× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

নীলফামারীতে খরায় পুড়ছে রবি ফসলের খেত

মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধি

০৫ মে ২০২৪, ১৬:০৪ পিএম

মৌসুমের শুরু থেকে বৃষ্টি না থাকায় প্রচণ্ড খরায় পুড়ছে নীলফামারী জেলার রবি ফসলের খেত। কাঠফাটা রোদে তপ্ত চারপাশ। যেন বৈশাখের সূর্য আগুন ঝরাচ্ছে। অতিরিক্ত তাপদাহের কারণে শুকিয়ে যাচ্ছে বাদাম, মরিচ, মুগডালসহ শত শত হেক্টর রবি ফসলের খেত। 

অনাবৃষ্টি ও তাপদাহ যেন কেড়ে নিয়েছে এখানকার কৃষকের মুখের হাসি। অতিরিক্তি তাপমাত্রায় বিবর্ণ হচ্ছে ক্ষেত-খামারের ফসল। চলমান দাবদাহে জমিতে দেখা দিয়েছে পানিশূন্যতা ও বিভিন্ন রোগ-বালাই। বাড়তি সেচ দিয়েও ফসল রক্ষায় বেগ পেতে হচ্ছে কৃষকদের। এতে জমির ধান, বাদাম, মরিচ, ভুট্টা, কলাসহ সবজিতে ব্যাপক ক্ষতির আশংকা করছেন চাষিরা।

কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে গেলে ধানে চিটা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেখানে নীলফামারীতে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ওঠানামা করছে ৩৫ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ খরায় হুমকির মুখে পড়তে পারে ফসল উৎপাদন। অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির পাশাপাশি বিরূপ আবহাওয়ায় ফসল উৎপাদন এখন বড় চ্যালেঞ্জ কৃষকদের।

নীলফামারী জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এবার নীলফামারীতে ৮১ হাজার ৮৫৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধান, ১ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে বাদাম, ২৮ হাজার ৩২৩ হেক্টর জমিতে ভুট্টা, ১৭২ হেক্টর জমিতে কলাসহ বিভিন্ন সবজি চাষাবাদ করা হয়েছে।

সদরের টুপামারী ইউনিয়নের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ধানেরতো এখন ফুল ফুটতেছে। যে পরিস্থিতি আকাশের, সকাল বেলা রোদের চাপ আবার বিকেলে কম। এভাবে রোদের তাপে ধানের ক্ষতি হচ্ছে। আর আকাশের যা অবস্থা ঝড় বৃষ্টি হলেও কী যে হবে পরিস্থিতি বলা যাচ্ছে না।’

সদরের পলাশবাড়ী ইউনিয়নের কৃষক নবীজুল ইসলাম নবীন বলেন, ‘এবার কুয়াশা পড়ে বেশিরভাগ বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। পরে চড়া দামে চারা কিনে ধান লাগিয়েছি। এখন তীব্র দাবদাহে বের হওয়া ধান চিটায় পরিণত হবে মনে হচ্ছে। কী খেয়ে পরিবার নিয়ে বাঁচবো আল্লাহ জানে।’

ডোমার বড়রাউতা এলাকার বাদামচাষি আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, তীব্র দাবদাহে মলিন হয়ে যাচ্ছে তার ক্ষেতের বাদাম গাছ। যে মাটিতে সোনা ফলান, সে মাটিই যেন শুকিয়ে প্রাণহীণ। মহাজনের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের টাকায় ফসল রোপণ করলেও খরায় চোখের সামনে নষ্ট হচ্ছে ফসল।

চিকনমাটির আরেক কৃষক বলেন, ‘মাটিতে রস নাই। বৃষ্টিও হচ্ছে না। সেজন্য বাদামের দানাও ছোট হয়ে যাচ্ছে। মেশিনের পানি দিলে ৫ দিনও থাকে না সেই পানি। রোদে সব শুকিয়ে যাচ্ছে।’

ডিমলার খালিশাচাপানী এলাকার কৃষক হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘এবার ১০ বিঘা জমিতে ভুট্টা লাগিয়েছিলাম। ভাবছিলাম ফলন ভালো হবে। কিন্তু খরার কারণে ভু্ট্টার ফলন একবারে কম। লাভ বেশি হবে না।’

ডিমলার খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের কৃষক ভুপেন দাস বলেন, এনজিও থেকে লোন নিয়ে ৩ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়া ও মুগডাল লাগিয়েছি, আকাশের বৃষ্টি না হওয়ায় খড়ায় গাছ পুড়ে যাচ্ছে। মেশিনের পানি দিয়েও রক্ষা করা যাচ্ছে না। এতে উৎপাদন খরচও বাড়ছে। ঋনের টাকা কিভাবে পরিশোধ করবো জানি না।

সৈয়দপুরের বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের ভুট্টা চাষী আক্ষেপ করে বলেন, ২ বিঘা জমিতে ভুট্টা ও দেড় বিঘা জমিতে মরিচ লাগিয়েছি কিন্তু বৃষ্টির পানি না থাকায় ভুট্টার গাছ পুড়ে গেছে, ফলন খুব কম হয়েছে। অন্যদিকে মরিচের ক্ষেত পানির অভাবে গাছ মরে যাচ্ছে। 

নীলফামারী সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আতিক হাচান বলেন, চলমান খরায় রবি শস্য ক্ষতির মুখে পড়ায় কৃষকদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত বৃষ্টি না হওয়ায় এবছর বোরো ধানের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও এবারে বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন দুষ্কর হবে।

নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এসএম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রচণ্ড তাপের কারণে কৃষকের ফসল যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য তাদেরকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন কর্মকর্তারা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.