× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

শৈশব থেকেই প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন ছিল বারাক ওবামার, আজ তার ৬১তম জন্মদিন

রণশি মান্নান

০৪ আগস্ট ২০২২, ০৫:০৩ এএম । আপডেটঃ ০৪ আগস্ট ২০২২, ০৫:০৭ এএম

বিশ্বের মহাশক্তি ধর যে কয়টি রাষ্ট্র রয়েছে তার মধ্যে আমেরিকা অন্যতম। প্রভাবশালী এ রাষ্ট্রের প্রথম কৃষাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউজে শপথ বাক্য পাঠ করেন কৃষাঙ্গ দরিদ্র পরিবারের জন্ম নেয়া বারাক ওবামা। ১৯৬১ সালে ৪ আগষ্ট এইদিনে আমেরিকার জনপ্রিয় হাইওয়ে রাজ্যের হনুলুলু শহরে কৃষাঙ্গ দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন বারাক ওবামা।

অনেকেই ধারনা করে থাকেন তিনি আফ্রিকা থেকে এসে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। এই ধারনাটি ঠিক নয়। বাবা বারাক ওবামা সিনিয়র তিনি আফ্রিকার দরিদ্র দেশ কেনিয়ার এক অজ পাড়াগায়ে জন্ম গ্রহন করেন। এই এলাকার মানুষের প্রধান কাজ ছিলো পশু পালন। কিন্তু সিনিয়র ওবামা পড়াশুনাায় দারুন মেধাবী ছিলেন বলে তার পরিবার তাকে নিয়ে আমেরিকার হাইওয়ে শহরে চলে আসেন। সেখানে পড়া শোনার সময় তার সাথে পরিচয় হয় এস্টোন ডোনহেন্ড নামের একজন র্মাকিন তরুনীর সাথে।

এস্টোন ছিলেন খ্রীস্টান আমেরিকান শে^তাঙ্গ নারী। পরিচয় থেকে তাদের মধ্যে গড়ে উঠে প্রেম পরিনয়ের বন্ধন। তারপর তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। তাদের প্রথম সন্তান হিসেবে ১৯৬১ সালে ৪ আগষ্ট বারাক ওবামা হোসেনের জন্ম হয়। বাবা মা একমাত্র ছেলেকে আদর করে নাম রাখেন বারাক ওবামা হোসেন। বারাক  শব্দের অর্থ আর্শিবাদ পুষ্ট। ওবামার ডাক নাম বেরি। বেশ সূখেই চলছিলো সিনিয়র ওবামার ছোট্ট সংসার। কিন্তু বেশিদিন টিকলো না তাদের ভালোবাসার ঘর। ১৯৬৪ সালে তাদের ডির্ভোস হয়।

১৯৬৫ সালে এস্টোন তার কলেজের সহপাটি লেলোসুইটর নামে এক ইন্দোশিয়ানকে ২য় বিয়ে করেন। এই ঘরে এরদারহাম মারা নামে একটি মেয়ে সন্তান জন্ম নেয়। মা এস্টোন নিজের পড়াশোনা শেষ করে ওবামাকে নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার র্জাকাতায় চলে আসেন। তখর ওবামার বয়স মাত্র ৫ বছর।

বারাক ওবামা প্রায় ৯ বছর ইন্দোনেশিয়া ছিলো। সেখানে একটি কিন্ডারগার্ডেন স্কুলে ভর্তি হয় বেরি। সেই স্কুলের শিক্ষক ইস ডারওয়ান একদিন সকল ছাত্রদের নিজের জীবনের লক্ষ নিয়ে রচনা লেখতে বলেন। সেদিন শিক্ষিক ইস ডারওয়ান ওবামার খাতা দেখে চমকে উঠেন। আমরা সাধারণত নিজের জীবনের লক্ষ বলতে ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার,পাইলট বা আরো কিছু হতে চাই কিন্তু ছোট্ট ওবামা তার জীবনের লক্ষ লেখেছেন সে বড় হয়ে প্রেসিডেন্ট হতে চায়। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে ওবামা শৈশব থেকেই স্বপ্ন দেখেন।

ইন্দোনেশিয়ায় ওবামা স্থানীয় ভাষা ও পারিবারিক জীবন বেশ ভালোভাবেই উপভোগ করেছেন। অল্প সময়ের মধ্যে এখানকার ভাষা শিখে ফেলেছিল। কিন্তু ছোট্ট বেলায় বাবা মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটনা ছোট্ট বেরিকে দারুণ ভাবে কষ্ট দেয় যা সে কোনদিন কখনও ভুলতে পারেনি। ওবামার বয়স যখন ৯ বছর  তখন তার মা তাকে নিয়ে আবার আমেরিকা হাইওয়ে রাজ্যে হনুলুলু শহরে চলে আসেন ভালোভাবে ওবামার পড়াশুনা নিশ্চিত করতে। সেখানে ওবামা তার নানা নানীর কাছে পড়াশুনা করেন। নানী মেরিল্যান্ড ডেনহাম ওবামার প্রিয় ব্যাক্তিত্ব। শিশু ওবামার সাথে তার পিতার কোন সর্ম্পক তৈরির সুযোগ হয়ে উঠেনি। ওবামা আতর ঘরে থাকতেই তার পিতা হার্ভাডবিশ^বিদ্যালয়ে পি এইচ ডি করার জন্য চলে যান। নানা নানীর কাছে থাকতেই ওবামা হাইওয়ের বিখ্যাত গুনহ একাডেমিতে ভর্তি হন। 

সেখানে একজন ভালো ছাত্র হিসেবে ও ভালো বাস্কেট বল খেলোয়াড় হিসেবে সুনাম র্অজন করেন। ১৯৮৯ সালে মেধাসম্মিলিত ভাবে ভালো রেজাল্ট নিয়ে পাশ করে। গুনহ একাডেমিতে পড়াশোনার সময় ওবামা তিনজন র্বণবাদী শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন হিসেবে তিন র্বণবাদের বিষয়ে সচেতন হন। সেই সাথে একজন আফ্রিকানকে আমেরিকান হয়ে উঠার বিষয় ভালোভাবে উপলব্দি করেন।

নিজের বহুজাতিক পরিচয়ের সাথে তার আত্মপরিচয়টা মিল রাখতে কতটা কঠিন ছিলো তা তিনি তার লেখা বইতে লেখেছেন। ’ আমি লক্ষ করলাম খ্রীষ্টান ক্যাটালগে আমার মতো দেখতে কেউ নেই। এবং সান্তাক্লোজও একজন স্বেতাঙ্গ মানুষ। হাইস্কুল শেষ করে লসএঞ্জেলস অক্সিডেন্টাল কলেজে  দুই বছর পড়াশোনা করেন। এর পর তিনি নিউর্য়াকের কলোম্ভিয়া ইউনির্ভাসিটিতে পড়াশোনা করেন। এবং সেখানে ১৯৮৩ সালে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে ব্যাচলর ডিগ্রী করেন। তার পর দুই বছর বিজনেস ইন্টান্যাশনালে ব্যবসা করেন। সেখানে মন টিকেনি বেরির পরে সেখান থেকে শিকাগোতে চলে যান। এবং সেখানে তিনি একটি র্ধমীয় প্রতিষ্টানে পরিচালক হিসেবে নিন্ম আয়ের মানুষদের সাথে কাজ করেন।

কলাম্ভিয়া বিশ^বিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় পরিচয় হয় মিশেল রবিনসনের সাথে এবং পরে তারা বিয়ে করেন। তাদের ঘরে দুটি মেয়ে রয়েছে একজনের নাম মালিয়া এন ওবামা ও আরেক জন নাতাশা শা শা ওবামা। ১৯৯৫ সালে বারাক ওবামার মারা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বাবা সিনিয়র ওবামা ১৯৮২ সালে নাইরুবে এক সড়ক র্দুঘটনায় মারা গেছেন। বাবা মা হারিয়ে কিছুটা ভেঙ্গে পড়েন ওবামা জুনিয়র। কিন্তু তার লক্ষ থেকে সরে আসেননি। ১৯৯৬ সালে ওবামা ইলিনের সিনেট র্নিবাচিত হন। তারপর ১৯৯৮,২০০২,পর পর সিনেট হন।

২০০৪ সালে বোষ্টনের ডেমোক্রেট পার্টির এক সভায় তার এক বক্তব্য তাকে পৌঁছে দেয় সাফল্যের কাছাকাছি। সেই বক্তব্যে বারাক ওবামা বলেন মার্কিন অর্থনীতি ও সামাজিক বিষয় গুলো পাল্টানোর কথা। আরো বলেন ইরাক যুদ্ধে বুশ প্রশাসনের ঘৃন্য পদক্ষেপের কথা। ওবামা বলেন,উদারনৈতিক আমেরিকা বা রক্ষনশীল আমেরিকা বলতে কিছু নেই। আমরা জানি আমেরিকা একটাই-সেটা হলো ইউনাইটেড ষ্টেট অফ আমেরিকা। তার এই যুগান্তকারী বক্তব্যে আমেরিকা সিনেট নির্বাচনে ৭০% ভোট নিয়ে জিতে যান বারাক ওবামা।

২০০৭ সালে আমেরিকার প্রেসিডন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রট পার্টি থেকে মনোনয়ন জন্য বারাক ওবামা বেশ আলোচনায় আসেন। মনোনয়নের লড়াইয়ে তার প্রতিধন্ধি ছিলেন হিলারী ক্লিনটন। ২০০৮ সালে ডেমোক্রট র্পাটি থেকে ওবামা মনোনয়ন পান এবং হিলারী তাকে র্পূণ সহযোগীতা করে। এবং ৫২.৯ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রতিপক্ষ জনকেরিকে হারিয়ে প্রথম বারের মতো কৃষাঙ্গ আমেরিকার ৪৪তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপধ বাক্য পাঠ করেন।

আমেরিকার প্রেসেডেন্ট হতে যে সমস্ত প্রতিকুলতার বাধা পার হয়ে আসতে হয় তার চেয়ে বেশি প্রতিকুলতা পাড়ি দিয়ে হোয়াইট হাউজে বসেছিলেন এই কৃষাঙ্গ মুসলিম পরিবারের দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। যে স্বপ্ন মনের ভিতর পোষণ করেছেন সেই শৈশব থেকে। তার না ছিলো র্অথ না ছিলো সামাজিক প্রাধান্য না ছিলো পারিবারিক প্রভাব। তাছাড়া তিনি র্পূণ একজন আমেরিকান নয়। এসব কিছু ছাড়া শুধূ সততা, অদম্য ইচ্ছা শক্তি দিয়ে  সর্বোচ্চ ক্ষমতার আসনে বসা যায় এটা ওবামা প্রমান করেছেন।

র্বতমার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বা ডোনাল্ট ট্রাপে¥র মতো সোনার চামিচ মুখে নিয়ে জন্ম গ্রহন করেননি। তার নিজের র্অথ ছিলো প্রেসিডেন্ট সিয়াম ক্যাম্পইন চালানোর পক্ষে এবারেই কম। র্জজবুশের মতো তার বাবা আমেরিকার রাষ্ট্রপতিই ছিলেন না।ক্লিনটন বা কেনেডির পরিবারের সাথে ওবামার কোন আত্মীয়তাও ছিলো না। ছোট্ট বেলা থেকেই অর্থনৈতিক অভাব দারিদ্রতা বঞ্চনার স্বীকার একজন কৃষাঙ্গ কেনিয়ান মুসলিম পিতার সন্তান ওবামা।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তার র্পূবশ^রী রেখে যাওয়া অস্থির বিশে^র সাথে সাথে অর্থিৈনতক ও রাজনৈতিকভাবে র্দুবল হয়ে পড়া একটি দেশকে সামলাতে হয়েছে তাকে। তিনি শুধু তার জ্ঞান বুদ্ধি চিন্তা শক্তি খাটিয়ে এই অসম্ভবকে সম্ভবকে সম্ভব কেেছন। প্রেসিডেন্ট থাকাকালে বিভিন্ন যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়ে ওবামা ছিলো আলোচনা সমালোচনার মধ্যমণি।

বিশেষ করে ওসামা বিন লাদেনের গ্রেফতার বিষয়টি ছিলো কল্পনীয়। হোইয়াট হাউজে শতশত আরাম আয়েশের সব সুযোগ থাকলেও অতি সাধারণ জীবন যান করতেন। ইতিহাসকেও হার মানায়। আজ এই দিনে বেরি নামক মিষ্টি ছেলেটির ৬১তম জন্মদিন। শুভ এই দিনে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.