জ্বালানি তেল ও গ্যাসের আমদানি মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকার রয়েসয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা বিদ্যুতের যাওয়া-আসার স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে।
কয়েক বছর ধরে সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের অভ্যাসের কারণে বিদ্যুতের এই যাওয়া-আসা মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে, সামাজিকমাধ্যমে অসন্তোষের কথা তুলেও ধরছেন হাজারো মানুষ।
সরকার জানাচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্য, বিশেষ করে এলএনজির দামে লাফ, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কয়লা সরবরাহে বিঘ্নের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমাতে হয়েছে।
পাওয়ার সেলের তথ্যানুযায়ী, দেশে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১৫ হাজার মেগাওয়াট। সেই জায়গায় উৎপাদন হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৩ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত।
বিদ্যুতের নীতি-গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেল এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের চাহিদা এক হাজার মেগাওয়াট কমাতে চাইছে। ঈদের পর রাত আটটায় দোকান বন্ধ ছাড়াও আরও নানা পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলছে প্রতিষ্ঠানটি। বাকি এক হাজার মেগাওয়াটের ঘাটতি সারা দেশে যৌক্তিকভাবে লোডশেডিং দেয়া হলে তা সহনীয় পর্যায়ে থাকবে বলে মনে করছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন।
দেশে বিদ্যুতের চাহিদা কমাতে সব মার্কেট, শপিংমল রাত ৮টার মধ্যে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। কিন্তু ঈদের কারণে ব্যবসায়ীদের অনুরোধে এই সিদ্ধান্ত আগামী ১০ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।
কথা হচ্ছে, কত দিন এভাবে চলবে আর পরিস্থিতির উত্তরণ কবে। বিদ্যুৎসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই প্রশ্নের সহজ জবাব নেই। সব নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির ওপর।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা যে তথ্য জানিয়েছেন, তাতে এটা স্পষ্ট যে, সব এলাকাতেই বিদ্যুতের যাওয়া-আসার সমস্যা আছে। তবে একটানা দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ থাকছে না-পরিস্থিতি এমন নয়। ১৫ থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত একনাগাড়ে বিদ্যুৎ যাওয়ার কথাই বলছেন গ্রাহকরা। কোথাও কোথাও এক-দুইবার এক ঘণ্টার লোডশেডিং হচ্ছে।
পোস্তগোলার হাসনাবাদের বাসিন্দা মোমেনা আক্তার মিতু বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর হয়েছে কারেন্ট তো যেতই না। গত দুই দিন হলো আবার লোডশেডিং শুরু হয়েছে। গতকাল রাতে গেছে। দিনের বেলা গেছে।’
নাখালাপাড়ার বাসিন্দা খাদিজা বেগম বলেন, ‘এখন কারেন্ট গেলে আধা ঘণ্টা বা এক ঘণ্টা থাকে না। আজকেও দুইবার লোডশেডিং হয়েছে। দিনে দুইবার করে কারেন্ট যায়।’
কাঁঠালবাগানের ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম টিংকু বলেন, ‘প্রতিদিন একবার দুবার যাচ্ছে। গত মাসে ১০ দিনে একবার-দুইবার বিদ্যুৎ গেলেও এ মাসের শুরু থেকেই প্রতিদিন যাচ্ছে।’
বিদ্যুতের এই সংকটে সরকারের পরিকল্পনা কী জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘এটা বৈশ্বিক সংকট, আমাদের একার নয়। আমরা তিন দিন ধরে এই সংকট মোকাবিলা করছি, আর সারা বিশ্ব দুই মাস ধরে এই সংকট মোকাবিলা করছে।
‘সবাই শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি জানে। জ্বালানির অভাবে রাষ্ট্রযন্ত্র পর্যন্ত বন্ধ করে দিতে হয়েছে, পাকিস্তানেও একই অবস্থা। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশ বাদেই জাপান, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে পরিকল্পিতভাবে লোডশেডিং করা লাগছে। সেই জায়গা থেকে আমরা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে বিগত দিনগুলো কাটিয়ে ফেলছি।’
তিনি বলেন, ‘জ্বালানির দাম বাড়তি থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় আরও বেড়ে যাবে, যা গ্রাহকের বহন করার সক্ষমতা থাকবে না। সে জন্য পরিকল্পিতভাবে রেশনিংয়ে যাচ্ছি আমরা।’
কবে এই সংকটের সমাধান হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু এই সংকটটা বৈশ্বিক, ফলে তা কবে শেষ হবে তা আনসারটেইন।’
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh