিকে।

ডেকোরেশনের কাজ করা একজন শ্রমিক বলেন, ১০/১২ দিন আগে রুমটি নতুনভাবে ডেকোরেশন করার কাজ শুরু হয়েছিল। 

মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, কয়েকদিন আগেও রুমটি পরিদর্শন করার সময় যারা কাজ করছিলেন তাদের উদ্দেশে প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘সুন্দরভাবে কাজটি কর, আর কতদিন থাকি না থাকি জানি না।’

বেশ কয়েকদিন ধরেই বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ডা. মুরাদ হাসান। বিশেষ করে রাষ্ট্রধর্ম, রাজনীতি, খালেদা জিয়ার নাতনি ও সবশেষ ফোনালাপ ফাঁস নিয়ে ভেতর-বাইরে আলোচনা-সমালোচনায় ছিলেন। তার উল্টাপাল্টা মন্তব্য এবং অস্বাভাবিক আচরণের কারণে দলীয় সহকর্মীদেরও বিব্রত হতে হয়েছে।

এদিকে মুরাদ হাসানকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে আগামী কার্যনির্বাহী সভায় সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। সংশ্লিষ্টদের মতে, দল থেকে বহিষ্কার হলে তাকে সংসদ সদস্যপদও হারাতে হতে পারে।

মুরাদ হাসান পেশায় চিকিৎসক ও আওয়ামীপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য।


Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.