× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

ভাষা সংগ্রামীদের কথা

পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙেছিলেন রওশন আরা বাচ্চু

সাজেদা হক

০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৪:১২ এএম । আপডেটঃ ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২২:৩০ পিএম

রওশন আরা বাচ্চু, একজন ভাষা সংগ্রামী। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি যারা ১৪৪ ধারা ভেঙেছিলেন তিনি তাদের অন্যতম। রওশন আরা ১৭ ডিসেম্বর ১৯৩২ সালে সিলেটের মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার উছলাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম এ এম আরেফ আলী, মায়ের নাম মনিরুন্নেসা খাতুন।

রওশন আরা বাচ্চু ১৯৪৭ সালে পিরোজপুর গার্লস স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে ১৯৪৮ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৩ সালে দর্শনে অনার্স করেন। এরপর ১৯৬৫ সালে বিএড এবং ১৯৭৪ সালে ইতিহাসে এম এ করেন। তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হল এবং উইম্যান স্টুডেন্টস রেসিডেন্স এর সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি গণতান্ত্রিক প্রোগ্রেসিভ ফ্রন্ট-এর ছাত্র রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন।

তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন। যেমন- ঢাকার আনন্দময়ী স্কুল, লিটন অ্যাঞ্জেলস, আজিমপুর গার্লস স্কুল (খ-কালীন), নজরুল একাডেমি, কাকলি হাই স্কুল এবং পরে আলেমা একাডেমিতে। সবশেষে ২০০০ সালে বিএড কলেজে অধ্যাপক হিসেবে অবসরগ্রহণ করেন।

১৯৪৯ সালে বরিশাল বিএম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে ভর্তি হন রওশন আরা বা”চু। ১৯৫২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হয়েও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভাষা আন্দোলনের পক্ষে জনমত সংগঠিত করার জন্য কাজ করেন। ফেব্রুয়ারির উত্তাল আন্দোলনে তিনি ছিলেন সক্রিয়। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হলে তিনি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে অংশ নেন ও বক্তব্য রাখেন।

সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারি হরতাল আহ্বান করায় সরকার বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে। এ সময় যে সব ছাত্রছাত্রী ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা প্রয়োজন মনে করেন রওশন আরা বাচ্চু তাদের মধ্যে একজন। ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি ইডেন কলেজ ও বাংলাবাজার বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের একত্রিত করে আমতলার সমাবেশস্থলে নিয়ে আসেন। তারা ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগানে মুখরিত করেছিলেন চারদিক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবেশস্থলের বাইরে পুলিশ লাঠি দিয়ে ব্যারিকেড দিয়েছিল। শাফিয়া খাতুন লাঠির ওপর দিয়ে লাফিয়ে এবং হালিমা খাতুন নিচ দিয়ে বের হয়ে গেলেও রওশন আরা বাচ্চু তা করেননি। তার ভাষায়, ‘আমি দেখলাম, দুটি দলের কেউ কেউ পুলিশের কর্ডন লাঠির উপর দিয়ে এবং কেউ কেউ লাঠির নিচ দিয়ে যাচ্ছিল। আমি তা দেখে থত্থর করে কাঁপছি। আমার মধ্যে জেদ চেপে বসল। মনে মনে স্থির করলাম, আমিতো মাথা নত করে যাব না এবং লাঠির উপর দিয়েও যাব না। যেতে হলে ব্যারিকেড ভেঙে তবেই যাব এবং তৃতীয় দলের সঙ্গে বেরিয়ে আমিই প্রথম ব্যারিকেড ভেঙেছিলাম।’ এদিকে পুলিশ ব্যারিকেড ভাঙার দৃশ্য দেখামাত্রই লাঠিপেটা শুরু করে দেয়। লাঠির আঘাতে তিনি আহত হন।

সেদিন বিকেলে পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের সদস্য আনোয়ারা খাতুন বক্তব্য রাখতে গিয়ে যে দু’জন আহত ছাত্রীর পরিচয় তুলে ধরেন তাদের মধ্যে একজন ছিলেন বেগম রওশন আরা বাচ্চু। এরই মধ্যে বাচ্চু পাশে স্তূপীকৃত ভাঙা রিকশার নিচে গিয়ে আশ্রয় নেন। সময় বুঝে পরে এসএম হলের প্রভোস্ট ড. গনির পার্শ্ববর্তী বাড়িতে আশ্রয় নেওয়ার জন্য রওনা হন। সে বাড়ির কাঁটাতারের সঙ্গে শাড়ির আঁচল আটকে যায় তার। এ সময় কেউ একজন তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। অবশেষে তিনি কাঁটাতারের বেড়া পার হয়ে ড. গনির বাসায় আশ্রয় নিতে সক্ষম হন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের অনুমতি ছাড়া ছেলেদের সঙ্গে কথা বললে সে সময় ১০ টাকা জরিমানা করা হতো মেয়েদের। আন্দোলনে গেলে পড়াশোনা বন্ধ করে দেওয়ার পারিবারিক হুমকিও ছিলো। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে অনুষ্ঠিত অন্যান্য সভা ও সমাবেশে তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন। কোন ভয়ভীতি তাকে ভাষাচেতনার আদর্শ থেকে এতটুকুও বিচ্যুত করতে পারেনি।

রওশন আরা বাচ্চু ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১০টায় ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তিনি বেশকিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন।


Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.