× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

বাংলাদেশে গণহত্যা-বিদেশিদের চোখে

খোন্দকার গোলাম মুস্তাফা

১২ জানুয়ারি ২০২২, ০৪:২২ এএম

‘রক্তই যদি কোন জাতির স্বাধীনতা অর্জনের অধিকারের মূল্য বলে বিবেচিত হয়, তবে বাংলাদেশ অনেক বেশি দাম দিয়েছে।’ বাংলাদেশে দখলদার পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনীর গণহত্যা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে একথা স্বীকার করেন লন্ডনের নিউ টাইমস পত্রিকা ১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল সংখ্যায়।

মাত্র নয় মাসের পরিসরে জেনারেল ইয়াহিয়ার সৈন্যবাহিনী বাংলাদেশে ত্রিশ লাখেরও বেশি মানুষ হত্যা করে। বাঙালি জাতিকে চিরতরে দাসত্বের নাগপাশে আবদ্ধ করে রাখবার জন্য ইয়াহিয়া এবং তার সেনাপতিরা বাংলার জাতীয়তাবাদী শক্তিসমূহকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে চেয়েছিল। সেদিন সমগ্র বিশ্ববাসী ও তার নেতৃবৃন্দ একটা দেশের নিরস্ত্র জনসাধারণের উপর পুরোপুরি সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সো”চার হয়ে ওঠে। সারাবিশ্বের সকল সংবাদপত্র, বেতার ও টেলিভিশন এই গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় তোলে।

সেই ভয়াবহ ঘটনার দু’জন চাক্ষুষদর্শীর বিবরণী সংক্ষিপ্ত আকারে আমরা এখানে উদ্ধৃত করছি। এরা দু’জন হলেন লন্ডনের ‘ডেইলী টেলিগ্রাফ’ পত্রিকার সংবাদদাতা সাইমন ড্রিং ও ‘নিউইয়র্ক টাইমস’র সংবাদদাতা সিডনি এইচ শ্যানবার্গ।
১৯৭১ সালের ২৬ ও ২৭ মার্চ পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী যখন রাজধানী ঢাকা থেকে সকল বিদেশি সাংবাদিককে বহিষ্কাত করে সাইমন ড্রিং তখন রাজধানী ঢাকাতেই আত্মগোপন করেন।

সান্ধ্য আইন স্বল্প সময়ের জন্য প্রত্যাহার হওয়ার ফাঁকে ফাঁকে তিনি ৭২ ঘণ্টাব্যাপী রাজধানী ঢাকার বুকে যে তা-বলীলা চলেছিল তা দেখতে ও সে সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করেন। সেই ৭২ ঘণ্টায় যা ঘটেছে তার সবকিছু তার পক্ষে দেখা সম্ভব না হলেও তার বিবরণী থেকে এই বর্বরতা সম্পর্কে একটা সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।

বাংলাদেশে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ কিভাবে তথাকথিত ‘স্বাভাবিক অবস্থা’ ফিরিয়ে এনেছে তা দেখবার জন্য ১৯৭১ সালের জুন মাসে যে সব বিদেশি সাংবাদিককে ঢাকা প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছিল শ্যানবার্গ ছিলেন তাদের অন্যতম।
কিš‘ পাকিস্তানি সামরিক কর্তৃপক্ষ শ্যানবার্গকে বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কাত করে, কারণ শ্যানবার্গ তার প্রেরিত সংবাদমালার মাধ্যমে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের দাবির অসারতা ও অন্তঃসারশূন্যতা উদঘাটন করে দেন।
৩০ মার্চ ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ পত্রিকায় ‘‘ঢাকা কিভাবে ‘ঐকবদ্ধ’ পাকিস্তানের জন্য খেসারত দিয়েছে” শিরোনামে প্রকাশিত সাইমন ড্রিংয়ের রিপোর্টে বলা হয়’ পূর্ব পাকিস্তানের জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে সেনাবাহিনী গ্রেপ্তার করেছে, অন্যান্যরা নিহত। মুজিবুরের সমর্থক দু’টো সংবাদপত্র অফিস ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। পঁচিশে মার্চ বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার রাস্তার চলমান ট্যাংকগুলোর প্রথম লক্ষ্য ছিল ছাত্ররা।

ঢাকার উপর আক্রমণ চালাবার জন্যে, সাঁজোয়া, গোলন্দাজ এবং পদাতিক বাহিনীর আনুমানিক তিনটি ব্যাটালিয়ন ব্যবহার করা হয়। রাত দশটার কিছু আগে তারা তাদের সৈন্য ছাউনি ত্যাগ করা শুরু করে। এগারোটার মধ্যে গুলিবর্ষণ শুরু হলো এবং যারা উল্টানো গাড়ি, গাছের গুড়ি, আসবাব, কংক্রিটের নল দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করার চেষ্টা করেছিল তারা নিহত হলো।

শেখ মুজিবুর রহমানকে টেলিফোনে সাবধান করে বলা হলো, কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে, কিন্তু তিনি তার বাসা ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানালেন। গ্রেফতার এড়িয়ে আসা একজন দলীয় কর্মীকে তিনি বলেছিলেন, ‘যদি আমি লুকোতে যাই তবে তারা আমাকে খুঁজে বের করবার জন্য পুরো ঢাকা জ্বালিয়ে দেবে।’

ছাত্রদেরও সাবধান করা হয়েছিল, কিš‘ তখনও সেখানে যারা ছিলেন পরে জানিয়েছেন যে, তারা ভেবেছিলেন তাদের শুধু গ্রেপ্তার করা হবে মাত্র। আমেরিকা কর্তৃক সরবরাহকৃত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এম-২৪ ট্যাংকের পিছু পিছু একদল সৈন্য মধ্যরাতের কিছু পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে রওনা হয়। সৈন্যরা বৃটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরি দখল করে নেয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকায় শেল নিক্ষেপের জন্য ঐ জায়গাকে ‘ফায়ার বেস’ হিসেবে ব্যবহার করে।

আমাকে বলা হয়েছে যে, সরকার বিরোধী চরমপন্থী ছাত্রদলের কেন্দ্রস্থল ইকবাল হলে আচমকা হানা দিয়ে দুশো ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে। দু’দিন পর দেখা গেল, পোড়া ঘরগুলোতে পড়ে আছে কিছু দেহ, কিছু বাইরে ছড়িয়ে, কিছু ভাসছিলো কাছের এক পুকুরে, শিল্পী এক ছাত্রকে দেখা গেল ইজেলের কাছে পড়ে আছে লুটিয়ে। মাত্র ৩০টি মৃতদেহ ইকবাল হলে দেখা যায়। কিন্তু হলের করিডোরে যতো রক্ত দেখা গেল তা থেকে মনে হয় না যে নিহতের সংখ্যা এতো অল্প। সেনাবাহিনী বহু সংখ্যক মৃতদেহ সরিয়ে ফেলেছে।

আরেকটি হলে পাক সৈন্যরা তাড়াহুড়ো করে গণকবর খুঁড়ে মৃতদের কবর দিয়ে ট্যাংক দিয়ে সমান করে দেয়। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে বাস করতেন তারাও এই আক্রমণের শিকার হন। রেল লাইনের পাশে দুশো গজ জুড়ে যে বস্তি এলাকা ছিল তা ধ্বংস করে দেয়া হয়।

নিকটবর্তী বাজার এলাকাও সৈন্যরা গুড়িয়ে দেয়। দু’দিন পর যখন ঘর থেকে বের হয়ে এসব দেখা সম্ভব হলো তখন দেখা গেল, বাজারের কিছু দোকানের মালিক তখনও শুয়ে আছে, যেন ঘুমোচ্ছে, কাঁধের ওপর পর্যন্ত তাদের কম্বল টানা। একই এলাকায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজে সরাসরি বাজুকা আক্রমণ করা হয়।

একদল সৈন্য যখন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অভিযান চালা”িছল তখন অন্য আরেকটি দল শহরের অন্যপাশে অবস্থিত পূর্ব পাকিস্তান পুলিশের কেন্দ্র রাজারবাগের দিকে রওয়ানা হয়। প্রত্যদক্ষদর্শীর মতে, ট্যাংক থেকে প্রথম গুলিবর্ষণ করা হয়। তারপর সৈন্যরা ভিতরে ঢুকে তাদের আস্তানাগুলো সমান করে দেয়, সাথে সাথে আশপাশের বিল্ডিংগুলোতে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। অপরদিকে আশপাশে বসবাসকারী লোকেরাও জানে না সেখানে কতোজন মারা গেছে। তবে সেখানে অবস্থানরত ১,১০০ জন পুলিশের ভিতর খুব বেশী কেউ পালাতে পারেনি।

একদিকে যখন এসব ঘটছে তখন অন্যদিকে শেখের বাসস্থান ঘেরাও করা হয়েছে। রাত একটার কিছু আগে যখন টেলিফোনে তার সাথে সংযোগ স্থাপন করা হয়, তখন তিনি বলেছিলেন, যে কোন মুহূর্তে তিনি আক্রমণ আশংকা করছেন এবং শুধু দেহরক্ষী এবং চাকর ছাড়া সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

একজন প্রতিবেশী বললো যে, রাত ১-১০ মিনিটে একটি ট্যাংক, একটি সাঁজোয়া গাড়ি এবং সৈন্যভর্তি ট্রাক গুলি করতে করতে রাস্তা দিয়ে এগিয়ে আসে। ‘শেখ, নীচে নেমে আসুন’ বাইরে থেকে একজন অফিসার ইংরেজিতে চিৎকার করে বলে উঠলো। মুজিবুর তার ব্যালকনিতে বের হয়ে এসে বললেন, ‘আমি তৈরি, গুলি করার দরকার নেই। তোমরা এতো কিছু না করে আমাকে টেলিফোন করলেই আমি চলে আসতাম।’

অফিসারটি তখন প্রাঙ্গণের ভিতর গিয়ে মুজিবকে বললো, ‘আপনাকে গ্রেফতার করা হলো।’ তিনজন চাকর, কজন পার্শ্বচর ও একজন দেহরক্ষীশুদ্ধ তাকে নিয়ে যাওয়া হলো; দেহরক্ষীটি অফিসারকে অপমান করা শুরু করলে তাকে বেদম বেটানো হলো। পাশের বাড়ির প্রাচীরের আড়ালে লুকোনো একজন নৈশ পাহারাদারকে হত্যা করা হলো।
শেখকে যখন সেনাবাহিনীর হেডকোয়ার্টারের দিকে নিয়ে যাওয়া হ”িছল, তখন সৈন্যরা তার বাড়ির ভিতরে ঢুকে সমস্ত নথিপত্র নিলো, সামনে যা পেলো তাই চূর্ণ-বিচূর্ণ করলো, বাগানের দরজায় তারা ঝোলালো, সবুজ, লাল এবং হলুদ ‘বাংলাদেশ’র পতাকাকে ভূপাতিত করে চলে গেল।

শহরের চারদিকে আগুন জ্বলছিল এবং সৈন্যরা বিশ্ববিদ্যালয় ও তৎসংলগ্ন জায়গাটুকু দখল করে নিয়েছিল। কোন কোন অঞ্চলে তখনও প্রচ- শেলিং হচ্ছিছল, তবে যুদ্ধের গতি ক্রমশঃ নিথর হয়ে আসছিল। ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের উল্টোদিকে ‘দি পিপল’ পত্রিকার শূন্য অফিস এবং তৎসংলগ্ন প্রায় সমস্ত বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেয়া হলো এবং নৈশ পাহারাদারও রেহাই পেলো না।

ভোরের কিছু আগে গুলিবর্ষণ প্রায় থেমে গেল এবং সূর্য ওঠার সাথে সাথে এক ভীতিজনক নিঃশব্দতা শহরের উপর চেপে বসলো: ফিরে আসা দু’তিনটে ট্যাংকের শব্দ, মাঝে মাঝে কনভয়ের শব্দ ও কাকের চিৎকার ছাড়া সম্পূর্ণ শহরে মনে হচ্ছিল পরিত্যাক্ত এবং মৃত।

দুপুরের দিকে, আবার কোন রকম সাবধানবাণী না জানিয়ে শহরের পুরনো অঞ্চলে সৈন্যরা ঢুকতে লাগলো যেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা গলি-ঘুপচির মধ্যে একলক্ষ লোক বাস করে। পরবর্তী এগারো ঘণ্টা ‘পুরনো শহর’ নামে পরিচিত এ অঞ্চলের বিরাট অংশটুকু তারা ধ্বংস করলো যেখানে শেখ মুজিবের সমর্থনকারীদের সংখ্যা ছিল বেশি। ইংলিশ রোড, ফ্রেঞ্চ রোড, নাজিরা বাজার, নয়াবাজারকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দেখা হলো। ‘হঠাৎ তারে রাস্তার প্রান্তে দেখা গেল’ জানালো নাজিরাবাজার এলাকার এক বৃদ্ধ, ‘তারপর তারা এগিয়ে এলো প্রত্যেক বাড়িতে গুলি করতে করতে।’
গ্যাসোলিনের টিন হাতে সৈন্যরা অগ্রবর্তী ইউনিটকে অনুসরণ করতো। যারা পলাবার চেষ্টা করতো তাদের গুলি করা হতো। যারা থাকতো তারা পুড়ে মারা যেতো। সেদিন দুপুর থেকে রাত দু’টোর মধ্যে প্রায় সাতশো পুরুষ, মহিলা এবং শিশু মৃত্যুবরণ করেছে বলে আমাকে জানানো হয়েছে।

‘আমি আমার কনস্টেবলদের খুঁজছি’, শনিবার সকালে একটি বাজার এলাকার ধ্বংসাবশেষের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে বললেন জনৈক পুলিশ ইন্সপেক্টার, ‘আমার এলাকায় ছিল ২৪০ জন এবং এ পর্যন্ত আমি খুঁজে পেয়েছি ৩০ জনকে এবং সবাই মৃত।’ পুরনো শহরের হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সৈন্যরা লোকদের জোর করে ঘর থেকে টেনে এনে হত্যা করেছে। এবং এ এলাকাকেও সবশেষে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে।

পুরনো শহরে, ২৬ মার্চ, শুক্রবার, রাত এগারোটা পর্যন্ত সৈন্যরা ছিল এবং স্থানীয় বাঙালি ‘ইনফরমার’দের নিয়ে ঘুরছিল। সৈনিকেরা অগ্নিগোলক জ্বালিয়ে দিতো আর চরেরা দেখিয়ে দিত আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ঘরবাড়ি। প্রত্যক্ষদর্শীর মতে, তখন ঐ বাড়িটিকে হয় সরাসরি ট্যাংক বা রিকয়েলেস রাইফেল থেকে গুলি করে বা এক টিন গ্যাসোলিন দিয়ে ধ্বংস করে দেয়া হতো। ইতোমধ্যে শহরতলি থেকে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যরা শেখের সমর্থনের কেন্দ্র থেকে দশমাইল দূরে শিল্প এলাকার দিকে চলে যাচ্ছিল। কিন্তু শুক্রবার রাতে অর্থাৎ শুরু হওয়ার ঠিক ২৪ ঘণ্টা পর শহরে অভিযানের আসল পর্যায় প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল।

বাংলা সংবাদপত্র ‘ইত্তেফাক’ ছিল অভিযানের একটি শেষ লক্ষ্য। অভিযান শুরু হওয়ার সাথে সাথে প্রায় চারশো লোক ঐ অফিসে আশ্রয় নিয়ে ছিল বলে জানা গেছে। শুক্রবার, বিকেল চারটায় বাইরের রাস্তায় চারটি ট্যাংক দেখা গেল। প্রত্যক্ষদর্শীর মতে, সাড়ে চারটার দিকে অফিসটি নরক হয়ে গেল। শনিবার সকালবেলা কতকগুলো ভস্মীভূত লাশ পেছনের কামরাগুলোতে পড়ে থাকলো।

যে ভাবে দ্রুত সৈন্যরা নেমে এসেছিল রাস্তায় ঠিক তেমনিই তারা আবার ফিরে গেল। শনিবার সকালে রেডিওতে ঘোষণা করা হলো, সকাল সাতটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত কার্ফু শিথিল করা হবে। এরপর রাজনৈতিক তৎপরতার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সামরিক আইনের ধারাগুলি পুনর্বার ঘোষণা করা হলো প্রেস সেন্সরশিপ জারি করা হলো এবং সমস্ত সরকারি কর্মচারীদের কাজে যোগ দিতে আদেশ করা হলো। সমস্ত ব্যক্তিগত অস্ত্রশস্ত্র কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে বলা হলো।

অলৌকিকভাবে শহরে জীবন ফিরে এল এবং সেই সঙ্গে দেখা গেল আর্তি, ভয়, আশংকা। দশটার দিকে দেখা গেল রাস্তাগুলো লোকজনে ভরে গেছে, সবাই শহর ত্যাগ করছে। অন্যদিকে তখনও পুরনো শহরের অনেক এলাকা এবং দূরে শিল্প এলাকার উপরে কালো ধোঁয়ার কু-লী দেখা যা”িছল। গাড়ি এবং রিকশা করে, বেশীর ভাগ পায়ে হেঁটে জিনিষপত্র হাতে নিয়ে ঢাকার লোকেরা পালা”িছল। দুপুরতক শরণার্থীদের সংখ্যা দাঁড়ালো গিয়ে লক্ষাধিকের উপর। ‘আমি বুড়ো লোক, আমাকে একটু পৌঁছে দেবেন। আল্লার ওয়াস্তে আমাকে একটু সাহায্য করুন, আমার ছেলেটাকে আপনার সাথে নিয়ে যান।’

সৈন্যদের কীর্তি নিঃশব্দে এবং কঠিন মুখে দেখতে দেখতে তারা যাচ্ছিল।

সরকারি অফিসগুলো প্রায় শূন্য রইলো। কাজে ফেরার আদেশকে উপেক্ষা করে বেশিরভাগ কর্মচারীই গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছিল। যারা পালাচ্ছিল না তারা ধুমায়িত ধ্বংসাবশেষে লক্ষ্যহীনভাবে ঘুরছিল আর দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া কালো করগেটেড টিন (প্রায় বস্তি এলাকার ছাদের জন্য ব্যবহার করা হয়) তুলে কিছু উদ্ধার করা যায় কিনা দেখছিল।
প্রায় প্রত্যেকটি গাড়িই হয় লোকজন নিয়ে গ্রামের দিকে যা”িছল নয় রেডক্রসের পতাকা উড়িয়ে মৃত এবং আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল।

তারমেধ্য হঠাৎ হঠাৎ সৈন্যদের কনভয়গুলো দেখা দিত। কনভয়গুলোতে সৈন্যরা চোখ মেলে দেখছে, হাসির লেশমাত্র নেই, বোবা, স্তব্ধ জনতার দিকে, বন্দুকের নল উঁচিয়ে ধরে। শনিবার বিকেল চারটায় রাস্তাঘাট আবার খালি হয়ে গেল। সৈন্যরা আবার বেড়িয়ে এলো আর নিস্তব্ধতা আবার ডানা মেলে দিলো ঢাকার উপর। কিন্তু প্রায় সাথে সাথে আবার গুলীবর্ষণ শুরু হলো। ‘চারটের পর যে বের হবে তাকেই গুলি করা হবে।’ সেদিন আরো রেডিওতে ঘোষণা করা হয়েছিল।
কার্ফুর দু’মিনিট পর ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনের রাস্তা দিয়ে একটা ছোট ছেলে দৌঁড়ে যাচ্ছিল, তাকে থমিয়ে এক অফিসার গালে চার বার চড় কষালো তারপর জীপে করে নিয়ে গেল।

ঔপনিবেশিক আমল থেকে স্থাপিত ‘বার’ ঢাকা ক্লাবের নৈশ পাহারাদারকে গুলি করা হয় যখন সে ক্লাবের গেট বন্ধ করতে যাচ্ছিল। একদল হিন্দু পাকিস্তানি বাস করতো রেসকোর্সের মধ্যেকার মন্দিরে। তাদের সবাইকে হত্যা করা হয়। মনে হয় তারা বাইরে ছিল বলেই প্রাণ হারায়।

বাস্তুত্যাগীরা ফের শহরে ফিরে আসতে লাগলো, কারণ বের হওয়ার পথগুলো সেনাবাহিনী আটকে দিয়েছিল। তারা এসে জানালো সৈন্যদের এড়িয়ে গ্রামে যাওয়ার সময় কতোজনককে হত্যা করা হয়েছে। বহুলোক রাস্তা ছেড়ে নদীপথে রওনা হয়েছিল, কিন্তু তাদের সামনে অন্য বিপদের ঝুঁকি ছিল। যখন কার্ফুর সময় হতো তখন নৌকা না পেয়ে অনেকে আটকে যেত। শনিবার বিকেলে তখন এক দল আটকে গিয়েছিল, পরদিন সকালে সেখানে শুধু রক্তের দাগ খুঁজে পাওয়া গেছে।
কোথাও শৃঙ্খলাবদ্ধ প্রতিরোধের চিহ্ন নজরে পড়ছে না।

পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাঙালিদের এখনও পদানত রাখতে চায় নিউ ইয়র্ক টাইমসের সংবাদদাতা সিডনি এইচ শানবার্গ উপরোক্ত শিরোনামে ১৯৭১ সালের ১৪ জুলাই তার পত্রিকায় লেখেন:
এখন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানীর প্রায় শূন্য রাস্তায় সেনাবাহিনীর ট্রাক গড়িয়ে গড়িয়ে যায়। ঐ সব ট্রাকে ভর্তি বন্দিরা। তাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কঠিন শ্রম করবার জায়গাগুলোতে। তাদের মাথা কামানো, পায়ে কোন জুতো নেই, পরনে শুধু জাঙ্গিয়া, সব মিলিয়ে পালানোটা দুরূহ।

প্রতিদিন রাজধানী ঢাকার বিমান বন্দরে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে প্লেনগুলো উড়ে আসতো। প্লেনগুলো সৈন্য ভর্তি, পরনে তাদের উপজাতীয়দের মত ঢোলা পাজামা, যাতে করে তারা সহজে ধরা না পড়ে। বাঙালি সংস্কৃতিকে দমন করার অভিযানের একটি অংশ হিসেবে বাঙালি মুসলিম জাতীয়তাবাদী ও হিন্দুদের নামাঙ্কিত রাস্তাগুলোর নাম পাল্টে দেয়া হচ্ছে। শাঁখারীবাজার এখন পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক গভর্ণর ও লেফটেনান্ট জেনারেলের নামানুসারে ‘টিক্কা খান রোড’ যাকে বাঙালিরা নাম দিয়েছে ‘কসাই’ বলে।

অসংখ্য উদাহরণের মধ্যে এগুলো হলো কয়েকটি যেগুলো এই সংবাদদাতা পূর্বাঞ্চলে সাম্প্রতিক সফরের সময় দেখেছেন। পাকিস্তানি সামরিক শাসকরা এই অঞ্চল তাদের দখলে রাখতে এবং সাড়ে সাত কোটি মানুষকে পদানত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। পঙ্গু অর্থনীতি, সরকারি প্রশাসনের ভাঙ্গন, বাঙালি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ক্রমবর্ধমান গেরিলা তৎপরতা, ক্রমবর্ধমান সৈনিকদের মৃত্যু এবং বিচ্ছিন্ন বিষন্ন জনসাধারণের নীরব প্রতিবাদ সত্ত্বেও পশ্চিম পাকিস্তানিরা অমন করছে। পূর্ব পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর শক্তিবৃদ্ধি করবার জন্য কোন একটি আইরিস মালিকানাধীন বিমান সংস্থা থেকে। ঐ বিমান সংস্থার নাম ‘ওয়ার্ল্ড এয়ার ওয়েজ’। বিমান দুটো ভাড়া করা হয়েছিল সত্তর হাজার থেকে আশি হাজার সৈনিক বৃদ্ধি এবং হতাহতদের স্থান পূরণের জন্য।

প্রতিদিন সামরিক বাহিনীর আগম ছাড়াও, কর্তৃপক্ষ পূর্ব পাকিস্তানিদের জায়গায় কাজ করার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানিদের আনছে। দায়িত্বশীল কাজের জন্য কোন বাঙালিকে বিশ্বাস করা হচ্ছে না, এমন কি ঢাকা বিমান বন্দরে যে লোকটি ঘাস কাটে সেও অবাঙালি।

বাঙালি ট্যাক্সি ড্রাইভার প্রায় নাই। তাদের চাকরিগুলো দেয়া হয়েছে ভারত থেকে আগত অবাঙালি মসলমান বা¯‘ত্যাগীদের যেমন বিহারী, যারা নিজেদের পশ্চিম পাকিস্তানিদের সাথে একাত্ম মনে করে। সরকারের পক্ষাবলম্বনও করছে তারা এবং খোঁজ খবর দিয়ে সামরিক বাহিনীর বেসামরিক কাজ চালাচ্ছে।

পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাংলা ভাষা ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করছে এবং বাংলার পরিবর্তে নিজেদের ভাষা উর্দুকে প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করছে। সৈন্যরা অবজ্ঞাভরে বাঙালিদের বলে, তাদের ভাষা সভ্য জাতির ভাষা নয় এবং তারা যদি ঠিকঠাক মতো বেঁচে-বর্তে থাকতে চায় তবে তাদের ছেলে-মেয়েদের উর্দু সেখানো উচিত। ব্যবসায়ীরা ভয়ে তাদের বাংলা সাইনবোর্ড ইংরেজিতে পাল্টিয়ে নিচ্ছে: তারা উর্দু জানে না।

সমস্ত পূর্ব পাকিস্তানে, সামরিক বাহিনী নতুন এক প্যারা-মিলিশিয়া বাহিনীকে ট্রেনিং দিচ্ছে যাকে সহজ কথায় বলা যায় ‘অনুগত’ নাগরিকদের অস্ত্রে সজ্জিত করছে। এদের মধ্যে অনেকে আবার শান্তি কমিটির সদস্য। বিহারী এবং অন্যান্য অবাঙালি, উর্দুভাষী মুসলমান ছাড়াও এই কমিটিতে আছে সামরিক বাহিনী অনুরাগী ডানপন্থী ধর্মীয় দল, যেমন মুসলিম লীগ ও জামাতে ইসলামীর সমর্থক।

বাংলাদেশের প্রতি অনুগত পুলিশ ও সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত প্রাথমিক স্তরের প্রতিরোধ সংগ্রাম স্বল্পকালের মধ্যেই স্তব্ধ করা হয়। কিন্তু প্রতিরোধ সংগ্রাম বর্তমানে নবশক্তি সঞ্চয় করছে ভারতীয় সীমানার আশ্রয়স্থল থেকে, নতুন লোক এবং সরবরাহ নিয়ে ভিয়েতনামী কায়দায় গেরিলা যুদ্ধ শুরু করছে বাঙালিরা এখন, যা সামরিক বাহিনীতে ক্রমবর্ধমান ত্রাসের সঞ্চার করছে।

পূর্ব পাকিস্তানের দুরাতিগম্য জায়গায় যে সব বিদেশি মিশনারিরা আছেন তারাও প্রতিদিন নতুন নতুন হত্যাযজ্ঞের কাহিনী জানাচ্ছেন। জনৈক মিশনারি জানিয়েছেন, দক্ষিণে বরিশাল জেলায় সম্প্রতি সেনাবাহিনী একদিনে এক হাজার হিন্দুকে হত্যা করেছে। আরেকটি বিবরণীতে বলা হয়েছে উত্তর পূর্বে সিলেট জেলায় একটি শান্তি কমিটি কোন এক অঞ্চলের সমস্ত অধিবাসীদের মধ্যে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার নাম করে জনসভার আহবান জানায়। সবাই যখন সভায় উপস্থিত হলো তখন তিনশো জন হিন্দুকে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো এবং গুলী করে হত্যা করা হলো।

যখনই একজন বাঙালি প্রকাশ্যে একজন বিদেশির সাথে কথা বলছে তখনই ধরে নিতে হবে সে বিপদের ঝুঁকি নিচ্ছে। ফেরি পার হবার সময় বাঙালিরা এই সংবাদদাতার গাড়ির কাছে এসে চুপি চুপি সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুরতার সংবাদ দিয়েছে, অথবা মৃদু হেসে মুক্তি বাহিনীর গেরিলাদের অভিযানের সংবাদ জানিয়েছে। যখনই ছ’সাত জন লোক একত্রি হয় তখনই সেখানে পশ্চিম পাকিস্তানি একজন সৈন্য বা পুলিশ এসে বাঙালিদের গালিগালাজ করে ও তারাও সরে পড়ে।

সামরিক বাহিনী ও তাদের চরদের উপস্থিতি সত্ত্বেও বাঙালিরা বিদেশিদের গাড়িতে একটুকরো কাগজে নোট লিখে ফেলে দিয়ে বা গোপন সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে তাদের কাহিনী শোনাবার পথ করে নিচ্ছে। ঢাকা থেকে অনতিদূরে এক শহরে এমনি এক সাক্ষাতকারে এক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন যে, তাকে একদিন বিনা কারণে সৈন্যরা ধরে নিয়ে যায়, তার টাকা পয়সা এবং ঘড়ি কেড়ে নেয় ও অলৌকিকভাবে মুক্তি পাওয়ার আগে তাকে পুলিশ থানায় নিয়ে এক রাত্রির জন্য জেলে রাখে।

ব্যবসায়ীটি জানিয়েছেন, সারারাত তিনি প্রার্থনা করে ও দেয়ালে পূর্ববর্তী বন্দিদের লেখা পড়ে কাটিয়েছেন। লেখাগুলো, তিনি জানিয়েছেন, সব একই রকমের: নিজের না ও বন্দির ঠিকানা ও তার গ্রেফতারের তারিখ দেয়া আছে এবং সাথে লেখা আছে, ‘আমি হয়ত নাও বাঁচতে পারি। দয়া করে আমার পরিবার-পরিজনকে বলবেন আমার ভাগ্যে কি ঘটেছিল।’
এখন পর্যন্ত গণহত্যার সাথে সাথে ব্যাপকভাবে ধ্বংসকরণও সাধন করেছে বিষয়-সম্পত্তির। গ্রামের দিকে কখনও কখনও এক টানা মাইলের পর মাইল রাস্তার দু’পাশের গ্রামগুলোকে পুড়িয়ে মাটির সাথে সমান করে দেয়া হয়েছে। শহরের এবং নগরের বিরাট এলাকা প্রবলভাবে গুলি বর্ষণ করে ধ্বংস স্তূপে পরিণত করা হয়েছে। ছিল নয় ছিল প্রতিরোধহীন।
কেন এই ধ্বংসযজ্ঞ? তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হয়। তাদের বাঁধাধরা জবাব, এসব কিছু করছে, ‘দুষ্কৃতকারীরা।’

যদিও অনেক বাঙালি জনবহুল অঞ্চলগুলোতে ফিরে আসছেন, প্রায় শহরগুলোতে আসল জনসংখ্যার হয় অর্ধেক নয় অর্ধেকেরও কম লোক আছে এবং কিছু কিছু অঞ্চলে, যেমন উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে লোকজন প্রায় নেই বললেই চলে।
অযতেœর ফলে ধানের ক্ষেতগুলোকে আগাছা ঢেকে দিচ্ছে। পাট ক্ষেতে যেখানে আগে দিনে ডজন খানেক মজুর কাছ করতো এখন সেখানে কয়েকটি নুয়ে পড়া পিঠ মাত্র নজরে পড়ে। পূর্ব পাকিস্তানের পাট দিয়ে মজবুত থলে প্রস্তুত করা হয় এবং ঐ পাট হলো জাতীয় অর্থনীতির প্রধান অবলম্বন ও একমাত্র প্রধান রফতানি দ্রব্য ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী দ্রব্য। যে সব চিহ্ন এখন পরিস্ফুট তাতে দেখা যায় সামনের ফসল আশংকাজনকভাবে কম হবে। আর ফসল ডদি ভালোও হয় তবুও পাটের কারখানাগুলো কাজ করতে পারবে না, কেননা তাদের অধিকাংশ দক্ষ শ্রমিক পালিয়ে গেছে। তাদের উৎপাদন অত্যন্ত কম।

নদীপথে বিদ্রোহীদের তৎপরতা অব্যাহত। সেনা চলাচল বন্ধ ও উৎপাদিত পাট মিলে যাতে পৌঁছাতে না পারে তার জন্য তারা সচেষ্ট। যশোর-খুলনা অঞ্চল বা পাটে সমৃদ্ধ সেখানে ইতোমধ্যে তারা কয়েকটি পাটের বার্জ ডুবিয়ে দিয়েছে।
কিছু কিছু অঞ্চলে খ্যা ঘাটতি ক্রমশই চরম আকার ধারণ করছে এবং বিশেষজ্ঞদের মতে সামরিক বাহিনী যদি বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা আবার জোড়া লাগাতে না পারে তবে দুর্ভিক্ষ অনিবার্য।

কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করা বোধ হয় সম্ভব হবে না, কেননা বাঙালিদের প্রতিরোধ সংগ্রাম ক্রমেই দুর্বার আকার ধারণ করছে। যদিও ঐ প্রতিরোধ এখনও বিশৃঙ্খল তবুও মনে হচ্ছে ভারতের আশ্রয়, সাহায্য এবং কোন কোন সময় সহায়ক গোলাবর্ষণের সুযোগে ঐ প্রতিরোধ ক্রমাগত শক্তি সঞ্চয় করছে।

হাজার হাজার তরুণ বাঙালিকে ভারতীয় সীমানার ভিতর গেরিলা যুদ্ধ ও ধ্বংকরণের শিক্ষা দেয়া হচ্ছে, ভারতীয়রা এ ব্যাপারে অনেক প্রশিক্ষক দিয়ে সাহায্য করছে। নতুন গেরিলাদের প্রথম দল এখন পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে আসছে।
রাস্তা ও রেলসেতু এবং বৈদ্যুতিক শক্তি সরবরাহ কেন্দ্রগুলো উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এসব ধ্বংসকরণের কাজে গেরিলারা সবিশেষ নৈপূণ্য প্রদর্শন করছে। রাস্তায় মাইন একটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সদ্যসতর্ক সেনাবাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক করার জন্য স্থানীয় ঠিকাদারদের পাচ্ছে না। সুতরায় তারা শ্রমিকদের জোর করে ধরে এনে কাজ করাতে চেষ্টা করছে। কিন্তু তাতে ফল হচ্ছে না।

কুমিল্লার বাইরে কিছুদিন আগে গেরিলারা একটি রেলসেতু উড়িয়ে দেয়। সেনাবাহিনীর প্রহরায় একটি মেরামতকারী ট্রেন পাঠানো হয়। গেরিলারা প্রকাশ্য দিবালোকে ওই ট্রেন আক্রমণ করে ফায়ারম্যানকে হত্যা করে এবং একজনকে বন্দি হিসেবে ধরে নিয়ে যায়। ট্রেনটি দ্রুত শহরের দিকে ফিরে আসে।

[মূল ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ: মুনতাসীর মামুন]











Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.