মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার লাঠিটিলা সংরক্ষিত বন এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে বিপন্ন প্রজাতির একটি লজ্জ্বাবতি বানরের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে উপজেলার লাঠিটিলা সংরক্ষিত বন এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে।
লাঠিটিলা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মাসুক মিয়া বলেন, বুধবার সকালে বানরটি মৃত অবস্থায় বিদ্যুতের তাঁরে ঝুলে থাকতে দেখা যায়। তারপর দুপুর ১২ টার দিকে বানটি বিদ্যুতিক তাঁর থেকে নিচে মাটিতে পড়ে যায়। এর পর সন্ধ্যা সাতটার দিকে স্থানীয় লোকজন মিলে বানরটি মাটিচাপা দেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ডোমাবাড়ী এলাকায় জামাল মিয়ার বসতবাড়ির পাশে আরেকটি লজ্জাবতি বানর বিদ্যুতিক তাঁরেপৃষ্টে মারাগেছে। পরে স্থানীয় লোকজন বানটিকে মাটিচাপা দিয়েছে। বিগত বছরে আরো বেশ কয়েকটি চশমাপরা হনুমান এভাবে মারাগেছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নে অবস্থিত লাঠিটিলা সংরক্ষিত বন। এই বনের লালছড়া, রুপাছড়া, জড়িছড়া, দিলখুশা, কমলছড়া ও ডোমাবাড়ী এসব এলাকায় বনের ভেতর দিয়ে পল্লী বিদ্যুতের (পবিস) খোলা তার টানা হয়েছে। বনের ভেতর দিয়ে বিদ্যুতিক লাইন টানানো হলে বাধ্যতামূলক প্লাস্টিক কাভার মোড়ানো তাঁর লাগানোর কথা থাকলেও মানছে না পল্লিবিদ্যুৎ কতৃপক্ষ। বন্যপ্রাণী বিচরণকৃত এলাকা হওয়ায় প্রায় সময় বানর, হনুমান, বাদুড় সহ বিভিন্ন বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর প্রতিনিয়ত মৃত্যু ঘটে।
পরিবেশকর্মীরা অভিযোগ করেন, ঐ এলাকায় ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী মারা গেছে। এ নিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের পক্ষ থেকে চিটির মাধ্যমে সংরক্ষিত বন এলাকায় ইনসুলেটেড (প্রলেপযুক্ত) তারের ব্যবস্থার জন্য অনুরোধ করা হলে ২ কিলোমিটার লাইন কাভার করা হয়েছে। তবে বনের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু ঝুকিপূর্ণ স্থানে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এভাবে চলতে থাকলে শীঘ্রই লাঠিটিলা বনে বন্যপ্রাণী শূণ্য হয়ে পড়বে।
লজ্জাবতী বানর গবেষণা ও সংরক্ষণ প্রকল্পের মুখ্য গবেষক সাবিত হাসান বলেন, যে সকল কারণে বাংলাদেশে লজ্জাবতী বানর আজ হুমকির মুখে তাদের মধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যাওয়া অন্যতম। শুধু লজ্জাবতী বানরই নয় এভাবে বিদ্যুৎ তাড়িত হয়ে মারা পড়ছে অন্যান্য বানর প্রজাতিরাও। ২০২৩ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত লাঠিটিলায় চার বা ততোধিক বানরের বিদ্যুৎ তাড়িত হয়ে মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে যা লজ্জাবতী বানরের অস্তিত্বের জন্য খুবই ভীতিজনক। বনের ভিতর দিয়ে বিদ্যুতের তার নেওয়ার ব্যাপারে যে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে, সে ব্যাপারে উদাসীনতা করলে চলবে না। এছাড়াও বনের মধ্যে দিয়ে রাস্তা নেওয়ায় গাড়ি চাঁপা পড়ে মারা যাচ্ছে অনেক বন্যপ্রাণী, চলছে লজ্জাবতী বানরসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী পাচার, উজাড় হচ্ছে বন ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ ও বিশ্বের অন্যান্য জায়গার জীববৈচিত্র্য একদিন হারিয়ে যাবে, যা মানবজাতির অস্তিত্বকে সংকটে ফেলবে।
পল্লিবিদ্যুৎ সমিতি (পবিস) বড়লেখার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা রাজনগরের ডিজিএম গোলাম সারোয়ার মোর্শেদ বলেন, বিভিন্ন সংরক্ষিত বনে খোলা তারের পরিবর্তে সেগুলোতে ইতিমধ্যে কভার তার (ইনসুলেইটেড) লাগানোর উদ্দ্যেগ নেওয়া হয়েছে। এ এলাকায়ও কভার তারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সদর দপ্তর (মৌলভীবাজার) ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ বিষয়ে আমরা পল্লিবিদ্যুতকে কয়েকবার চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। তারা বিদ্যুতের খোলা ক্যাবলগুলো কাভার করার কথা। কেন করেনি আমরা খুঁজ নিয়ে আবার পল্লিবিদ্যুৎকে অবগত করবো। যেন দ্রুত ক্যাবলগুলো কাভার করা হয় যাহাতে আর কোনো বন্যপ্রাণীর মৃত্যু না হয়।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh