× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

বালু ভরাট ও শিল্পায়নে মরুর পথে সোনারগাঁওয়ের ফসলি জমি

সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

২১ এপ্রিল ২০২৪, ১৬:২৮ পিএম

দখল ও ভরাটের কবলে পড়ে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ইরি, বোরো ধানি জমিসহ তিন ফসলি আবাদি জমি।বর্তমানে চাষাবাদ করার মত এক খন্ড আবাদি জমিও নেই সোনারগাঁ পিরোজপুর ইউনিয়নের মানচিত্রে। 

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে ফসলি জমি।নব্বই দশকের পর থেকে পিরোজপুর ইউনিয়নের মেঘনাঘাট এলাকা থেকে শুরু করে ইউনিয়নের সর্বত্র একের পর এক বিভিন্ন শিল্পকারখানা স্থাপন, সামিট, ওরিয়ন, মেঘনাঘাট পাওয়ার প্লান্ট ও নির্মাণাধিন ইউনিক প্রজেক্টসহ বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, দখল ও ভরাটের কবলে পড়ে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ইরি, বোরো ধানি জমিসহ তিন ফসলি আবাদি জমি।

বর্তমানে চাষাবাদ করার মত এক খন্ড আবাদি জমিও নেই পিরোজপুর ইউনিয়নের মানচিত্রে।মেঘনা নদীবেষ্টিত সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের অভ্যন্তরে এক সময় কয়েকটি শাখা নদী, পুরাতন খাল-বিল, ফসলি জমি, মাছ আর জীববৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ ছিল পুরো এলাকা। কিন্তু উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, আধুনিক নগরায়ণ, রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব, শিল্পকারখানায় জড়িত স্থানীয় ব্যবসায়ী মহল ও সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতির মানসিকতা, দালাল ও ভূমিদস্যুদের দৌরাত্ন্যে হারিয়ে গেল সব ফসলি জমি। এছাড়া পিরোজপুর ইউনিয়নে অবস্থিত বিভিন্ন শিল্পকারখানার দূষিত বর্জ্য, শব্দ ও বায়ুদূষণের কবলে পড়ে পরিবেশ বিপর্যের মুখে পিরোজপুর ইউনিয়নবাসী। পিরোজপুর ইউনিয়নের চররমজান সোনাউল্লা মৌজায় ঝাউচর, প্রতাবেরচর, আষাঢ়িয়ারচর, দুধঘাটা,কোরবানপুর, চরগোয়ালদী, মঙ্গলেরগাঁও, পিরোজপুর মৌজায় চান্দেরচক, নয়াগাঁও, পিরোজপুর, অন্যান্য মৌজায় কান্দারগাঁও, নাগেরগাঁও, মৃধাকান্দি, জৈনপুর ও ছয়হিস্যা এলাকাসহ পুরো এলাকায় ছিল বিস্তীর্ণ বিল। যেখানে সারাবছরই নিচু জমি ও ডোবায় পানি জমে থাকত। সেগুলো ভরাট করে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন শিল্পকারখানা, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, বাড়িঘর, দোকানপাটসহ নতুন নতুন স্থাপনা।

সাদিপুর ইউনিয়নের বেইলর, বড়িবাড়ি, জামপুর ইউনিয়নের বস্তল এলাকার একই অবস্থা। বাংলাদেশ পরিবেশ আইন অনুযায়ী, যে কোনো আবাসন বা বড় উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা (ইআইএ) করে এর অনুমোদন নিতে হয়।

প্রয়োজন হয় অবস্থানগত ছাড়পত্রের। এসবের পর পরিবেশ ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করতে হয়। এসব ছাড়পত্র পেলে তবেই মাটি ভরাটসহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজ করতে হয়। কিন্তু পুরো সোনারগাঁজুড়েই শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো এই প্রক্রিয়া অবলম্বন না করে এবং পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই বালু ভরাট করে পুরাতন খাল-বিল ও কৃষকদের জমি জোরপূর্বক দখল করেছে।

অব্যাহত দখল, ভরাট ও দূষণের কবলে পড়ে সোনারগাঁবাসী এখন অস্তিত্ত্ব সঙ্কটে পড়েছে। পাশাপাশি দখল ভরাটের কবলে বর্ষা মৌসুমে জলাধারে পানি জমতে না পারায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে। শুস্ক মৌসুমে খরার প্রভাবে ফসলি জমি না থাকায়, মৎস্য ও জীববৈচিত্র্য পূর্ণ সোনারগাঁ এলাকা স্থায়ীভাবে মরুকরণের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। পুরো সোনারগাঁওয়ে কলকারখানার কালো ধোঁয়ায় ও বর্জ্যে ফসলি জমি,নদীর মাছ, ফলের গাছ,বায়ু ইত্যাদির বিপর্যয় হচ্ছে।

সাদিপুর গ্রামের আল আমীন আক্ষেপ করে বলেন, এখন গাছে আম হয় না,নারিকেল হয় না, কোন ফল ফসল হয় না তেমন।ফলে শত শত কোটি টাকার ফল ও ফসল নষ্ট হচ্ছে কলকারখানার কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ নষ্ট হওয়ার কারণে।

অপুষ্টি ভোগছে ও অর্থ হারাচ্ছে সোনারগাঁবাসী।এব্যাপারে স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন, নাগরিক কমিটি, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিগত সময়ে পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও কর্তৃপক্ষ তৎপর হয়নি। এই ধারা আর কিছুদিন অব্যাহত থাকলে শুস্ক মৌসুমে এলাকাবাসী সুপেয় পানির সংকটে পড়বে। একই সঙ্গে কৃষি ও জীববৈচিত্র্যে বিরূপ প্রভাব এবং বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার স্থায়ীরূপ নিবে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা।

দুধঘাটা এলাকার রিপন আক্ষেপ করে জানান, বাপ, দাদার কালীন আমল থেকে আমরা যে সব জমিতে ইরি, বোরো ধান চাষ করেছি স্থানীয় কিছু দালাল চক্রের কারনে বাধ্য হয়ে ঐসব জমি বিক্রি করে দিতে হয়েছে। বর্তমানে আমাদের বসত ভিটা ছাড়া ধান চাষ করার মত এক টুকরো জমিও আর বেচে নেই। বিভিন্ন কৌশলে সব কোম্পানির লোকেরা জোরপূর্বক কিনে নিয়ে গেছে। চারদিকে শুধু কোম্পানি আর কোম্পানি, ভবিষৎতে আমাদের বসবাস করার মতো জায়গা থাকবে কি-না জানি না।

মৃধাকান্দী এলাকার কৃষক আলী আক্ষেপ করে বলেন, এখন আর বসত ভিটে ছাড়া এক খণ্ড জমিও নেই চাষাবাদ করার জন্য।ছয়হিস্যা ও নাগেরগাঁও এলাকার একটি বিশাল বিল একটি কোম্পানি স্থানীয় কিছু দালাল চক্র ও ভূমি দস্যুদের সাহায্যে সাধারন কৃষকদের চাপে ফেলে কিনে নিয়েছে। আমরা তাদের কাছে অসহায় হয়ে ধানের জমি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। এই বিলে ধান চাষ করে সারা বছর আমাদের সংসারে ভাতের যোগান হত। এখন এক খণ্ড জমিও নেই ধান চাষ করার মত।বালু ফেলে সব জায়গা ভরাট করে ফেলেছে কোম্পানির লোকেরা।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.