সুস্থ্য হতে নয়, যেন মৃত্যুর অপেক্ষায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সিঁড়ির নিচে পড়ে আছেন অজ্ঞাত এক প্রতিবন্ধী বৃদ্ধ নারী। হাঁটা-চলা করতে না পারলেও শুধুমাত্র নিজের ব্যথার কথা ব্যক্ত করতে পারেন তিনি। যে সিঁড়ির নিচে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন, সেখানে শুয়েই মলমূত্র ত্যাগ করতে হয় তাঁকে। দুর্গন্ধে চিকিৎসক, নার্স এমনকি পরিচ্ছন্নতা কর্মীরাও তাঁর নিকট যেতে পারেন না। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, গত কয়েকমাস যাবত তিনি অজ্ঞাত পরিচয়ে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। চিকিৎসকেরা ঠিকঠাক চিকিৎসাও দিয়ে যাচ্ছেন।
জানা যায়, গত বছরের অক্টোবর মাসের ১৯ তারিখে অজ্ঞাত একটি পাখিভ্যান চালক কম্বলে মোড়ানো অবস্থায় ওই বৃদ্ধ নারীকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের নতুন জরুরি বিভগের সামনে ফেলে রেখে যায়। পরে অজ্ঞাত প্রতিবন্ধী ওই বৃদ্ধাকে জরুরি বিভাগ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করে জরুরি বিভাগেরই কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক।
সদর হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা যায়, অজ্ঞাত বৃদ্ধাকে জরুরি বিভগের সামনে ফেলে রেখে যাওয়ার পরদিনই ওই সময় তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করে। সংবাদ প্রকাশের পরেই ঝিনাইদহ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিআইবি)-এর একটি টিম চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে আসে। তারা বৃদ্ধা রোগীটির পরিচয় শনাক্তে ছবি ও আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে যায়। কিন্তু এখনো পর্যন্ত অজ্ঞাত এই প্রতিবন্ধী বৃদ্ধার কোনো পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
জরুরি বিভাগের কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক জানান, প্রায় চার মাস পূর্বে একটি অজ্ঞাত পাখিভ্যান ওই মহিলাটিকে জরুরি বিভাগের সামনেই রেখে চলে যায়। সেসময় একটি বেগুনি রঙের কম্বল তার শরীরে জড়ানো ছিল। সে কোনো কথা বলতে পারছিল না, এমনকি নিজের হাত-পা নাড়াতেও অক্ষম ছিলেন। পরে তাকে জরুরি বিভাগ থেকে চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডের জেসমিন নামের এক স্বে”ছাসেবিকা বলেন, তিনি প্রায় চার মাস ধরে এই ওয়ার্ডে আছেন। তাঁর নাম পর্যন্ত এখনো জানা যায়নি। প্রথমে তাঁকে ওয়ার্ডের মধ্যে রাখলেও তিনি চলাচল করতে না পারায় ও অপরি”ছন্ন থাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। যে কারণে অন্য রোগী ও তাদের স্বজনেরা বিরক্ত হচ্ছেন। তাই তাঁকে বারান্দা সংলগ্ন সিড়ির নিচে বিছানা করে দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এই বৃদ্ধা চলাচল করতে না পারলেও মাঝে মধ্যে ‘ব্যথা ব্যথা’ শব্দ উচ্চারণ করেন।
মহিলা মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসাধীন এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘আমার মা অসুস্থ্য হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এখানে আসার পর থেকেই সিড়ির নিচে একটি অসুস্থ্য মহিলাকে দেখতে পাচ্ছি। এই কয়দিনে সে একটিবারের জন্য হলেও ওখান থেকে অন্য কোথাও যাননি। তার শরীর থেকে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়ানোর কারণে কেউ তার কাছে যেতে পারছেন না। মাঝে মধ্যে হাসপাতালের অন্যান্য রোগীর স্বজনেরা তাকে কিছু খাবার কিনে দিয়ে যেতে দেখেছি। ওয়ার্ডে ডাক্তার আসলেও তাকে ঠিকমত দেখেন না, এটা নিয়মিত খেয়াল করেছি।’
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জুনিয়র কার্ডিওলজি কনসালটেন্ট ডা. আবুল হোসেন বলেন, ‘কয়েকমাস পূর্বে রোগীটিকে হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হয়। সে শারীরিক ও মানুষিক প্রতিবন্ধী। মাঝে মধ্যে দু-একটা কথা বললেও হাঁটা-চলা করতে পারেন না। আমি নিয়মিত তাঁকে দেখছি। তবে সে চলাচল করতে না পারায় নিজ বিছানাতেই মলমূত্র ত্যাগ করে অপরি”ছন্ন হয়ে যায়। যে কারণে সে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এখনো তার সার্বক্ষণিক সেবার জন্য একজন মানুষ প্রয়োজন।’
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ওয়াহেদ মাহমুদ রবিন বলেন, ‘রোগীটির ভালো চিকিৎসা ও সেবার প্রয়োজন। কিন্তু তার পরিবারের সদস্যদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এমনকি রোগীটির নাম পর্যন্ত আমরা জানি না। অজ্ঞাত পরিচয়ের এই রোগীটিকে প্রথমে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ভেতরে রাখা হলেও সে নিজ বিছানায় মলমূত্র ত্যাগ করে অনেক দুর্গন্ধ ছড়া”েছন। এতে করে ওই ওয়ার্ডের অন্য রোগীরা ওয়ার্ডের বাইরে চলে যাচ্ছিল। তবে আমরা রোগীটিকে যথাসাধ্য চিকিৎসাসেবা দিয়ে যা”িছ। তাঁর প্রয়োজনীয় সকল ওষুধপত্র ও খাবারের ব্যবস্থাও নিয়মিত করা হচ্ছে। আর হাসপাতালে জনবল সঙ্কটের কারণে তার সার্বক্ষণিক সেবা দেওয়ার জন্য কোনো স্টাফকেও আমরা রাখতে পারছি না, তার পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য।’
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh