× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

পারভীন ও শাকিবুলের প্রাণহীন দেহ ফিরলো দাদাবাড়িতে

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

০৬ জুলাই ২০২২, ০২:১৫ এএম

আট বছরের পারভীন ও তার পাঁচ বছর বয়সী ছোট ভাই শাকিবুল হাসানের জন্ম ভারতের দিল্লীতে। মা ছামিনা বেগম ভারতীয় হলেও বাবা রহিচ উদ্দিন ছিলেন বাংলাদেশি। তার বাড়ী কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশী ইউনিয়নের পশ্চিম সুখাতি গ্রামে। বাবার কাছে  ছোট্ট পারভীন ও শাকিবুল প্রায়ই বায়না ধরতো বাংলাদেশে দাদাবাড়িতে আসার জন্য। ১৬ বছর আগে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দিল্লীতে আসা রহিচ উদ্দিনও ছেলেমেয়েদের বায়না পুরণের আশ্বাস দেন। বলেন এবারের কোরবানির ঈদে তাদের দাদা বাড়িতে নিয়ে আসবেন।

সন্তানদের দেয়া কথা রাখতে দালালের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশে আসার চেষ্টা করেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর সীমান্ত দিয়ে। সীমান্ত পাড় হওয়ার সময় বিএসএফের ধাওয়া খেয়ে রাতের আঁধারে তড়িঘড়ি করে নদী পাড় হতে গিয়ে মায়ের হাত ফসকে নদীতে নিখোঁজ হয় পারভীন ও শাকিবুল। ঘটনার ৩৬ ঘন্টা পর রবিবার সকালের নীলকমল নদীতে ভেসে ওঠে পারভীন ও শাকিবুলের লাশ। নদীর ওই অংশ ভারতীয় ভূখন্ড হওয়ায় লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায় বিএসএফ। দালালের খপ্পরে পরে সলিল সমাধি হয় ভাইবোনের দাদাবাড়ি আসার স্বপ্ন। সীমান্তের ওপারে সন্তানদের মৃতদেহ আর এপাড়ে চলতে থাকে মা-বাবার আহাজারি। সন্তানদের মৃত দেহ ফিরে পারার আকুতি জানায় পরিবার। 

রহিচ উদ্দিন জানান, ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের সুলতানপুর এলাকার ইট ভাটায় কাজ শেষে দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশের  জন্য শুক্রবার রাতে স্ত্রী ও দুই সন্তান সহ কোচবিহার জেলার দিনহাটা থানার সেউটি সীমান্ত এলাকায় আসেন। পরিবার নিয়ে নিরাপদে দেশে ফেরার জন্য ভারতের দালালদের সাথে ৩০ হাজার টাকা চুক্তি করি। তারা আমাদেরকে সীমান্তে এনে অন্য ২০/২৫ জন নারী,পুরুষ ও শিশুর সাথে একটি বাড়ীতে রাখে। মধ্য রাতে কাঁটাতারের বেড়া কেটে তারা আমাদেরকে নদীর পাড়ে নিয়ে আসে । এ সময় বিএসএফ ধাওয়া দিলে দালালরা দ্রুত নদী পার হতে বলে। আমি ব্যাগ নিয়ে সাঁতার দেই আর আমার স্ত্রী দুই সন্তান নিয়ে নদী সাঁতরাতে শুরু করে। কিন্তু অন্ধাকারে তীব্র স্রোতের বেগে স্ত্রীর হাত থেকে সন্তানরা নিখোঁজ হয়।  এরপর পানিতে ডুবে অনেক খোঁজা খুজি করেছি কিন্তু সন্ধান পাইনি।

লাশ উদ্ধারের দুদিন পর মঙ্গলবার ৫ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে সীমান্তের ৯৪৩ নং মেইন পিলারের এস-৮ নং সাবপিলার সংলগ্ন এলাকায় বিজিবি বিএসএফ পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে শিশুদের মহদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। পরে ফুলবাড়ী থানা পুলিশ রহিচ উদ্দিনের নিকট মরদেহ হস্তান্তর করেন। এর মধ্যদিয়ে পারভীন ও শাকিবুল হাসানের দাদাবাড়ি যাওয়ার পথ সুগম হলো। তবে জীবন্ত নয় পারভীন ও শাকিবুল হাসানের প্রাণহীন নিথর দেহ ফিরলো দাদাবাড়িতে।

শিশুদের মরদেহ হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় নাগেশ্বরী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সুমন রেজা, ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফজলুর রহমান, তদন্ত কর্মকর্তা সারোয়ার পারভেজ, লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটেলিয়নের অধীন কাশিপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার নায়েক সুবেদার ফরিদ উদ্দিন, অনন্তপুর ক্যাম্পের কমান্ডার আরফিন,কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মানিক, ভারতের ১৯২ বিএসএফের শেউটি -১ ক্যাম্পের বিএসএফের ইন্সপেক্টর এস এইচ শংকর কুমার, পুলিশের বড়বাবু এন্হনিসহ বিজিবি ও বিএসএফের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন ।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.