× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

বহুল ব্যবহারে ভোঁতা আমেরিকার অর্থনৈতিক অবরোধ অস্ত্র

কামাল সিদ্দিকী বাবু

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:৪৬ এএম

বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ আমেরিকা, তবে ইদানিং  চীন  তার ঘাড়ের উপর শ্বাস ফেলছে। বলা যেতে পারে  সেখানে হুল ফুটাতে যাচ্ছে চীন।  সেদিন বেশি দুরে নয় যেদিন আমেরিকার অর্থনীতি চীনের অর্থনীতির কাছে নতি স্বীকারে বাধ্য হবে। তারপরেও অর্থনীতিবিদদের মতে এখনও আমেরিকা সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ। তার প্রমাণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উপর নানাবিধ অভিযোগ তুলে এই দেশটি তাদের মতামত মানতে বাধ্য করছে। বিশেষ করে তাদের একমাত্র অস্ত্র হচ্ছে অর্থনৈতিক অবরোধ। যখন কোন দেশ তাদের প্রভুত্বকে চ্যালেঞ্জ করে; মানতে গড়িমসি দেখায় তখনই তাদের বিরুদ্ধে এই অস্ত্র আমেরিকা প্রয়োগ করে থাকে। মার্কিন প্রশাসনের যুক্তি একটাই সারা বিশ্বের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক তারা। যারা তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে- তাদের বিরুদ্ধে এই অর্থনৈতিক  অবরোধ দেওয়া আমেরিকার নৈতিক অধিকার। যা তাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতপন্থা। সেই অধিকার প্রয়োগের  ক্ষেত্রে  কোন রকম ছাড় দিতে রাজী নয় বলেই কথা কথায় তারা এই অস্ত্র ব্যবহার করে থাকে। তবে প্রবাদ আছে অতি ব্যবহারে মারাত্মক অস্ত্রেও জং ধরে এক সময় তা  ধার হারায়।  রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে আমেরিকা তারই খেসারত দিচ্ছে। 

সোভিয়েত আমলে বিশ্বে একটি ভারসাম্য ছিল। ন্যাটো এবং ওয়ারশ নামে দুটি পক্ষ সারা বিশ্বের রাজনীতি, ভ-ূরাজনীতি এমনকি অর্থনীতির উপর সমান দাপট দেখিয়ে  তাদের আধিপত্য বিস্তার করেছে। তখন আমেরিকা একক ভাবে কোন অন্যায় করা বা কাউকে অধঃনস্ত করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করতে পারেনি। তারপর ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে একদিন  সোভিয়েতের পতন ঘটে। তথাকথিত সমাজতন্ত্রীরা পিছন থেকে সর্বহারার আশার প্রতীক  সমাজতান্ত্রিক চিন্তার পৃষ্ঠে ছুরিকাঘাত করে। কথায় আছে বাইরের শত্রু মোকাবিলা করা সম্ভব হলেও ঘরে শত্রু বিভীষণ। তাই ঘরের শত্রু বিভীষণ রূপী গরবাচেভের কূট কৌশলের কাছে শক্তিশালী সমাজতান্ত্রিক ব্লক সোভিয়েতের পতন ঘটে। যদিও  কেবলমাত্র গরবাচেভের নামই সামনে আসে কিন্তু পিছন থেকে আরও অনেকেই এই ধ্বংসযজ্ঞে  সামিল থাকে। তারা পর্দার অন্তরালে থেকেই নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে সক্ষম হয়। যেমন সিরাজ দৌলার পতনের জন্য কেবল মীর জাফরের নামটিই মুদ্রিত হয়, কিন্তু তার পিছনের কলাকূশলীব বিশেষ করে জগৎ শেঠ, রায় দুর্লভ, ইয়ার লতিফ সর্বোপরি ঘষেটি বেগমের নামটি অনেক সময় অনুচ্চারিত  থেকে যায়! তাই সিরাজের পরজয়ের জন্য যত সহজে মীর জাফরকে চিহ্নিত করা যায়, তত সহজে অন্যদের চিহ্নিত করা কষ্টকর। তেমনি গরবাচেভেকে যত সহজেই সমাজতন্ত্রের ঘাতক বলে ধারণা করা যায় অন্যদের ভুমিকাটি তত সহজে চিহ্নিত নয়।   এ যেন যা কিছু হারায় গিন্নি বলেন কেষ্টা বেটাই চোর। তাই যত দোষ নন্দ ঘোষের উপর চাপিয়ে নিজেদেরকে রাহুমুক্তি রাখাতে সক্ষম হয় পশ্চাতের কুশলীবরা। 

যদিও তখন থেকেই আমেরিকা তাদের অর্থনৈতিক অবরোধকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে এসেছে।  যার জ¦লন্ত উদাহরণ কিউবা। দেশটির বিপ্লবের নেতা ফিদেল কাস্ত্রে যখন সমাজতান্ত্রিক ধ্যান ধারনার উপর নিজের দেশকে সাজিয়ে নিতে চান, তখনই আমেরিকার টক্কর লাগে। মার্কিন মুল্লুকের প্রতিবেশি রাষ্ট্রটিতে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি চালু হলে আমেরিকার জন্য তা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে এই শঙ্কা থেকেই আমেরিকা দেশটির উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিতে উৎসাহী হয়। অর্ধশতাব্দী পরেও সেই অবরোধ আজও চলমান। যদিও কিউবা আমেরিকার প্রশাসনের কাছে মাথা নত করেনি- তবে খেসারতও কম দেয়নি। নিজের দেশের মানুষকে বাঁচাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। সঙ্কচিতঅর্থনীতিকে সম্প্রসারিত করতে রাষ্ট্রিয় সম্পদকে ব্যবহার করতে হয়েছে। এমন কী জনগণের ভিতরকার অসন্তোষ কমাতে দেশটির সরকারকে বহুমুখী পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। সমাজতান্ত্রিক বলয়ে তাদের সহযোগিতা বাড়াতে হয়েছে। এমন কী তাদের জনগণের জন্য বহুমুখী কার্যক্রম নিতে হয়েছে। অনেক কর্যক্রম সমাজতন্ত্রের পক্ষে গেলেও অনেক পদক্ষেপ আবার সমাজতন্ত্রের পথকে পিচ্ছিল করেছে। সেই সুযোগ নিয়েছে আমেরিকা। একেবারেই নিকট প্রতিবেশী হওয়ার কারণে কিউবার জনসাধারণকে প্রলুদ্ধ করতে প্রতিবিপ্লবী তৈরি করতে হাত লাগিয়েছে। কাস্ট্রো প্রশাসনকে এই সব বিদ্রোহ সামাল দিতে অনেক সময় কঠোর পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। সেসব পদক্ষেপকে মানবতার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বিশে^ কিউবাকে একঘরে করার ষড়যন্ত্র আমেরিকা এবং তার সমর্থকার ঢালাও ভাবে করেছে। এসব প্রচারে তারা রাষ্ট্রীয় যন্ত্রকে কাজে লাগিয়েছে।  ফলটি হয়েছে সাধারণ কিউবানদেরকে আরও বেশি করে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারাকে আকড়ে ধরে নিজেদেরকে আরো শাণিত করতে হয়েছে।  এভাবে  ইরাক, ইরান, সিরিয়া, উত্তর কোরিয়াসহ বিশে^র অনেক দেশই এই অর্থনৈতিক অবরোধের মুখে পড়েছে। তবে সেই অস্ত্র যে খুব ভালোভাবে আমেরিকার পক্ষে গেছে এমনটি মনে করার  সুযোগ নেই। এতদিন আমেরিকা কেবল এশিয়ার অনুন্নত দেশ সমূহের উপর অর্থনৈতিক অবরোধের পরীক্ষা চালিয়েছে। বিশে^র উন্নত দেশের বিরুদ্ধে এই অস্ত্র প্রয়োগ করার কথা শুনা যায়নি। তবে হালে তারা সেই কাজটি করতে যেয়ে  বেশ বড্ড মুশকিলে পড়েছে। 

ইউক্রেন আক্রান্ত হবার পর প্রথম তারা উন্নত বিশ্বের একটি পরাশক্তির বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধের সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের ভাষায়, আক্রমণকারী রাশিয়ার বিরুদ্ধে এই অবরোধ কার্যকরের ঘোষণা দেয়। এই প্রথম তারা কোন পরাশক্তির বিরুদ্ধে এই ধরনের অবরোধ আরোপে সাহসী হয়। রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপের পর থেকেই সারা ইউরোপ জুড়ে হাহাকার ওঠে। কারণ, ইউরোপেরে বেশিরভাগ দেশই রাশিয়ার গ্যাস জ¦ালানির উপর নির্ভরশীল। অবরোধ  ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে রাশিয়াও কঠোর পদক্ষেপ নেয়। তারা ইউরোপের গ্যাস সরবরাহ পাইপ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকী দেয়। এমনকি তারা ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ আগের তুলনায় অর্ধেকে নামিয়ে আনে। ফলে  গোটা ইউরোপ জুড়ে জালানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। এসময় ইউরোপের অনেক রাষ্ট্র যারা আমেরিকার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে অংশীদার তারাও উষ্মা প্রকাশ করে। এমনকি তাদের জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করে আমেরিকার এই বিরোধ তুলে নেওয়ার পরামর্শ দেয়। আমেরিকা তাদের সে পরামর্শে সাড়া না দিলে উইরোপ জুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। নিজেদের পথ পরিস্কার রাখতে ইইসি ভূক্ত অনেক দেশই গোপনে রাশিয়ার সঙ্গে আলাপ শুরু করে। কারণ, তাদের জনগণের অসুবিধা সৃষ্টিকারী কোন পদক্ষেপ তারা নিতে পারেন না। যার জন্য তারা অঙ্গীকারাবদ্ধ। এভাবে বজ্র আটুনি ফস্কা গিরোর মত আমেরিকার অবরোধ কর্মকাণ্ড ইউরোপে খেই হারিয়ে বসে। তাই, ইউক্রেনের পক্ষে সহনাভূতিশীল অনেক দেশই তাদের জনগণের স্বার্থে আমেরিকার পদক্ষেপের পক্ষে দাঁড়াতে অনীহা দেখায়। যদিও প্রকাশ্যে সেই ঘোষণা সংশ্লিষ্ট দেশগুলো দেয়নি। তবে তারা যে আমেরিকার নীতির সঙ্গে সহমত নন সেটি আকার উঙ্গিতে ভালোভাবেই স্পষ্ট করেছে। এদিক থেকে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। সদ্য সমাপ্ত জাতিসংঘের অধবেশনে যোগদান করে বাংলাদেশের  প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, বর্তমান সময়ে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের সুযোগ নেই। কারণ, বিশ্বকে এখন পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। একটি  দেশে সব কিছুর সমন্বয় মেলানো অবান্তর অভিলাষ মাত্র! সেখানে পারস্পারিক সহযোগিতা এই অবস্থা থেকে উদ্ধারের একমাত্র রাস্তা। তিনি বলেন, যদি কোন রাষ্ট্র বা জাতি মনে করে তারা তাদের সম্পদ দিয়ে নিজেদের ভাগ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন সেটি কার্যত ভুল। বিশ্ব এখন সার্বিকভাবে সকলের সমন্বয়ে এগিয়ে যাওয়ার পথে। এক্ষেত্রে কোন দেশের উপর অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক অবরোধ কোনভাবে ভূ-রাজনীতি ও ভূ-অর্থনীতির বিকাশ ঘটাতে পারবে না। বরং তা থমকে যাবে একই সঙ্গে বিশ্ব ও বিশ্ব মানবতা একধরনের অভিসম্পাতে পরিণত হবে। এখন সময় সকলের সহযোগিতায় সামনের দিকে এগিয়ে চলার।

মূলত একলা চলার দিন শেষ হয়েছে। এখন সমবেতভাবে চলার সময়। সত্যিকারের অভাব একই সঙ্গে ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়তে হলে অবরোধ নামক অস্ত্রে শান দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এসব আর্তমানবতার  ক্ষেত্রে খুবই ভয়াবহ।  দারিদ্র এবং ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়া এখন বিরাট চ্যলেঞ্জ। গোঁদের উপর বীষ ফোড়া হয়ে উদয় হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন। যার ঝুঁকিতে যেমন অনুন্নত দেশ রয়েছে- তেমনি মধ্যম আয়ের দেশ এমনকি উন্নত বিশ্বও এই ঝুঁকিতে।  এসব মোকাবিলায় এখন রাষ্ট্রের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ সেখানে অর্থনৈতিক অবরোধ মানবতা বিরোধী। আর বড় অর্থনীতির দেশ আমেরিকাকে এরই মধ্যে চ্যালেঞ্জ জানাতে শুরু করেছে চীন। বর্তমান সময়ে চীনের প্রভাবকে এড়িয়ে চলার সুযোগ নেই। তাইতো আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে ডলারের পরিবর্তে চীনের মুদ্রা উইনান বেশ জাঁকিয়ে বসেছে। সেক্ষেত্রে আমেরিকার  এই অবরোধ ব্যাণিজ্য যে একেবারেই ভঙ্গুর অবস্থায় আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট তারই স্বাক্ষী দিচ্ছে।     


Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.