× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

নিখোঁজের ৩৫ বছর পর জানা গেল সুফিয়া পাকিস্তানে, বাড়ি ফেরার আকুতি

মোস্তাফিজুর রহমান, বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি

২০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:৩৪ পিএম

বাড়ি থেকে ৩৫ বছর আগে নিখোঁজ হয়ে যান সুফিয়া বিবি (৫৯)। তখন আনুমানিক বয়স ছিল ২০ থেকে ২১ বছর। পরিবারের লোকজন ওই সময়ে পায়ে হেঁটে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান পাননি সুফিয়া বিবির। পরে স্বজনরা হাল ছেড়ে দেন। পরিবারের লোকজন ভেবে নিয়েছেন সুফিয়া বিবি হয়তো বেঁচে নেই।

গত সোমবার (১৫ এপ্রিল) ‘দেশে ফেরা’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ফেসবুক আইডি থেকে একটি ভিডিও প্রকাশ হয়। সেখানে এক মহিলা তার আকুতি প্রকাশ করেন। তার বাড়ি বাংলাদেশে বলে বক্তব্য দেন।

এতে তিনি বলেন, তার নাম সুফিয়া বিবি। বাবার নাম চান মিয়া। ভাই সাইদির রহমান রহমান, মতিয়ার রহমান, বোন রোকসানা বেগম ও নুর জাহান। বাড়ি বাংলাদেশের রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার নাওপাড়া কাশিগঞ্জ গ্রামে। ওই ভিডিওতে বলেন বর্তমানে তিনি পাকিস্তানের ওমর উদ্দিন নামে একটি এলাকায় বসবাস করছেন। ওই সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর ভিডিওটি ভাইরাল হলে পরিবারের লোকজন তাকে শনাক্ত করেন।

এলাকাবাসী ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, বদরগঞ্জ উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের নাওপাড়া কাশিগঞ্জ গ্রামের চাঁন মামুদ ও শরিতন নেছা দম্পত্তির মেয়ে সুফিয়া বিবি। ১৭ থেকে ১৮ বছর বয়সে পারিবারিকভাবে পাশের দামোদরপুর ইউনিয়নের বারো বিঘা গ্রামের দিনমজুর জব্বার মিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। সংসার চলাকালীন তাদের ঘরে দুই মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। পরে স্বামী ও এক কন্যা সন্তানের ডায়রিয়া হয়ে মৃত্যু হয়। তার কিছুদিন পরে এক কন্যা সন্তানকে নিয়ে বাপের বাড়িতে ফিরে আসেন সুফিয়া। কিছুদিন বাপের বাড়িতে থাকার পর ঢাকায় চলে যান সুফিয়া। তিন মাস ঢাকায় থাকার পর বাড়িতে ফিরে আসেন। আবারো ঢাকা যেতে চাইলে বাবা মা ভাই বোনরা নিষেধ করেন। হঠাৎ করেই পরিবারে কাউকে কিছু না বলেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যান সুফিয়া। আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরিবারের লোকজন ভেবে নিয়েছে সুফিয়া মারা গিয়েছে। ৩৫ বছর পর হঠাৎ করে একটি ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে সুফিয়ার স্বজনদের দৃষ্টি কাড়ে। পরে যোগাযোগ করা হয় দেশে ফেরা গ্রুপের সদস্যদের কাছে। তারাও সুফিয়ার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হন।

গত বুধবার (১৭ এপ্রিল) বিকেল চারটায় ‘দেশে ফেরা’ গ্রুপের সদস্য তানভির হাসানের সহযোগিতায় পাকিস্তান থেকে বদরগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে সুফিয়ার বাড়িতে সুফিয়ার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মাধ্যমে কথা বলার ব্যবস্থা করা হয়। সেখান থেকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন সুফিয়া। আর সহযোগিতা করেন ‘দেশে ফেরার’ টিম সদস্যরা।

এদিকে জানতে চাইলে দেশে ফেরা গ্রুপের সদস্য তানভীর হাসান বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সদস্য নিয়ে আমাদের একটি সামাজিক সংগঠন আছে। মূলত যারা বিভিন্নভাবে একদেশ থেকে অন্য দেশে গিয়ে নিখোঁজ বা পাচার হয়েছেন। তাদের নিজ নিজ দেশের স্বজনদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে থাকি। দীর্ঘদিন ধরে আমরা এ নিয়ে কাজ করছি। হারিয়ে যাওয়া মানুষদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়াই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।

তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত ভারত পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ১১৬ জনকে আমরা স্বজনদের কাছে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। তেমনি একজন সুফিয়া বিবির সম্পর্কে আমাদের কাছে খোঁজ আসে। বর্তমানে তিনি পাকিস্তানে রয়েছেন। পাকিস্তানে বসবাসরত বন্ধু মারুফ হুসাইন মূলত সুফিয়ার বিষয়ে আমাদের কাছ থেকে তথ্য জানতে চান। আমরা এটি ফেসবুকে ভাইরাল করলে তার স্বজনদের খোঁজ মেলে। এখন দুই পক্ষের মধ্যে যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দেওয়াই হচ্ছে আমাদের কাজ। পরে প্রশাসনের মাধ্যমে আইনগত পদক্ষেপ নিলে সুফিয়া দেশে স্বজনদের কাছে ফিরতে পারবেন।

তানভির হাসান বলেন, অনেক প্রতারক চক্র এরকম সুযোগ নিয়ে নিখোঁজের স্বজনদের কাছ থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেন। এ থেকে আমরা সকলকে সতর্ক করে দেই। আমরা কারো কাছ থেকে কোনো অর্থ সহায়তা নেই না।

তানভির হাসান আরও বলেন, বুধবার বিকেল ৪ টায় সুফিয়ার সঙ্গে তার পরিবারের মধ্যে ভিডিও কলের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়। তারা চাইলে দুই দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে ফেরত নিতে পারবে।

সুফিয়া বিবির ভাই সাহিদার রহমান বলেন, গত সোমবার রাতে ফেসবুকে ভিডিওতে দেখতে পাই, আমার বোন সুফিয়া মা–বাবা, ভাই–বোন সবার নাম বলছেন। তবে বোনকে দেখেই আমি চিনতে পারি। গত বুধবার মুঠোফোনে ভিডিও কনফারেন্স করে আমরা সব ভাই–বোন তাঁর সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছি। এ সময় বড় বোন সুফিয়া আমাদের খোঁজখবর নেন এবং দেশে ফেরার জন্য আকূতিমিনতি করেন। সুফিয়া বর্তমানে পাকিস্তানের করাচিতে আছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। কিন্তু কীভাবে তিনি পাকিস্তানে গেছেন, তা জানা সম্ভব হয়নি। এখন বোনকে কীভাবে আমরা ফেরত পাব, তা বুঝতে পারছি না। তবে আমরা তাঁকে ফেরত পাওয়ার আশায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছি।

তিনি আরো বলেন,ওই সময় আমরা অনেক কষ্ট জীবন যাপন করি। আমরা পাঁচ বোন ছয় ভাই। ওই সময় থাকার কোন জায়গা ছিল না। একটু ধরে মেঝেতে একসঙ্গে সবাই ঘুমিয়ে ছিলাম। তেমন খাবারও ছিল না। প্রায় সময় কচু সিদ্ধ করে খাওয়া হবে। হঠাৎ করেই ছোট বোন সুফিয়া নিখোঁজ হয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায়নি আমরা তো ভেবে নিয়েছি মারা গিয়েছে। সেদিন হঠাৎ করে ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি আমার বোন বেঁচে আছে পাকিস্তানের রয়েছে। তার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলে জানতে পারি সে পাকিস্তানেও একটি বিয়ে করেছিলেন। গত ১৫ সালে সেই স্বামীরও মৃত্যু হয়েছে। এখন আমার বোন একাই পাকিস্থানে রয়েছে। বাড়ি ফিরে আসতে চাই। কিভাবে বাড়িতে আনবো আমি জানিনা। তার থাকার জন্য আমি ঘর ঠিক করে রেখেছি। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করছি আমার বোন সুফিয়াকে পাকিস্তান থেকে বাড়িতে ফিরে আনার ব্যবস্থা করে দিবেন।

সুফিয়া বেগমের ভাবি পারুল বেগম বলেন বলেন, আমি দশ ভাই বোনকে ছোট থেকে মানুষ করেছি। আমি বুঝি সন্তান কাকে বলে। আমার স্বামী বিভিন্ন জায়গায় দিনমজুর করে বেরিয়েছে। আমি ছোট থেকে তাদেরকে যা পেয়েছি খাইয়ে পড়িয়ে বড় করেছি। তখন আমাদের খুব অভাব ছিল। আমরা কচু সিদ্ধ করে খেয়েছি। এক ঘরে মাটিতে সবাই মিলে ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ করে সুফিয়া নিখোঁজ হওয়ার পর। তার একটি মেয়ে সন্তান কে বড় করে ১৩ বছর বয়সে লালদীঘি শালবাড়ি এলাকায় বিয়ে দেই। বিয়ের বিদায়ও দেয়নি। বিয়ে পাঁচ মাস পর হঠাৎ করে সেও নিখোঁজ হয়ে যায় এখনো তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। এরই মধ্যে ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি সুফিয়া বেঁচে আছে। পাকিস্তানে রয়েছে। তার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছি।

সুফিয়া বিবির ভাতিজা কাঁচামাল ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন সংবাদ সারাবেলাকে বলেন,‘ধারণা করছি ফুপু রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন। এরপর তাকে আর কোথাও পাওয়া যায়নি। আমরা ভেবেছিলাম তিনি মারা গেছেন। আমার ফুপুর ছবি দেখে এক বাক্যে বাড়ির সবাই তাকে চিনে ফেলেছে। তার আসার অপেক্ষায় আমরা এখন দিন গুনছি।

মধুপুর ইউপি চেয়ারম্যান নুর আলম ভুট্টু বলেন, বিষয়টি আমিও জানতে পেরেছি। আমরা সবাই চাই সুফিয়া পাকিস্তান থেকে নিজ দেশে স্বজনদের কাছে ফিরে আসুক। সোফিয়ার পরিবারের লোকজন যে ধরনের সহযোগিতা চাইবে আমরা করবো।

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনার কাশফিয়া তাসরিন সংবাদ সারাবেলাকে বলেন, সুফিয়া বিবির  বিষয়টি শুনেছি। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ এখনো যোগাযোগ করেনি। যোগাযোগ করলে অবশ্যই বিষয়টি দেখা হবে।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.