× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

সাংবাদিক খন্দকার মুনীরুজ্জামানের চোখে ১০ জানুয়ারি, ১৯৭২

রঞ্জন মল্লিক

১২ জানুয়ারি ২০২২, ০৪:৪৭ এএম

খন্দকার মুনীরুজ্জামান ১৯৬৪ সাল থেকে সাংবাদিকতা শুরু করেন। প্রবীণ এ সাংবাদিকের সঙ্গে ২০১৮ সালের ৭ জানুয়ারি পল্টনের ‘সংবাদ’ অফিসে নানা প্রসঙ্গে আলাপচারিতা হয়। এক পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে কথা শুরু করি। প্রথমে মুক্তিযুদ্ধে বাম দলগুলোর অংশগ্রহণ, অংশগ্রহণে প্রথমে নানা উৎকট সংকট, পরিশেষে  ট্রেনিং ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও যুদ্ধে সাফল্য লাভ ইত্যাদি ছিল বিষয়। এক পর্যায়ে আমি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে কথা শুরু করি। তিনি ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সাল, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে বিশেষ রিপোর্ট করার জন্য বের হয়েছিলেন বিষয়টি আমার অবগত ছিল। তাই আমার আগ্রহ দেখে সাংবাদিক খন্দকার মুনীরুজ্জামান ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালের ঘটনাগুলো অকপটে বলতে শুরু করেন।

তিনি বলেন, দেখুন যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে ঢাকার যে বিধ্বস্ত অবস্থা দেখেছি তা আজ বর্ণনা করা খুবই কঠিন। চারদিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর  বর্বর ধ্বংসযজ্ঞ। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের হল থেকে শুরু করে সর্বত্রই একই অবস্থা। ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ ও তার মন্ত্রিপরিষদ ২২ ডিসেম্বর দেশে ফিরে আসেন। তখন দেশে নানা সমস্য চলছে। সর্বত্রই হাহাকার। মুক্তিযোদ্ধা সবার হাতেই অস্ত্র। কেউ কারো কথা তেমন শুনছেন না বা মানছেন না। তখন এই সমস্যার একমাত্র সমাধান করতে পারেন বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি; কিন্তু তিনি কি জীবিত আছেন না মৃত্যু এ প্রশ্নটিই সবার মুখে মুখে। যদি বেঁচে না থাকেন তবে কে নেতৃত্ব নেবেন- সেই প্রশ্ন তো আছেই। অনেকেই তখন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের বিরোধিতা করা শুরু করেছে। তিনি  প্রো-ইন্ডিয়ান ও বামপন্থী বলে নানা কথা ছড়ানো হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী  তাজউদ্দিন  আহমেদ ও তার মন্ত্রিপরিষদ বঙ্গবন্ধুর দেশে ফেরা নিয়ে উৎকণ্ঠায় দিন কাটান।

দেশে প্রতিটি ধর্মের মানুষ বঙ্গবন্ধুর সুস্থতা কামনা করে প্রার্থনা করেন এবং মুসলমানরা রোজা রাখেন। অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার ইতি টেনে ৮ জানুয়ারি বিবিসি থেকে খবরে ভেসে আসে, বঙ্গবন্ধু জীবিত আছেন, তিনি বেঁচে আছেন, শিগগিরই পাকিস্তান থেকে মুক্তি পাচ্ছেন। সেই দিনগুলোতে দেশের মানুষ যেন প্রাণ ফিরে পায়। পত্রিকা অফিস থেকে  আমার ওপর ন্যাস্ত হয় ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসার অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করতে হবে। আমি আবেগাপ্লুত হই।

১০ জানুয়ারি সকাল ৭টায় শাহবাগ যাই। দেখি শীত উপেক্ষা করে রাস্তায় মানুষের ঢল। সবাই কুর্মিটোলা বিমান বন্দরের দিকে যাচ্ছেন। কী ব্যাপার, ব্যাপার একটাই, বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরছেন। সকাল ১০টার মধ্যে বিমান বন্দর ও রাস্তায় তিল ধারণের স্থান নেই। সবাই অপেক্ষা করছেন কখন তিনি বিমান থেকে অবতরণ করবেন। অবশেষে দুপুর ১.২০ মিনিটে ঢাকার আকাশে বিমান দেখা গেল। সকলে আনন্দে চিৎকার করে উঠলেন। সেকি আনন্দ, মানুষ গায়ের জামা, চাদর খুলে ঘুরাতে লাগল। তথচ এই লোকদের পায়ে জুতা  নেই, গায়ের পোশাকটিও শতছিন্ন। হয়তো ঘরে খাবারও নেই। এক অদৃশ্য সন্মোহনে দুলছে দেশ। যেন তিনি এলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ওনার হাতের ছোঁয়ায় বদলে যাবে সব অনাচার। উনি চাইলেই অভুক্ত জনগণ তিন বেলা পেট পুরে খেতে পাবেন। এই বিশ^স নিয়ে জনগণ নেতার পথ চেয়ে বসে আছেন যেন।

বঙ্গবন্ধু ব্রিটিশ প্লেন থেকে কুমিটোলা বিমান বন্দরে নামলেন ১.৪০ মিনিটে, সবত্রই হর্ষধ্বনী,আনন্দের হিল্লেল বইছে সর্বত্র। রাস্তার পাশে লোকজন একনজর নেতাকে দেখার জন্য উপচে পড়ছে। নেতা এলেন, মন্ত্রিপরিষদের নেতারা তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। আনুষ্ঠানিকতা সেরে তিনি জনগণের উদ্দেশে রেসকোর্স ময়দানে রওনা হলেন। যেন পেট্রিয়ট কবিতার নায়ক। চারদিক থেকে তার ওপর পুষ্পবৃষ্টি হ”েছ।  বিমান বন্দর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসেন বঙ্গবন্ধু  দুই ঘণ্টা সময় পাড়ি দিয়ে। অথচ ১০ মিনিটের পথ। তিনি রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ দেন। সেই ভাষণেও ছিল এই সাধারণ মানুষের কথা। সেদিন নেতার কথায় আশ্বস্ত হয়ে সাধারণ মানুষ খুশি মনে বাড়ি ফেরে। পত্রিকায় পরদিন বিশাল ফিচার বের হয়। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অ্যাসাইনমেন্ট ছিল ১০ জানুয়ারির রিপোর্ট। খন্দকার মুনীরুজ্জামান সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে মনে হয় সেই বাহাত্তর সালে ফিরে যান তিনি। বারবারই তিনি আবেগাপ্লুত হচ্ছিলেন। আমি তার আবেগকে সেদিন প্রত্যক্ষ করেছিলাম। মনে হয়, খন্দকার মুনীরুজ্জামানের সঙ্গে ১০ জানুয়ারিতে আমিও  চলে গিয়েছিলাম, সময়ের টাইম লাইন ধরে।



Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.