জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের সুবর্ণখালি নদীর পাশ দিয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের "পুরাতন জগন্নাথগঞ্জ ঘাট হতে গোয়াখোরা দামোদরপুর সড়ক উন্নয়ন" কাজে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিম্নমানের ইট ব্যবহার ও পাশ থেকেই বালু কেটে সড়ক ভরাটে এলাকাবাসী বাধা দিলেও লাভ হয়নি।
তদারকি কর্মকর্তার যোগসাজশে কাজের শুরুতেই অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও ইতোমধ্যেই প্রথম ধাপের বিল উত্তোলনের চেষ্টা চলছে।
এলজিইডি সূত্র জানায়, এআরআইডিপি প্রকল্পের আওতায় চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল থেকে "পুরাতন জগন্নাথগঞ্জ ঘাট হতে গোয়াখোরা দামোদরপুর সড়ক উন্নয়ন" কর্মসূচির কাজ শুরু হয়। তিন কিলোমিটার ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের সড়কের কাজটি পিরোজপুরের ইএফটিই.ইটিসিএল (প্রাইভেট) লিমিটেডের নামে কার্যাদেশ হলেও বাস্তবায়ন করছেন উপজেলার আওনা ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন রাঙ্গা। এর প্রাক্কলিত নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে দুই কোটি ৭০ লাখ ৪৮ হাজার ৭৯৮ টাকা।
সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, সড়ক নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে নিম্নমানের ইট দিয়ে, যা সামান্য টোকা লাগলেই ভেঙে যায়। সড়ক রক্ষায় নদীর পাশ দিয়ে নির্মাণাধীন প্যালাসাইটিং (ঠেস দেয়াল) করা হচ্ছে দায়সারাভাবে। ইটগুলো নিম্নমানের হওয়ায় কাজ চলমান থাকলেও এখনই প্যালাসাইটিংয়ের কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। নিম্নমানের প্রমাণ না রাখতে তড়িঘড়ি করে মাটি দিয়ে ঢেকে ফেলা হচ্ছে। অপরদিকে সড়কের নিচে ও পাশ থেকেই নদীতীরের বালু কেটে সড়ক ভরাট করা হচ্ছে। এতে সামান্য বৃষ্টিতেই সড়ক ভেঙে বালুমাটিগুলো পুনরায় ওই গর্তেই পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া কয়েকটি স্থানের নির্মিত কালভার্টগুলো সরু ও নিম্নমানের হওয়ায় বর্ষার সময় সড়ক ধ্বসে যাবে বলে স্থানীয়রা শঙ্কা প্রকাশ করেন। এদিকে সড়কের কাজ শুরুতেই প্রশ্নবিদ্ধ হলেও ইতোমধ্যেই ১০ লাখ টাকা প্রদানের জন্য বিলও প্রস্তুত করেছে কর্তৃপক্ষ।
চর পোগলদিঘা গ্রামের লিচু মিয়া অভিযোগ করেন, নির্মাণাধীন সড়কের পাশ থেকেই নদীতীরের বালি কেটে সড়কে ফেলা হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়ক ধ্বসে ওই গর্তেই নেমে যাবে।
স্থানীয় আব্দুল ওয়াহাব জানান, সড়কের পাশ থেকেই মাটি কাটতে ঠিকাদারকে বারবার এলাকার লোকজন বাধা দিয়েছি, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। নির্মাণসামগ্রীর মধ্যে ইটগুলোও নিম্নমানের। দায়সারাভাবে কাজ শেষ করলে কিছুদিন পরই ভেঙে যাবে।
পোগলদিঘা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম মানিক জানান, এলাকাবাসী সড়কের কাজে অনিয়মের অভিযোগ করেছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ জরুরি।
নিম্নমানের কাজের ব্যাপারে ঠিকাদার আনোয়ার হোসেন রাঙ্গা মুঠোফোনে বলেন, চেষ্টা করা হয় শিডিউল মেনেই কাজ করার, তবে কিছুটা এদিক-সেদিক হতেই পারে। সাক্ষাতে বিস্তারিত কথা বলবেন জানিয়ে মোবাইলে এরবেশি তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।
কাজের তদারকি কর্মকর্তা এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে ১০ লাখ টাকার একটা বিল প্রস্তুত করে জেলা কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে ছুটিতে ছিলেন, বিধায় তিনি কাজের খোঁজ নিতে পারেননি বলে জানান।
এব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী জাহিদুর রহমান বলেন, সড়কটি শীঘ্রই পরিদর্শন করবো। কোনো অনিয়ম পাওয়া গেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।