× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

কমলগঞ্জে বিলুপ্তির পথে চুঙ্গাপোড়া পিঠার ঢলুবাঁশ

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি

১৪ জানুয়ারি ২০২২, ১৬:৫৭ পিএম

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে প্রাচীন ঐতিহ্য পিঠা-পুলির অন্যতম চুঙ্গাপোড়া পিঠা বা চুঙ্গাপিঠা। চুঙ্গা হলো বাঁশের ছোট ছোট টুকরা। মূলত এ পিঠা সিলেট অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার। একসময় এ পিঠা সিলেট ও মৌলভীবাজারের গ্রামীণ জনপদে বেশ জনপ্রিয় ছিল। বাঁশের বহুবিধ ব্যবহারের কথা মানুষ জানে। কিন্তু বাঁশ দিয়ে পিঠা তৈরি করা যায় সিলেটের মানুষ ছাড়া এ খবর কজনই বা জানে। হ্যাঁ, বাঁশ দিয়ে পিঠাও তৈরি হয়, যাকে সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় চুঙ্গাপোড়া পিঠা বা চুঙ্গাপিঠা বলে।

চুঙ্গাপিঠা বৃহত্তর সিলেটের ঐতিহ্য হলেও একসময় মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলায় এ পিঠার প্রচলন দেখা যেত বেশি। এ পিঠার অন্যতম উপকরণ হলো পাহাড়ি ঢলু বাঁশ, যা দিয়েই মূলত এ পিঠা তৈরি করা যায়। প্রাচীন ঐতিহ্যের চুঙ্গাপোড়া পিঠা এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।

আগের মতো এখন আর গ্রামীণ এলাকার বাড়িতে বাড়িতে চুঙ্গাপুড়ার আয়োজন চোখে পড়ে না। শীতের রাতে খড়কুটো জ্বালিয়ে সারারাত চুঙ্গাপুড়ার দৃশ্যও তাই দেখা যায় না। একটা সময় ছিল শীতের মৌসুমে গ্রামীণ জনপদে প্রায়ই বাজারে মাছের মেলা বসত, বিশেষ করে সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম উৎসব পৌষ সংক্রান্তির সময়।

কিন্তু, এখন শুধু পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে এই জেলার বিভিন্ন হাঠ বাজারে মাছের মেলা বসে। সেই মেলা থেকে মাছ কিনে কিংবা হাওর-নদীর হতে বড় বড় রুই, কাতলা, চিতল, বোয়াল, পাবদা, কই, মাগুর, মাছ ধরে নিয়ে এসে হাল্কা মসলা দিয়ে ভেজে (আঞ্চলিক ভাষায় মাছ বিরান) দিয়ে চুঙ্গাপোড়া পিঠা খাওয়া ছিল মৌলভীবাজার ও সিলেটের সনাতন ধর্মীদের একটি অন্যতম ঐতিহ্য।

বাড়িতে মেহমান বা নতুন জামাইকে শেষ পাতে চুঙ্গাপোড়া পিঠা মাছ ভাজা আর নারিকেলের পিঠা পরিবেশন না করলে যেনো লজ্জায় মাথা কাটা যেত। বর্তমানে সেই দিন আর নেই। চুঙ্গাপিঠা তৈরির প্রধান উপকরণ ঢলু বাঁশ ও বিরইন ধানের চাল (বিন্নি ধানের চাল) সরবরাহ এখন অনেক কমে গেছে। এগুলো এখন আর আগের মতো চাষাবাদ ও হয় না। বলতে গেলে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে চুঙ্গাপিঠা তৈরির প্রধান উপকরণ ঢলু বাঁশ।

মৌলভীবাজারের বড়লেখার পাথরিয়া পাহাড়, জুড়ীর লাঠিটিলা, রাজনগরসহ বিভিন্ন উপজেলার টিলায় টিলায় ও চা-বাগানের টিলায়, কুলাউড়ার গাজীপুরের পাহাড়, জুড়ী উপজেলার চুঙ্গাবাড়ীতে ও কমলগঞ্জের পাহাড়ী এলাকায় প্রচুর ঢলুবাঁশ পাওয়া যেত। তন্মধ্যে চুঙ্গাবাড়ীও এক সময় প্রসিদ্ধ ছিল ঢলুবাঁশের জন্যে। অনেক আগেই বনদস্যু ও ভূমিদস্যু এবং পাহাড়খেকোদের কারণে বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাওয়ায় হারিয়ে গেছে ঢলুবাঁশ। তবে জেলার কিছু কিছু টিলায় এখন ও ঢলুবাঁশ পাওয়া যায়।

পাহাড়ে বাঁশ নাই বলে বাজারে এই ঢলুবাঁশের দামও এখন তাই বেশ চড়া। ব্যবসায়ীরা দূরবর্তী এলাকা থেকে এই ঢলুবাঁশ কিনে নিয়ে যান নিজ নিজ উপজেলার বাজারসমূহে বিক্রির আশায়। এই বাঁশটি ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। ঢলুবাঁশ ছাড়া চুঙ্গাপিঠা তৈরি করা যায় না। কারণ ঢলুবাঁশে এক ধরনের তৈলাক্ত রাসায়নিক পদার্থ আছে, যা আগুনে বাঁশের চুঙ্গাকে না পোড়াতে সাহায্য করে। ঢলুবাঁশে অত্যধিক রস থাকায় আগুনে না পুড়ে ভেতরের পিঠা আগুনের তাপে সিদ্ধ হয়।

ঢলুবাঁশের চুঙ্গা দিয়ে ভিন্ন স্বাদের পিঠা তৈরি করা হয়ে থাকে। কোনো কোনো জায়গায় চুঙ্গার ভেতরে বিন্নি চাল, দুধ, চিনি, নারিকেল ও চালের গুড়া দিয়ে পিঠা তৈরি করা হয়। পিঠা তৈরি হয়ে গেলে মোমবাতির মতো চুঙ্গা থেকে পিঠা আলাদা হয়ে যায়। চুঙ্গাপিঠা পোড়াতে আবার প্রচুর পরিমাণে খড় (নেরা) দরকার পড়ে। এই খড়ও এখন সময়ের প্রয়োজনে দাম একটু বেশি।

পিঠা তৈরি করার জন্য ডলুবাশঁ নিতে আসা আব্দুল বাছিত খান এ প্রতিবেদককে বলেন, আসলে সব সময় তো এই জিনিসগুলো পাওয়া যায় না। পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে এগুলো খুব কম পরিমাণ বাজারে উঠেছে। আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগে প্রচুর দেখা যেত। এখন কালের পরিবর্তনে হারিয়ে বসেছে। বাজারে আসার পরিবারের সদস্যরা বললেন, পিঠা তৈরির জন্য এই ঢলুবাঁশ পেলে নিয়ে যেতাম। কিন্তু কয়েকটা বাজার ঘুরেও পাইনি।

কমলগঞ্জ উপজেলার সাংবাদিক সজিব দেবরায় ও পরিবেশবাধি আহাদ মিয়া জানান, আগে কম-বেশি সবার বাড়িতে ঢলু বাঁশ ছিল। এখন সেই বাঁশ আগের মতো নেই। এই বাঁশ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। একসময় এই ঢলুবাঁশ দিয়ে চুঙ্গাপুড়ার ধুম লেগেই থাকত।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.